আমরা সময়ের কথা সময়ে বলি।

Advertisement

শঙ্কায় চামড়ার বাজার: পাচার রোধে তৎপর পুলিশ-বিজিবি

জাতীয় 17 September 2015 ৬৩৯

আমাদের কথা ডেস্ক :

দেশে চামড়ার চাহিদার ৪৮ শতাংশ আসে কোরবানির ঈদে জবাই করা পশু থেকে। এর সিংহভাগই সংরক্ষণ প্রক্রিয়ার পর কাঁচা চামড়া হিসেবে রফতানি হয়। আর কিছু অংশ পাদুকাসহ বিভিন্ন চামড়াজাত পণ্য তৈরিতে ব্যবহার হয়।

এসব তৈরি পণ্যও এখন রফতানির বড় সম্ভাবনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তবে বিশ্ববাজারে অর্থনৈতিক মন্দা, তেলের দাম কমে যাওয়া, চীনের শেয়ারবাজারের পতনসহ নানা কারণে বিশ্ববাজারে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের দাম কমে গেছে। আর তাতেই রফতানি কম হচ্ছে এসব পণ্যের। ফলে গত কোরবানির ঈদে যে চামড়া কিনেছেন ট্যানারি মালিকরা, তার অর্ধেকই অবিক্রীত রয়ে গেছে বলে তাদের দাবি। এ অবস্থায় এবারের ঈদের চামড়া নিয়ে অস্থিরতা ও পাচারের আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।

এদিকে কোরবানির ঈদ সামনে রেখে চামড়া পাচারের যে আশঙ্কা করা হচ্ছে তা রোধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে সরকার। ঢাকা মহানগর পুলিশ এবং বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এ উপলক্ষে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে মহানগরীর প্রতিটি পয়েন্টে চেকপোস্ট বসানোর পরিকল্পনার কথা ভোরের পাতাকে নিশ্চিত করেছেন ডিএমপির গণমাধ্যম শাখার উপকমিশনার মুনতাসিরুল ইসলাম।

তিনি  বলেন, ‘কোরবানির ঈদে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি চামড়া পাচাররোধে পুলিশ কাজ করবে। এছাড়া মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে হত্যাকাণ্ডের মতো মারাত্মক অপরাধের ঘটনাও ঘটে। যারা এ ধরনের ব্যবসা করবেন তাদের বিষয়েও সতর্ক রয়েছে পুলিশ। যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়ানোর জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে পুলিশ।’

সীমান্তবর্তী ৩২টি জেলার মধ্যে কমপক্ষে ১৭টি জেলার সীমান্ত দিয়ে কোরবানির ঈদের পর চামড়া পাচারের আশঙ্কা রয়েছে বলে বিজিবি সূত্র জানিয়েছে। ফলে সংস্থাটির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদের পক্ষ থেকে সীমান্তে যে কোনো মূল্যে চামড়া পাচার রোধ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এমনটাই নিশ্চিত করেছেন বিজিবির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।

এদিকে, বিশ্ববাজারে চামড়ার দাম কমে যাওয়া এবং নিজেদের ট্যানারিতে চামড়ার মজুদ থেকে যাওয়ায় এবার ট্যানারি মালিকরা চামড়ার ক্রয়মূল্য নির্ধারণ করে দিতে চাচ্ছেন না। তাদের অভিযোগ, দাম নির্ধারণ করে দিলেও মৌসুমি ব্যবসায়ীরা বেশি দামে চামড়া কিনে জটিলতার সৃষ্টি করেন। তবে ট্যানারি মালিকদের এ চিন্তার বিরোধিতা করছেন ব্যবসায়ীরা। তাদের আশঙ্কা এতে ঝামেলা আরও বাড়বে। তাছাড়া ব্যবসায়ীরা চামড়ার দাম না পেলে তা পাচার হয়ে যেতে পারে।

এ অবস্থায় ট্যানারি মালিকদের দুটি সংগঠন বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন ও বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন এবং ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশন বৈঠকে বসবে। এ বৈঠক থেকেই চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হবে কিনা, হলে তার হার কত হবে তা চূড়ান্ত হবে।

প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে চামড়ার চাহিদার ৪৮ শতাংশ সংগ্রহ করা হয় কোরবানির ঈদে। গত বছর কোরবানিতে ৭০-৭৫ লাখ পিস চামড়া সংগ্রহ হয়েছে বলে জানিয়েছেন ট্যানারি মালিকরা। ঢাকায় কাঁচা চামড়ার সবচেয়ে বড় আড়তটি লালবাগের পোস্তায়। এখানে প্রতি বর্গফুট ভালো মানের চামড়া বিক্রি হচ্ছে ৮০-৯০ টাকা, যেটা গত বছর কোরবানির পর ছিল ১৩০ টাকা। মাঝারি মানের চামড়ার দাম গত বছর যেখানে ছিল ৯০-১০০ টাকা, সেটা এখন দাঁড়িয়েছে ৬৫-৭০ টাকায়। আর নিম্নমানের চামড়ার দাম ৫০-৫৫ টাকা, যা গত বছর ছিল ৬০-৭০ টাকা। ভারত থেকে গরু আসা কমে যাওয়ায় পোস্তায় চামড়াও আসছে কম। স্বাভাবিক সময়ে ঢাকার আশপাশ থেকে প্রতিদিন কাঁচা চামড়া আসত প্রায় সাত হাজার। এখন আসছে তিন-চার হাজার।

ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রতি বছর রফতানির জন্য ২৪ কোটি বর্গফুট প্রস্তুত চামড়া উৎপাদিত হয়। আর অভ্যন্তরীণ ব্যবহারের জন্য উৎপাদিত হয় আরও চার-পাঁচ কোটি বর্গফুট চামড়া।

চামড়া বাজারের বর্তমান ও দাম নির্ধারণ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ লেদার, লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএলএলএফইএ) সভাপতি আবু তাহের ভোরের পাতাকে বলেন, ‘এবার চামড়া কেনার জন্য আমাদের প্রস্তুতি ভালো নয়। আমাদের ট্যানারিতে ৫০ শতাংশ চামড়া অবিক্রীত পড়ে আছে। পাশাপাশি সাভারে ট্যানারি স্থানান্তরের জন্য ব্যয় হচ্ছে মোটা অংকের টাকা। এ অবস্থায় সবাই এবার চামড়া কিনতে পারবে না। এজন্যই আমরা এবার দাম নির্ধারণের বিপক্ষে। যার যতটুকু দরকার সে ততটুকু দামদর করে কিনবে। এটা নির্ধারণ করে দিয়ে কোনো লাভ হয় না।’

কিন্তু দাম নির্ধারণ না করে দিলে অস্থিরতা তৈরি হতে পারে কিনা এ প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘অস্থিরতা তৈরি করে ফড়িয়া ও মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। আমাদের স্টকে ৫০ শতাংশ চামড়া পড়ে আছে এটা জানার পরেও যদি তারা বেশি দামে চামড়া কেনে তাহলে আমরা কী করতে পারি? তারা সতর্ক থাকলে কোনো সমস্যা হবে না।’ তবে চামড়া ক্রয় এবং ট্যানারি স্থানান্তরের জন্য ব্যাংকগুলোকে আরও ঋণ দেওয়ার অনুরোধ করেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘বিশ্ববাজারে এ শিল্পের বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। এটিকে কাজে লাগাতে হলে ব্যাংকগুলোকে পাশে দাঁড়াতে হবে।’

ট্যানারি মালিকদের দাম নির্ধারণ না করার এ মনোভাবের বিরোধিতা করে আড়তদারদের সংগঠন বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক টিপু সুলতান বলেন, ‘তিনটি সংগঠনের সমন্বয় সভা রয়েছে। সেখানেই দাম নির্ধারণের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। তবে আমাদের দাবি থাকবে যাতে একটা ‘দর’ নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। এতে ব্যবসায়ীরা নিশ্চিন্ত থাকতে পারবেন। তা না হলে চামড়া পাচারের আশঙ্কা করছি আমরা। গত বছরও ব্যবসায়ীরা চামড়ার দাম নির্ধারণ করা থেকে বিরত থাকার ঘোষণা দেয়ার পরদিনই শিল্প মন্ত্রণালয়ে বৈঠক শেষে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু দাম নির্ধারণ করার বিষয়টি ব্যবসায়ীদের জানান। এরপর দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। গত বছর প্রতি বর্গফুট ভালো চামড়া ১০০ টাকা থেকে শুরু করে ১১০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।’