কাহিনীর শুরু এই ভাবে, এক ব্রাহ্মণ সন্যাসী একটি পাথর বিক্রি করতে যায় জোহুরীর কাছে। জোহুরী পাথরটি দেখেন। অবাক হয়ে যান। সন্যাসীকে জিজ্ঞাসা করেন এই মহামূল্যবান পাথর কোথায় পেলেন।
সন্যাসী বলেন ওনার গুরুজী দিয়েছেন ওনাকে। জোহুরী বলেন এ এক অমূল্য পাথর। এর মূল্য ওতো দিতেই পারবেন না। আচ্ছা আচ্ছা শহরের জোহুরীরাও দিতে পারবে না। ক্ষুব্ধ সন্যাসী ব্যর্থ মনোরথ হয়ে ফিরে আসেন। গুরুদেবকে পাথরটি ফিরত দেন। জিজ্ঞাসা করেন --- " এই পাথরটি মহামূল্যবান জেনেও আপনি আমাকে কেন দিলেন? "
গুরুদেব মুচকি হাসলেন। বললেন এই পাথরের মত অনেক জিনিস আছে আমরা মূল্য জানি না। অথচ সেই জিনিসগুলি আমাদের চেনা জানা পরিশরের মধ্যে। এই রকমই একটা জিনিস "ওম"। কি আমরা এর মানে জানি? মূল্য জানি এর? অতি অবশ্যই হিন্দুদের জিজ্ঞাসা করছি। আগে দেখুন।
ঋষি প্রজাপতি সর্বজ্ঞানে গুণান্বিত বলে প্রতিষ্ঠিত। যাঁর কাছে সমস্ত প্রশ্নের উত্তর আছে। একদিন দেবতা কার্ত্তিক ঋষি প্রজাপতির আসেন। "ওঁম" শব্দের অর্থ জানতে চান। হতচকিত ঋষিবর। কোন উত্তর ছিল না। ক্রোধান্বিত হন দেব সেনাপতি। বন্দী করে নেন ঋষিবরকে।
শুরু হল চরম অঘটন। স্বর্গ - মর্ত্য - পাতাল রসাতলে জাবার যোগার। ফুল খেলা বন্ধ করে দিল। গান আর গান না পাখী। ফল দেয় না গাছ। সৃষ্টি বিলুপ্ত হওয়ার জোগাড়। সমস্ত দেব দেবী সংকট মোচনকারী শিবের কাছে প্রার্থনা করলেন। অবশেষে আশুতোষ শিব অবতীর্ণ হলেন ময়দানে। পুত্র কার্ত্তিককে জিজ্ঞাসা করেন ঋষিবরকে কেন বন্দী করেছে। দেব সেনাপতি খুব তাৎপর্যপূর্ণ উত্তর দিলেন। -- "যাঁর কাছে সমস্ত প্রশ্নের উত্তর থাকার কথা তিনিই "ওঁম" শব্দের মানে জানেন না। এবার পুত্র সরাসরি পিতাকেই জিজ্ঞাসা করেন --- "কি আপনি এর মানে জানেন"?
মুচকি হাসলেন সর্ব ভুতেষু । বললেন আমি তোমার কাছে জানতে চাই পুত্র। দেব সেনাপতিও হারবার পাত্র নয়। " আমি বলতে পারি, কিন্তু আপনাকে আমার শিষ্যত্ব নিতে হবে "। হাসলেন দেবাদিদেব। বললেন "মানলাম তোমাকে গুরু"।
দারুণ ইন্টারেস্টিং না। পুত্র গুরু, আর পিতা হয়েছেন পরম শিষ্য। "ওঁম" শব্দের মধ্যে তিনটি অক্ষর আছে।
'অ' - 'ও' - 'ম'।
অ+ও = ও
ও+ম = ওম।
যে কোন ব্যক্তি যে কোন ভাষারই হোক না মুখ খুললেই 'অ' বেড়িয়ে আসে। 'অ' এর সঙ্গে 'ও' জুড়ে 'ও'। 'ও' এর সাথে 'ম' জুড়লে "ওঁম" পাই। মুখ খুললেই 'অ' এবং বন্ধ করলে 'ম'। আর মাঝে 'ও'। এইজন্যই সব ভাষার মধ্যে "ওঁম" বিচরণ করছে। "ওঁম" ঈশ্বরের প্রতীক। মান্ডূ উপনিষদ হিসাবে
অ' -- অভিব্যক্তি,
'ও' -- স্বপ্নাবস্হার প্রকাশ,
'ম' -- প্রাপ্তি।
মানূ "ওম" মানে সমস্ত গুণের প্রকাশ। ঈশ্বরের অদ্ভুত রূপ। "ওঁম" মানে সত্যম - শিবম - সুন্দরম। "ওঁম" মানে ঈশ্বরের আরখধোনা।
এবার বলুন যে কোন মন্ত্রের আগে "ওঁম" কেন প্রয়োগ হয়? মানে --- "ওঁম নমঃ শিবায়", " ওঁমবাসুদেবায়", "ওঁম নমঃ নারায়ন", "ওঁম ভগবতে" ইত্যাদি।
কোন কঠিন কাজ শুরু করার আগে "ওঁম" দিয়ে শুরু করা হয়। দৈনিক জীবনে কথোপকথনে "ওঁম" ব্যবহার করা হয়। যেমন "হরি ওঁম"।
এবার বলুন ঋষি প্রজাপতির কি হল? কি হবে? সদা শিব যেখানে অবতীর্ণ হয়েছেন সমাধান তো অবশ্যম্ভাবী। প্রজাপতি মুক্ত হলেন। ভগবান ও মনুষ্যকে "ওঁম" শব্দের অর্থ জ্ঞাত করার জন্যই মহাদেবের এই লীলা। মুচকে হাসলেন পালন কর্তা বিষ্ণুও।
"ওঁম"
---- " গণেশায় নমঃ"
----- "নমঃ শিবায়ঃ "
----- " নমঃ নারায়ন "
---- " নমঃ বাসুদেবায়"
---- " দেবী দুর্গায় নমঃ"
---- " কালিকায় নমঃ"
---- "কার্তিকেয় নমঃ"।
" ওঁম শান্তি, ওম শান্তি, ওঁম শান্তি। "
সূত্র : চতুরঙ্গ