টিডিএন বাংলা ডেস্ক, মালদা : একদিকে যখন রাজনৈতিক দল থেকে সর্বস্তরের মানুষ সাম্প্রদায়িক সম্প্রিতি বজায় রাখার বার্তা দিচ্ছেন, ঠিক তখনই জাতি বৈষম্যের অভিযোগ উঠল মালদায়। স্কুলের গ্রুপ ডি মহিলা কর্মী মুসলিম হওয়ায় তার হাতের জল পান করছেন না তার সহকর্মীরাই। এমনকি তাকে স্কুলের মধ্যে থাকা জলের ফিল্টার থেকে জল পানও করতে দেননা তার সহকর্মীরা বলে অভিযোগ। স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা এবং আরও কয়েকজন শিক্ষিকা আরেক ধাব এগিয়ে স্কুল ছাড়ার নিধানও দিয়ে ফেলেছেন ওই গ্রুপ ডি মহিলা কর্মীকে বলে অভিযোগ। গ্রুপ ডি ওই মহিলা কর্মী এখন বিচারের আশায় দ্বারস্থ হয়েছেন প্রশাসনের দরবারে
মালদা জেলার পুরাতন মালদা থানার মেহেরপুরের বাসিন্দা পালানু শেখ স্থানীয় একটি স্কুলে গ্রুপ ডি পদে কর্মরত ছিলেন। প্রায় ১২ বছর আগে পালানু সেখের মৃত্যু হওয়ায় তার স্ত্রী তাজেরা বেবা সেই চাকরি পান। ২০১৫ সালের শেষের দিকে মালদা শহরের শিবানী একাডেমী হাই স্কুলে সেই চাকরির নিয়োগ পত্র পেয়ে তাজেরা বেবা কাজে যোগ দেন। তার তিন ছেলে ভিন রাজ্যে শ্রমিকের কাজে চলে যাওয়ায় নিজের বাড়ি মেহেরপুর থেকে তিনি চলে আসেন মালদা শহরের মিরচক এলাকার একটি ভাড়া বাড়িতে। প্রথম দিকে সব ঠিক থাকলেও মাস ছয়েক পেরোনোর পর মুসলিম মহিলা বলে অত্যাচার শুরু হয় তাজেরা বেবার উপর বলে অভিযোগ।
তাজেরা বিবি জানান, স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা সুতপা দাস তার হাতের জল খাননা। এমনকি স্কুলের মধ্যে থাকা জলের ফিল্টার থেকে জল পানও করতে দেওয়া হয় না তাঁকে। তাজেরা বেবার আরও অভিযোগ, স্কুলের আরও বেশ কয়েকজন শিক্ষক শিক্ষিকা একই আচরণ করে, এমকি স্কুল ছেড়ে চলে যাওয়ার কথাও বলতে থাকে তাঁকে। স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা সুতপা দাস কার্যত একঘরে করে রেখেছে বলেও অভিযোগ করেন তাজেরা বেবা।
স্কুলের মধ্যে অমানবিক অত্যাচারের শিকার হওয়ায় ভাড়া বাড়ির মালিক সহ মিরচকের বাসিন্দারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। স্থানীয় মিরচকের বাসিন্দা রাজা চৌধুরী জানান,”ভারতবর্ষে প্রত্যেক জাতির সমান অধিকার আছে। তাহলে একজন অসহায় মুসলিম মহিলার উপর অত্যাচার কেন ? রাজা বাবু জানান হিন্দু-মুসলিম একই সাথে একই পাড়ায় আমরা থাকি। এই ধরনের অত্যাচার আমরা বরদাস্ত করব না। আমরা এর প্রতিবাদ জানিয়ে বিচার চাইব”।
ভাড়া বাড়ির মালিকের স্ত্রী রুক্সার বেগম জানান, “বেশ কিছু দিন ধরে দেখছি স্কুল থেকে আসার পর তাজেরা মাসি দুঃখ প্রকাশ করেন। মুসলিম বলে তার উপর অত্যাচার হয়। তিনি প্রতিদিনই আমাদের কাছে এসে বলেন। রুক্সার বেগম আরও বলেন সরকার যখন চাকরি দিয়েছেন তখন কেন তাকে জাতি বৈষম্যের শিকার হতে হবে। সব ধর্মের সমান অধিকার আছে আমাদের ভারতবর্ষে। আমরা এর প্রতিবাদ জানাচ্ছি।”
অন্য দিকে যার বিরুদ্ধে অভিযোগ সেই প্রধান শিক্ষিকা সুতপা দাস জাতি বৈষম্যের অভিযোগকে অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, “গ্রুপ ডি পদে চাকরি পেলেও তাজেরা লিখতে পড়তে কিছুই জানেনা। এমনকি স্কুলের খাতাতে সই করতেও জানে না। সুতপা সাহার অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরে কাজে ফাঁকি দিয়ে আসছিল তাজেরা। স্কুলে আশায় অনিয়ম, আসলেও কাজ না করে ঘুমিয়ে থাকা এমন কি স্কুলের মেয়েদের দিয়ে নিজের কাজ করান।”
শিবানী একাডেমী হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা সুতপা দাস আরও জানান, তাজেরা বেবা চাকুরি পাওয়ার ক্ষেত্রে যে সার্টিফিকেট প্রদান করেছে সেই সব সার্টিফিকেট জাল। আর এই সব অভিযোগ লিখিত ভাবে জানানোর পর থেকে তাজেরা জাতি বৈষম্যের মিথ্যে অভিযোগ করছে বলে জানান সুতপা দাস।
এই বিষয়ে স্কুল পরিচালন কমিটির সভাপতি তথা জেলা যুব তৃণমূল সভাপতি অম্লান ভাদুরি জানান, “আমি একটি অভিযোগ পেয়েছি। তবে কি কারণে এই জাতি বৈষম্যের অভিযোগ করছেন তা খতিয়ে দেখা হবে। তিনি আরও জানান যদি এই ঘটনায় কেউ দোষী সাব্যস্ত হয় তাহলে স্কুলের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জাতি বৈষম্যের অভিযোগ নিয়ে জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক তাপস কুমার বিশ্বাস জানান, “এই অভিযোগ আমি পেয়েছি। এই অভিযোগ খুবই গুরুতর অভিযোগ। আমরা স্কুল খোলার পরই দুই পক্ষকে নিয়ে বসব এবং যদি এই অভিযোগের সত্যতা থাকে তাহলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” (তথ্যসূত্র – ডিডি নিউজ ২৪*৭)