বর্তমানে দেশের সব তফসিলি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণখেলাপি ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২ লাখ ২ হাজার ৬২৩। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোর (সিআইবি) ডাটাবেজে রক্ষিত চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ঋণখেলাপির এ তথ্য সংসদকে অবহিত করেন। এই দুই লাখের বেশি মানুষ ঋণ নিয়ে আর ফেরত দেয়নি।
চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআইবি তথ্য অনুযায়ী, খেলাপি গ্রাহকদের বড় অংশই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর। রাষ্ট্রায়ত্ত চার বাণিজ্যিক ব্যাংক সোনালী, অগ্রণী, জনতা ও রূপালীর খেলাপি গ্রাহকের সংখ্যা ২১ হাজার ৬৪২। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অগ্রণী ব্যাংকে ৮ হাজার ৬০০ জন। এছাড়া সোনালী ব্যাংকে খেলাপি গ্রাহকের সংখ্যা ৬ হাজার ৯৬৪। ১০ হাজার ৯১০ জন খেলাপি গ্রাহক রয়েছেন রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকে। আর বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের খেলাপি গ্রাহকের সংখ্যা ৫ হাজার ৪৭৭।
খেলাপি গ্রাহকদের চিহ্নিতকরণ ও তাদের আইনের আওতায় আনতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলেও সংসদ সদস্যকে জানান অর্থমন্ত্রী। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের ৩ হাজার ১৫২ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ আদায় হয়েছে। এর মধ্যে সোনালী ব্যাংকের ১০ হাজার ৬২৯ কোটি টাকা খেলাপি ঋণের বিপরীতে আদায় হয়েছে ৬৫৪ কোটি, জনতা ব্যাংকের ৬ হাজার ৫১০ কোটির বিপরীতে ২৫৪ কোটি, অগ্রণী ব্যাংকের ৬ হাজার ৮৬ কোটির বিপরীতে ৪৮৩ কোটি, রূপালী ব্যাংকের ৪ হাজার ২৬৪ কোটির বিপরীতে ৩২৮ কোটি ও বেসিক ব্যাংকের ৭ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা খেলাপি ঋণের বিপরীতে আদায় হয়েছে ১৫০ কোটি টাকা।
রাষ্ট্রায়ত্ত অন্য ব্যাংকগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেডের (বিডিবিএল) ৮৫৪ কোটি টাকা খেলাপি ঋণের বিপরীতে আদায় হয়েছে ১৩০ কোটি, কৃষি ব্যাংকের ৪ হাজার ৬৭৯ কোটি টাকার বিপরীতে ৯৩০ কোটি ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের ১ হাজার ৫ কোটি টাকা খেলাপি ঋণের বিপরীতে ২২৩ কোটি টাকা আদায় হয়েছে বলে জানান অর্থমন্ত্রী।
তিনি বলেন, খেলাপি ঋণ আদায়ের লক্ষ্যে অর্থ ঋণ আদালত আইন ২০০৩ ও দেউলিয়া আইন ১৯৯৭-এর আওতায় খেলাপি গ্রাহকদের বিরুদ্ধে মামলার মাধ্যমে খেলাপি ঋণ আদায় করা হচ্ছে। শ্রেণীকৃত ঋণ আদায়ের হার যেন কোনোভাবেই নিম্নগামী না হয়, সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি রাখা হচ্ছে।
সরকারদলীয় সংসদ সদস্য মো. আবদুল্লাহর এক প্রশ্নের উত্তরে আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে চুরি যাওয়া ১০ কোটি ১০ লাখ ডলারের মধ্যে শ্রীলংকায় পাঠানো ২ কোটি ডলার নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে জমা হয়েছে। ফিলিপাইনে পাঠানো বাকি ৮ কোটি ১০ লাখ ডলারের মধ্যে এখন পর্যন্ত ১ কোটি ৪৬ লাখ ৩০ হাজার ডলার নিউইয়র্ক ফেডে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে জমা করা হয়েছে। ফিলিপাইনে পাঠানো অবশিষ্ট ৬ কোটি ৬৩ লাখ ৭০ হাজার ডলার পাওয়া যায়নি। চুরির ঘটনায় এরই মধ্যে ফিলিপাইনের বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। চুরিকৃত অবশিষ্ট অর্থ উদ্ধারে বর্তমানে ফিলিপাইনে আইনি উদ্যোগ চলমান রয়েছে। অর্থ উদ্ধারে সব সংস্থা একযোগে কাজ করছে।