আমরা সময়ের কথা সময়ে বলি।

Advertisement

বিসিকের চেয়ারম্যান অপসারন নেপথ্যে উন্নয়ন প্রকল্প ও জনবল নিয়োগে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ

সারাদেশ 17 February 2019 ১০৭১

রোস্তম মল্লিক:-

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) দেশের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণে নিয়োজিত সরকারী খাতের মূখ্য প্রতিষ্ঠান। ১৯৫৭ সালে সংসদীয় আইনের মাধ্যমে বিসিকের জন্ম। বিসিক এর প্রত্য এবং পরো উদ্যোগে দেশে প্রচুর শিল্পোদ্যোক্তা সৃষ্টি এবং শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপিত হয়েছে। বিশ্বায়ন এবং মুক্তবাজার অর্থনীতির প্রভাব এই সেক্টরে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পজাত পণ্য বাজারজাতকরণে প্রধান বাধা হিসেবে দেখা দেয়। বিসিক এই সমস্ত বিদ্যমান ও নতুন শিল্পদ্যোগকে সম্প্রসারন ও উন্নয়ন করা এবং প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার েেত্র প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধা প্রদান করে। মূল উদ্দেশ্য: উৎপাদন বৃদ্ধি, (ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প খাতে স্থাপিত উৎপাদন মতার সদ্ধব্যবহার ও নতুন উৎপাদন মতা সৃষ্টি)কর্মসংস্থান সৃষ্টি,দারিদ্র্য বিমোচন,ভারসাম্যপূর্ণ আঞ্চলিক উন্নয়ন,অর্থ ও মানব সম্পদের সর্ব্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করণ। দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন সেবা সমূহ: শিল্পোদ্যোক্তা উন্নয়ন, উন্নত রাস্তাঘাট; পানি , বিদ্যুৎ ,গ্যাস ইত্যাদি সুবিধা সম্বলিত শিল্প নগর,শিল্প পার্ক স্থাপনের মাধ্যমে উন্নত প্লট বরাদ্দ দান ,নিজস্ব কর্মসূচীর মাধ্যমে ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় উদ্যোক্তাদেরকে ঋণ সহায়তা প্রদান , প্রকল্প প্রোফাইল প্রণয়ন ও প্রকল্প মূল্যায়ন শিল্প ইউনিট স্থাপন, পণ্যের উৎপাদন-মানোন্নয়ন ইত্যাদি বিষয়ে কারিগরি ও অন্যান্য সহায়তা প্রদান,উন্নত মানের নকশা উদ্ভাবন ও বিতরণ,লাগসই প্রযুক্তি আহরণ ও স্থানান্তর / উদ্ভাবনুদ্র ও কুটির শিল্পে বিনিয়োগ, উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের প্রযুক্তিগত ও অন্যান্য তথ্য সংগ্রহ, সংকলন ও বিতরন করা ,শিল্প সম্প্রসারণ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় গবেষনা, সমীা জরীপ ইত্যাদি পরিচালনাশিল্প স্থাপনে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ-পূর্ব ও বিনিয়োগ-উত্তর পরামর্শ প্রদান ,নিয়ন্ত্রণমূলক কার্যক্রম ,ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প নিবন্ধনকরণকর অবকাশ, কর, শুল্ক ইত্যাদি মওকুফ বিষয়ে সুপারিশ প্রদান,শিল্পের কাঁচামাল ও মোড়ক সামগ্রী আমদানীর ক্ষেত্রে প্রাধিকার নির্ধারণে সুপারিশ প্রদান ও অন্যান্য। এ সব কর্মসুচী বাস্তবায়নে সরকার প্রতি বছর শত শত কোটি টাকা বাজেট বরাদ্দ করে আসছে। প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনার জন্য অতিরিক্ত সচিব পদ মর্যাদার একজন কর্মকর্তাকে চেয়ারম্যান নিযোগ দান করা হয়। এ ছাড়া ৮ সদস্যের একটি পরিচালনা বোর্ড রয়েছে । ৪ টি আঞ্চলিক কার্যালয় ৬৪ টি শিসক ও ৭৪ টি শিল্প নগরী রয়েছে মূল অবকাঠামোতে। একাধিক সুত্রে জানা যায়, শিল্প মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন এই প্রতিষ্ঠানটিতে ২০১৭ সালে সাবেক শিল্প মন্ত্রীর একান্ত ইচ্ছায় চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ পান অতিরিক্ত সচিব মুশতাক হাসান মুহা: ইফতিখার। তিনি এই প্রতিষ্ঠানে যোগদান করেই তার বাল্যবন্ধু উপ-মহাব্যবস্থাপক নাযিমূল আবেদীন, পরিচালক উন্নয়ন ও সম্প্রসারন জীবন কুমার চৌধুরী, সচিব এ কে এম মাসুদুজ্জামান ( চোরম্যানের ভাগ্নি জামাই),পরিচালক বিতরণ ও নকশা মাহবুবুর রহমান ও সাবেক শিল্প মন্ত্রীর কয়েকজন কাছের লোক নিয়ে একটি সিন্ডিকেট গঠন করেন। পরবর্তীতে এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ,বদলী বাণিজ্য,প্লট বরাদ্দ ও শিল্প নগরী স্থাপন প্রকল্পের যাবতীয় উন্নয়ন কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে প্রায় শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। এ সময় চেয়ারম্যান মুশতাক হাসান মুহা: ইফতিখার সিন্ডিকেটের নানামুখি অনিয়ম-দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতায় অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে বিসিকে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। প্রায় ২ বছর বিসিকে অনিয়ম -দুর্নীতির রাজত্ব করে চেয়ারম্যান মুশতাক হাসান মুহা: ইফতিখার টাকার কুমির বনে গেছেন। শোনা যায় সাবেক শিল্প মন্ত্রীর আশীর্বাদ থাকায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেও কোন লাভ হয়নি। তার একজন কাছের লোক সুত্রে জানা যায়, তিনি প্রায় দিনই সন্ধ্যারপর মন্ত্রীর বাসায় নানা প্রকার উপহার -উপঢৌকন নিয়ে হাজির হতেন । এ ছাড়া প্রতিটি প্রকল্প থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ কমিশন প্রদান করতেন। ৬ আগষ্ট ২০১৮ বিসিকের রাজস্বখাতে ৪৪ টি ক্যাটাগরিতে ২০৯ টি পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। সারা দেশ থেকে কয়েক ল দরখাস্ত জমাপড়ে পদগুলোর জন্য। সেসব দরখাস্ত যাচাই বাছাই শেষে ৯ নভেম্বর ২০১৮ লিখিত পরীার জন্য আহবান জানান হয়। লিখিত পরীা গ্রহনের পরপরই শুরু হয় নিয়োগ বাণিজ্যের প্রক্রিয়া। এবারও চেয়ারম্যান মুশতাক হাসান মুহা: ইফতিখার এর সিন্ডিকেট সদস্য সচিব এ কে এম মাসুদুজ্জামান, উপ-মহাব্যবস্থাপক নাযিমূল আবেদীন, পরিচালক উন্নয়ন ও সম্প্রসারন জীবন কুমার চৌধুরী, পরিচালক বিতরণ ও নকশা মাহবুবুর রহমানগন নিয়োগ কার্যক্রম নিজেদের হাতে নিয়ে নিয়োগ প্যানেল তৈরীর কাজে লিপ্ত হন। এ পর্যায়ে তারা মহাব্যবস্থাপক,উপ মহাব্যবস্থাপক পদের জন্য ২০/৩০ ল টাকা। সহকারী মহাব্যবস্থাপক পদের জন্য ১৫ ল টাকা , নির্বাহী প্রকৌশলী পদের জন্য ৩০ লক্ষ টাকা , প্রধান নকশাবিদ পদের জন্য ৩০ লক্ষ টাকা,উপ নিয়ন্ত্রক পদের জন্য ১৫ লক্ষ টাকা,উপ প্রধান প্রকৌশলী পদের জন্য ২৫ লক্ষ টাকা, প্রধান অনুষদ সদস্যের জন্য ১০ লক্ষ টাকা, ড্রাফসম্যান ও অন্যান্য পদের জন্য ১০ লক্ষ টাকা হারে রেট নির্দ্ধারণ করেন। যে সব প্রার্থী ওই সিন্ডিকেটের চাহিদামত অর্থ প্রদান করেন তাদের একটা তালিকা তৈরী করে চেয়ারম্যান মুশতাক হাসান মুহা: ইফতিখার’র হাতে তুলে দেওয়া হয়। একই সাথে প্রার্থী প্রতি আদায়ক্রত অর্থের সিংহভাগই তিনি গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে মৌখিক পরীার জন্য ৩১৬ জন প্রার্থীকে পত্র পাঠানো হয় । মৌখিক পরীার তারিখ নির্দ্ধারণ করা হয় ১১ থেকে ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯। মজার ব্যাপার হলো বিসিক বোর্ড সভার ১০৫/৪৬/২০১৮ মোতাবেক প্রতিটি পদের বিপরীতে ৭ জন করে প্রার্থী রাখার সিদ্ধান্ত থাকলেও সম্পূর্ণ অসৎ উদ্দেশ্যে সেটি উপেক্ষা করে একক পদে এককরকম আনুপাতিক প্রার্থী রাখা হয়েছে। যেমন-৯ম গ্রেডের ১৩০ পদের বিপরীতে রাখা হয়েছে ৯১০ জনের স্থলে ৯৩৫ জনকে। মহা ব্যবস্থাপক এর ২টি পদে রাখা হয়েছে মাত্র ২ জনকে। প্রধান নকশাবিদের ১টি পদের বিপরীতে রাখা হয়েছে মাত্র ১ জনকে। সহকারী মহাব্যবস্থাপকের ৬ টি পদের বিপরীতে ২৬ জনকে রাখা হয়েছে।