আমরা সময়ের কথা সময়ে বলি।

Advertisement

নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের ইনল্যান্ড মাষ্টার-ড্রাইভারশীপ পরীক্ষায় অনিয়ম-১

সারাদেশ 5 March 2019 ৯২৬
প্যাকেজ চুক্তিতে কোচিং দিচ্ছেন- বিআইডব্লিউটিএ’র প্রকৌশলী মামুন! কোনভাবেই বন্ধ করা যাচ্ছে না নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের ইনল্যান্ড মাষ্টার ড্রাইভারশীপ পরীক্ষার অনিয়ম-দুর্নীতি। নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের কঠোর নির্দেশনা ও মনিটরিং থাকারপরও নিত্য নতুন কৌশলে কতিপয় কর্মকর্তা ও কর্মচারী অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে হাতিয়ে নিচ্ছেন লক্ষ-লক্ষ টাকা। তাদের অতি লোভের কারণে অযোগ্য প্রার্থীরা অর্থের বিনিময়ে পাশ করে নৌযান চালাতে গিয়ে ঘনঘন নৌ দুর্ঘটনা ঘটাচ্ছে। এতেকরে অকালে প্রাণ হারাচ্ছেন অসংখ্য মানুষ । গত বছর ঘুষের টাকাসহ দুদক টিমের হাতে গ্রেফতার হন প্রধান প্রকৌশলী নাজমূল হক। তিনি এখন বরখাস্তবস্থায় কারাগারে রয়েছেন। কিন্তু বরখাস্ত হলেও তার সহযোগীরা এখনো নৌ পরিবহন অধিদপ্তরে কর্মরত রয়েছেন। তারা এখন সিন্ডিকেট করে বিশেষ কৌশলে দুর্নীতি চালিয়ে যাচ্ছেন। মুক্তখবরের অনুসন্ধানে জানাগেছে, জেলে আটক থাকা সাবেক প্রধান প্রকৌশলী এস এম নাজমূল হকের একান্ত বন্ধুখ্যাত বিআইডব্লিউটিএ’র এমএমই শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী আলমগীর মামুন অতীতের মত এখনো নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের ইনল্যান্ড মাষ্টার ও ড্রাইভারশীপ পরীক্ষায় অনিয়ম-দুর্নীতির নেপথ্য কারিগরের ভূমিকা পালন করছেন। তিনি নাজমূল আমলের মতই প্যাকেজ চুক্তিতে ইনল্যান্ড মাষ্টার ও ড্রাইভারশীপ পরীক্ষায় পাশ বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন। এ বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে জানাগেছে, এমএমই শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী আলমগীর মামুন বিআইডব্লিউটিএ ভবনের তৃতীয় তলায় অফিস করার সুবাদে নৌ-খাতের মালিক ও শ্রমিকদের সাথে গভীর যোগাযোগ গড়ে ওঠে। এ সময় সাবেক প্রধান প্রকৌশলী ( বরখাস্ত) এস এম নাজমূল হকের পরামর্শ মতই ইনল্যান্ড মাষ্টার ও ড্রাইভারশীপ পরীক্ষা থেকে বছরে মোটা অংকের টাকা উপার্জন করার লক্ষ্যে একটি বিকল্প পথ বের করেন। যেহেতু সাবেক প্রধান প্রকৌশলী নাজমূল হকই পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তৈরী করতেন এবং ভাইভা পরীক্ষা নিতেন সেহেতু এই ‘পাশ’ বাণিজ্য করা খুব সহজ হয়ে যায়। এ পর্যায়ে নাজমূল যে প্রশ্নপত্র তৈরী করতেন তার একটি ফটোকপি বিআইডব্লুটিএ’র এমএমই শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী আলমগীর মামুনের কাছে পৌছে দিতেন। আর সেই প্রশ্নপত্রের আলোকে আলমগীর মামুন তার সংগৃহীত প্রতি পরীক্ষায় ১৫/২০ জন পরীক্ষার্থীদের ফকিরাপুল কাঁচাবাজার ও মতিঝিলের বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে ২/৩ দিন রেখে কোচিং করাতেন। ১ ঘন্টা কোচিং এর জন্য ফি নিতেন ৫ হাজার টাকা। অন্য দিকে কোচিং নিতে আসা প্রার্থীদের সাথে ( লিখিত ও মৌখিক) পরীক্ষায় পাশ করিয়ে দেবার প্যাকেজ চুক্তি করতেন। প্রতিটি প্যাকেজ মূল্য – প্রথম শ্রেনীর ড্রাইভার ও মাষ্টার ১ লক্ষ টাকা। ২য় শ্রেনীর মাষ্টার -ড্রাইভার ৮০ হাজার টাকা। তৃতীয় শ্রেণীর মাষ্টার -ড্রাইভার ৬০ হাজার টাকা। এভাবে প্যাকেজ চুক্তির মাধ্যমে অযোগ্য প্রার্থীদের লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় বেশী নম্বর দিয়ে পাশ করিয়ে দিতেন সাবেক প্রধান প্রকৌশলী নাজমূল হক। আর এ পথে তিনি প্রতি মাসে উপার্জন করতেন কমপক্ষে কোটি টাকা। এ টাকার ৪০% পেতেন এমএমই শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী আলমগীর মামুন আর বাকি ৬০% পেতেন সাবেক প্রকৌশলী নাজমূল হক। ঘুষের ৫ লক্ষ টাকাসহ প্রধান প্রকৌশলী নাজমূল হক গ্রেফতার হওয়ার পর এই পাশ বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যায়। কিছুদিন চুপচাপ থেকে গত বছরের শেষভাগে এসে আবার পাশ বাণিজ্য শুরু করা হয়। সেই একই ধারায় এখন চলছে ইনল্যান্ড মাষ্টার ও ড্রাইভারশীপ পরীক্ষার দুর্নীতি। আর নেপথ্য কারিগর হিসাবে কলকাঠি নাড়ছেন বিআইডব্লিউটিএ’র এমএমই শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী আলমগীর মামুন। শোনা যায় এই প্যাকেজ চুক্তির প্রার্থী তিনি ২/৩ জন দালালের মাধ্যমে সংগ্রহ করেন। এবং অফিসে বসেই প্যাকেজ চুক্তির টাকা নেন। যেহেতু তিনি বিআইডব্লিউটিএ’র প্রকৌশলী সেহেতু কেউ তাকে সন্দেহ করবে না এমন বিশ্বাস থেকেই তিনি দীর্ঘ ৩/৪ বছরধরে এই অনিয়ম-দুর্নীতির সাথে যুক্ত রয়েছেন। এই অবৈধ বাণিজ্যের যোগাযোগ নেটওয়ার্ক পরিচালনার জন্য তিনি ৪/৫ টি মোবাইল সিম ব্যবহার করেন। সেগুলোর মধ্যে ০১৬৩১-১৬১১৬১,০১৯৮৬-৩০৯৮১৮,০১৭১৬-৪৭৬৭৬৮ অন্যতম। এ সিমগুলোর কললিষ্ট পরীক্ষা করলেই তার থলের বিড়াল বেরিয়ে পড়বে। সুতমতে নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের ইনল্যান্ড মাষ্টার ড্রাইভারশীপ পরীক্ষার কোচিং ও প্যাকেজ বাণিজ্য করে প্রকৌশলী আলমগীর মামুন কোটিপতি বনেগেছেন। ঢাকায় ফ্য¬াট ক্রয় ছাড়াও কিনেছেন প্লট ও নিউ মডেলের গাড়ী । দেশের বাড়ী চাঁদপুর এলাকায় কিনেছেন কমপক্ষে ২ কোটি টাকার জমি। এয়ারপোর্ট এলাকায়ও জমি কিনেছেন কয়েককোটি টাকার। ২০০৫ সাল থেকে তিনি বিআইডব্লিউটিএতে অবস্থান করছেন। দীর্ঘ ১৪ বছর একই ষ্টেশনে চাকুরী করলেও অদৃশ্য কারণে তার বদলী হয়না। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য নির্বাহী প্রকৌশলী আলমগীর মামুনের সেল ফোনে কল দিলে তিনি বলেন, আপনি অফিসে আসুন তারপর কথা বলব।