েকাল পরশু আমার পথে পথেই কাটলো।গুয়ালিওরে নারীদিবসের অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার আমন্ত্রণ পেয়েছিলাম। যাবো, কিন্ত শর্ত দিয়েছিলাম, আর সব লিট ফেস্ট বা উৎসব অনুষ্ঠানে যে শর্ত দিই, সেটিই, আমার নামখানা যেন অনুষ্ঠানের বক্তা হিসেবে কোথাও প্রচার না করা হয়, আমি মঞ্চে উঠবো সারপ্রাইজ গেস্ট হিসেবে। ওরা রাজি। গুয়ালিওরে পৌঁছে দেখি, সারা শহরে বিজ্ঞাপন সাঁটা। বড় বড় হোর্ডিংএ আমার ছবি, নাম, কখন কোথায় আমার বক্তৃতা, সব উল্লেখ করা। হোটেলে পৌঁছে দেখি লোকেরা অটোগ্রাফ নিতে এসেছে। একজনকে জিজ্ঞেস করলাম, কী করে জানেন আমি এখানে আছি? লোকটি বলল, সব পত্রিকায় ছাপা হয়েছে খবর। এরপরই শহর থেকে বেরিয়ে গেলাম। এত দায়িত্বহীন লোক যদি আয়োজক হন, আর অবলীলায় শর্ত ভাংগেন, তাঁর অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়ার আমার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই। দর্শক শ্রোতার কাছে মনে মনে ক্ষমা চেয়ে নিলাম, ওদের তো দোষ নেই। এই মধ্য প্রদেশেই, ২০০৬ সালে, যখন ভোপালের ‘ভারত ভবন’-এ বক্তৃতা দিচ্ছিলাম, বাইরে মুসলিম মৌলবাদিরা আমার বিরুদ্ধে মিছিল করছিল। ভোপালের অন্য যেখানেই গেছি, মৌলবাদিদের তসলিমা বিরোধী মিছিল স্লোগান জমায়েত বিক্ষোভ পেছন পেছন গিয়েছিল। শুধু কি তাই? হায়দারাবাদে বই প্রকাশ উৎসবে আমার ওপর মৌলবাদিদের হামলা, আওরংগাবাদে তো আমাকে ঢুকতেই দেওয়া হলো না, বিমান বন্দর ঘেরাও করে রেখেছিল উন্মত্ত মুসলিমেরা। তারপর শহরে আমি কখন কোথায় উপস্থিত থাকবো, তার বিজ্ঞাপন দেওয়া অসিহিষ্ণু জনতাকে আমন্ত্রণ জানানো ছাড়া আর কী! আয়োজক হোয়াটস আপ করলেন, গুয়ালিওর নাকি আমার জন্য ‘সেইফ’। হায়দারাবাদের আয়োজকও এভাবে আশ্বাস দিয়েছিলেন।
সবসময় কি মিছিলই হবে,মিছিলের মধ্য থেকে ধারালো ধর্মীয় অনুভূতির কেউ একজন বেহেস্তের হুরপরীর লোভে ইসলামে অবিশ্বাসী কাউকে খুনও তো করতে পারে। ঝুঁকি আর কত নেব জীবনের!
অনুষ্ঠান বাতিল করলাম, কিন্তু দীর্ঘ জার্নিতে কাজের কাজ কী হলো, গোয়ালিওরে মান সিং তোমারের প্রাসাদখানা দেখা হলো, তাজমহল দেখেছিলাম ৩০ বছর আগে, দ্বিতীয়বার দেখা হলো, ফতেপুর সিক্রিটা দেখা ছিল না, দেখা হলো। বৃন্দাবনের প্রেম মন্দিরে একাধিকবার আসাই যায়।
[gs-fb-comments]Copyright © 2023 Amaderkatha | Design & Developed By: Design Ghor