হবিগঞ্জঃ
সরকারের ইউএনও এবং উচ্চ পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা মোঃ জসিম উদ্দিন। উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা হিসেবে যিনি হবিগঞ্জের বাহুবলে কর্মরত আছেন। তার বিরুদ্ধে এক’ই উপজেলার উপজেলা প্রকৌশলী (এল.জি.ই.ডি.) কর্মকর্তা মহিউদ্দিনকে নিজ অফিসে আটকে রেখে মারধরের অভিযোগে সিলেট এলজিইডি ভবনের সামনে মানববন্ধন করে তার শাস্তি চেয়েছেন এলজিইডি ভবনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। শুধু সিলেটই নয়, দেশের বিভিন্নস্থানে ১২ মার্চ মানববন্ধন করেন এলজিইডি ভবনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
যদিও অলুয়াবাঁধ নির্মাণের ফাইল গায়েঁব নিয়ে প্রকৌশলী মহিউদ্দিনের সাথে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়েছে বলে দাবি করেছেন ইউএনও জসিম উদ্দিন। তিনি এ কারণে উপজেলা প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রধান প্রকৌশলী আগারগাঁও ঢাকা বরাবরে লিখিত দিয়েছেন। যার স্মারক নং. ০৫.৪৬.৩৬০৫.০০১১৯৮১। যার অনুলিপি সচিব, নির্বাচন কমিশন, সচিবালয় ঢাকা, জেলা প্রসাশক, হবিগঞ্জ, অতিরিক্ত জেলা প্রসাশক (সার্বিক) ও রিটানিং অফিসার ৫ম উপজেলা নির্বাচন হবিগঞ্জকে দেয়া হয়েছে।
একজন সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আরেক জন সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীর মানববন্ধন কী প্র্রমাণ করে না এসব দেখার জন্য কেউ নেই? আসলেই কী ভূয়া বিল ভাওচার নিয়ে দুজনের মাঝে দ্বন্দ্বের তৈরি হয়েছে এ প্রশ্ন এখন জনমনে ! তবে সরকারের একজন উপজেলা পর্যায়ে শীর্ষ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে জনসম্মুখে মানববন্ধন করে ব্যবস্থা চাওয়া বিধি সম্মত কিনা সে বিষয়টিও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে দাড়িয়েছে।
প্রকৌশলী মহিউদ্দিনকে আটকের অভিযোগে সিলেট এলজিইডি কার্যালয় ভবনের সামনে মানববন্ধন করেছেন কর্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
১২ মার্চ মঙ্গলবার সকাল ১০টায় বাগবাড়িস্থ এলজিইডি ভবনের সামনে এ মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করা হয়।
হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. জসিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলে মানববন্ধনে উপস্থিত বক্তারা বলেন, গত ৬ মার্চ কিছু ভূয়া বিল নিতে আসলে উপজেলা প্রকৌশলী মহিউদ্দিন এতে সাক্ষর করেননি। তখন ইউএনও অফিস রুমে পুলিশ ডেকে এনে তাকে হাতকড়া পড়ানো হয়।
মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন সিলেটের সকল উপজেলা প্রকৌশলী, সহকারী প্রকৌশলী, উপ-সহকারী প্রকৌশলী এবং এলজিইডি সিলেটের কর্মকর্তাগণ।
এদিকে হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. জসিম উদ্দিনের ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রকৌশলী মহিউদ্দিনকে হাতকড়া পড়ানোর ঘটনায় জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রকৌশলীরা।
স্যার, আমি অদ্য বেলা ১২.০০ টায় একটি নথি উপজেলা প্রকৌশলী মহিউদ্দিন চৌধুরীর টেবিলে উপস্থাপন করি। উপস্থাপনকালে তিনি উক্ত নথির বিষয়ে জানতে চান। আমি কথা বলার সময় তিনি চরম উত্তেজনায় আমাকে ধমক দিয়ে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেন। এক পর্যায়ে তিনি আমাকে মারতে উদ্যত হন। আমি ভয়ে দৌড়াইয়া স্যারের কাছে আসি। ইহাই আমার বক্তব্য।
আমি একজন গরিব কর্মচারী। আমার ছেলে-মেয়ের লেখাপড়ার জন্য অফিসের বাহিরে কাজে যাইতে হয় বিধায় মাঝে মধ্যে কিঞ্চিত বিলম্ব হওয়ায় গত মাসে আমার ০২ দিনের বেতন কর্তন করেন। তাহার উপজেলার প্রকৌশলীর বিভিন্ন অন্যায় আচরণের জন্য আমি বাধ্য হয়ে আমার ছেলে মেয়েদের বাড়ীতে পাঠিয়ে দেই। গত ২৯-১২-২০১৮ খ্রিঃ তারিখে তিনি আমাকে তাপ্পর দিতে উদ্যত হন।
উপজেলা প্রকৌঃ অন্যায়ভাবে অফিসে কিঞ্চিত বিলম্ব হলে এমনকি শুক্র-শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে অনুপস্থিত দেখিয়ে বেতন কর্তন করেন।
গত ৪ মাস চলমান আমার পাশের বাসায় থাকেন। বিগত সংসদ নির্বাচনের ৪/৫ দিন পূর্বে তাহার বাসার সামনে অবস্থানরত তার নিজ গাড়ীতে আশেপাশের ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা ভীড় করলে তাদেরকে গালিগালাজ করে এবং তাদের পিতা-মাতাকে উদ্দেশ্য করে অযতা গালিগালাজ করে। প্রায় রাত্রিতেই সে ৩/৪ টা পর্যন্ত হইচই করে এবং বাহিরের লোকজন আনাগোনা করে। এতে আমরা নিরাপত্তা হীনতায় ভোগছি আমি এর প্রতিকার চাই।
গত ২৯-১২-১৮ ইং তারিখে গত ১১তম সংসদ নির্বাচনে দায়িত্ব পালনে বাসা থেকে বের হওয়ার জন্য প্রস্তÍতি নিচ্ছিলাম। তখন ১২.১৫ মিনিটে উপজেলা প্রকৌশলী আমার মোবাইলে কল করেন। ফোন করলে আমি জবাব দেই যে, ইঞ্জিনিয়ার সাহেন বলেন, তখন উনি বলেন যে, কি বলেন, আমি বললাম ইঞ্জিনিয়ার সাহেব বলেন। তখন উনি বললেন, আমাকে ‘স্যার’ বলবেন। ঘবীঃ ঃরসব আমাকে স্যার না বললে আপনাকে ধরে নিয়ে যাব এবং সিনক্রিয়েট করব। তখন আমি হতভম্ব হয়ে যাই। এবং নির্বাচনী দায়িত্ব যথাযথ ভাবে পালনের নিমিত্ত আমি আর কিছু না বলে, ঠিক আছে আপনাকে স্যার বলব বলে আমি ভোট কেন্দ্রে চলে যাই। এই ঘটনায় আমি খুব অপমানিত হয়েছি।
উপজেলা প্রকৌশলীর নির্দেশ মত অফিশীয়াল কাজে সকাল ০৮.০০ টায় উপঃ সহঃ প্রকৌশলী জনাব আলফাজকে সঙ্গে নিয়া সাইটে যাই। কিন্তু পরবর্তীতে উপজেলা প্রকৌশলী অন্যায়ভাবে আমাকে গর হাজির দেখিয়ে ০১ দিনের বেতন কর্তন, বিভিন্ন সাইটে গিয়ে লোকজনের সামনে কারণে অকারণে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। সে আসার পর থেকে অফিসের স্বাভাবিক পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে।
উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয়, বাহুবল গত ২৭-০২-২০১৯ খ্রিঃ উপজেলার বিভিন্ন কর্মচারী ও বাহিরের লোকজনের সামনে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে ও এক পর্যায়ে আমার গায়ে আঘাত করে বরাদ্দের বিষয়ে অভিযুক্ত করে আমার বেতন বন্ধ ও কর্তন করেছে। আমি বিচার চাই।
আমি উপজেলা পরিষদ কোয়ার্টারের নিজ বাসাতে অবস্থান করি। অফিসে আসতে ১০/১৫ মিনিট বিলম্ব হওয়ায় উপজেলা প্রকৌঃ মহোদয় গত মাসে ০২ দিনের ও বর্তমান মাসের ০২ দিনের বেতন কর্তন করেন।
উপজেলা মাসিক সমন্বয় সভায় উপজেলা প্রকৌশলী সাহেব বক্তব্য দেওয়ার সময় উপজেলা শিক্ষা অফিসার সম্বন্ধে উচ্চবাচ্য করেন এবং অফিসার সম্বন্ধে নেতিবাচক বক্তব্য দেন, বলেন আমি মিস্ত্রি পিঠিয়েছেন। আমি বললাম এটাত সন্ত্রাসী কতাবার্তা। এতেই তিনি উত্তেজিত হয়ে আমার সম্বন্ধে কথা বলেন। তুমি কে? পরে অন্যরা থামিয়ে দেন। এতে আমি মানসিকভাবে অনেক কষ্ট পেয়েছি।
আমার পিয়নের ১০/১৫ দিনের অনুপস্থিতি দেখানো হয়েছে। সেলারী শীট ঢাকাতে পাঠাতে হয় বিধায় বিষয়টি ১ম বারের মত ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার জন্য অনুরোধ করলে তিনি আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেন। তিনি আমাকে হোটেল বয় এর দায়িত্ব পালন করান। আমার ব্যক্তিগত কাজে অফিস সময়ের পর তাহাকে জানাতে হবে ইত্যাদি বিভিন্ন রকম খারাপ আচরন করেন। তাহার ব্যবহারে আমরা কর্মচারীগণ অতিষ্ঠ।
অনুমান ১/দের মাস পূর্বে আমি আসর নামাজ পরার জন্য অফিসে কেহ না থাকায় আমি তালাবদ্ধ করে যাই। আমি ৫ মিনিটের মধ্যে অফিসে ফিরে আসি। ইতিমধ্যে তিনি আমাকে এসে বলেন প্রয়োজনে নামাজ বন্ধ থাকবে কিন্তু তালাবদ্ধ করে নামাজ চলবে না।
০৬-০৩-১৯ ইং তারিখে উপজেলা নির্বাহী অফিসের অফিস সহকারি হরিপদ বাবুর সাথে যে ঘটনা ঘটেছে তার জন্য আমি লজ্জিত এবং দুঃখিত মোঃ মহিউদ্দিন চৌধুরী ।
তবে ইউএনও কার্যালয়ে গিয়ে বাহুবল থানার এসআই জহিরুল ইসলাম উপজেলা প্রকৌশলী মহিউদ্দিনকে কেনো হাতকড়া পড়িয়েছিলেন তা জানতে ০১৭১০২৯০৩১৪ নম্বরে ফোন দিলে তিনি বলেন, আমার আগে এসআই কবির সেখানে গিয়েছিলেন। খবর পেয়ে আমি সেখানে যাই।
প্রকৌশলী মহিউদ্দিন ফোনে আজকের পত্রিকাকে জানান, আমার বিরুদ্ধে আনিত ফাইল গায়েবের অভিযোগ মিথ্যা। তিনি কিভাবে ফাইল দিয়েছেন সে প্রমাণ আমার হাতে আছে।
এব্যাপারে অভিযুক্ত উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা মো: জসিম উদ্দিন আজকের পত্রিকাকে জানান, এলজিইডি কর্মকর্তা মহিউদ্দিনের বিষয়ে আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ মিথ্যা। মূলত হাজার হাজার কৃষকের স্বার্থে অলুয়াবাঁধ নির্মাণ নিয়ে আমার সাথে মহিউদ্দিনের বিরোধ সৃষ্টি হয়। মহিউদ্দিন ওই বাধেঁর ফাইলে স্বাক্ষর না করে পুরো ফাইল গায়েঁব করে দেন।
Copyright © 2021 Amaderkatha | Design & Developed By: Design Ghor