ঢাকা ঃ
গ্রামীণ ব্যাংকে কর্মরত প্রায় ৩ হাজার দৈনিক ভিত্তিক পিয়ন-কাম-গার্ডদের চাকুরী স্থায়ীকরণ, শ্রম আইন অনুযায়ী নিয়োগপত্র-ছুটি-বোনাসসহ যাবতীয় সুবিধাদি প্রদান এবং আন্দোলনকারীদের শাস্তিমূলক চাকুরিচ্যুতি-বদলি বন্ধসহ ৫ দফা দাবিতে গ্রামীণ ব্যাংক ৪র্থ শ্রেণী কর্মচারী পরিষদ-এর উদ্যোগে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি আজ থেকে ঢাকায় শুরু হয়েছে। সারাদেশ থেকে আসা গ্রামীণ ব্যাংকের সহ¯্রাধিক কর্মচারী আজ ১৮ মার্চ সকাল ১০টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের ফুটপাতে অবস্থান নিয়েছে। তারা নোবেল বিজয়ী প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ব্যাংকে শ্রম আইন লঙ্ঘন ও গরিব কর্মচারীদের আইনসম্মত অধিকার থেকে বঞ্চিত করা বন্ধ করতে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের হস্তক্ষেপ দাবি করছে। তারা ঘোষণা দিয়েছে যে, ব্যাংক কর্তৃপক্ষ থেকে চাকুরী স্থায়ীকরণের ঘোষণা না আসা পর্যন্ত তারা অবস্থান চালিয়ে যাবে। সারাদিনে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন ও রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রীয় নেতারা এই অবস্থান কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন।
অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন গ্রামীণ ব্যাংক ৪র্থ শ্রেণী কর্মচারী পরিষদ-এর আহ্বায়ক আজিজুল হক বাবুল। বক্তব্য রাখেন পরিষদ-এর যুগ্ম আহ্বায়ক মো. ইউনুস, নয়ন শিকদার, সাধারণ সম্পাদক মিন্টু রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক মমিনুল ইসলাম, উপদেষ্টা ইরাদুল ইসলাম, যশোর জোনের সভাপতি মো. রফিকুল ইসলাম, নরসিংদী জোনের সভাপতি মো. আরিফ মিয়া, টাঙ্গাইল জোনের সভাপতি ইউসুফ আলী, সিরাজগঞ্জ জোনের মো. আজম প্রমুখ।
অবস্থান কর্মসূচির দাবির প্রতি সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন – বাসদ(মার্কসবাদী)-র কেন্দ্রীয় নেতা শুভ্রাংশু চক্রবর্ত্তী, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সাজ্জাদ জহির চব্দন, গণসঙ্ঘতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকী, বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি জহিরুল ইসলাম, জাতীয় গণতান্ত্রিক শ্রমিক ফেডারেশনের আহ্বায়ক শামীম ইমাম, গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির সাধারণ সম্পাদক জুলহাসনাইন বাবু, শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় নেতা ফখ্রুদ্দিন কবির আতিক ও গ্রামীণ ব্যাংক পরিচালনা বোর্ডের সাবেক সদস্য আসমা বেগম।
সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, “গ্রামীণ ব্যাংক নোবেল বিজয়ী প্রতিষ্ঠান হিসেবে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন। ব্যাংকের কর্মকর্তারা একে ‘গরিবের ব্যাংক’ বলে দাবি করেন। অথচ ব্যাংকটি নিজেদের গরিব কর্মচারীদের সাথে অমানবিক আচরণ ও ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করে চলেছে। ব্যাংকের বিভিন্ন শাখা অফিসে পিয়ন-কামÑগার্ড হিসেবে কর্মরত তিন হাজারের বেশি কর্মচারীকে দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে (ঘড় ডড়ৎশ, ঘড় চধু) বছরের পর বছর ধরে কাজ করানো হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে (অনেকে ১৫-২০ বছরের বেশি) চাকুরি করলেও চাকুরী স্থায়ীকরণ করা হচ্ছে না। এই কর্মচারীদের কোন নির্ধারিত কর্মঘন্টা, সাপ্তাহিক-সরকারি-উৎসব-ঐচ্ছিক-অসুস্থতাকালীন ছুটি, বোনাস নেই। কোনরকম কারণ দর্শানো ও লিখিত অভিযোগ ছাড়া যেকোন সময় মৌখিক ভিত্তিতে ছাঁটাই করা হয়। এসবই বাংলাদেশ শ্রম আইন, আন্তর্জাতিক শ্রমমান ও মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
বর্তমানে দিনে অফিসের কাজের জন্য দৈনিক ৩৭৫ টাকা, রাতে অফিস পাহারার জন্য মাসে ১০০০ টাকা ও সকালে ঝাড়ুদারের কাজের জন্য মাসে ৬০০ টাকা মজুরি দেয়া হয়। এই পদে ১০ বছরের বেশি সময় ধারাবাহিক কাজ করলে বিদায়কালীন অনুদান বাবদ মাত্র ২ লক্ষ টাকা দেয়া হবে। দশ বছর হওয়ার আগেই নানা অজুহাতে ছাঁটাই করা হয়। প্রতিটি ঈদ উদ্যাপন/উৎসব পালন এর জন্য সহায়তা বাবদ মাত্র ২৫০০ টাকা দেয়া হয়। চাকুরিতে যোগদানের সময় কোন নিয়োগপত্র ও ছবিসম্বলিত পরিচয়পত্র দেয়া হয় না। কর্মচারীদের প্রশ্ন – ‘এত বছর ধরে ২৪ ঘন্টা কাজ করি, তবু কেন অস্থায়ী’?
অথচ গ্রামীণ ব্যাংকের ‘বিভিন্ন পদে নিয়োগ, পদোন্নতি ও পদত্যাগ প্রসঙ্গে’ শীর্ষক ‘নির্দেশিকা ষোল’-এর ১৬.৬.৯ অনুচ্ছেদ মতে ‘দৈনিক ভিত্তিতে নিয়োগপ্রাপ্ত পিয়ন-কাম-গার্ডদের কোন অবস্থাতেই ৯ মাসের বেশি দৈনিক ভিত্তিতে রাখা যাবে না’। বাংলাদেশ শ্রম আইন অনুযায়ী, নির্দিষ্ট সময়ান্তে শ্রমিক/কর্মচারীদের স্থায়ীকরণ করতে হবে। এছাড়া, গত ১৪.১০.১৮ তারিখে দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সম্প্রতি এক পরিপত্রে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহে অস্থায়ী বা দৈনিক ভিত্তিতে নিয়োগে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে বলেছে Ñ নির্দিষ্ট সময় ধরে কোনো পদে যদি অস্থায়ী কর্মচারী নিয়োগ দিতে হয়, তাহলে তখনই সে পদগুলো স্থায়ী করার উদ্যোগ নিতে হবে। বাংলাদেশ সরকার গ্রামীণ ব্যাংকের ২৫% শেয়ারের মালিক, তাহলে এখানে এ পরিপত্র প্রযোজ্য হবে না কেন?
চাকুরী স্থায়ীকরণ চেয়ে ২০১২ সাল থেকে বিভিন্ন সময়ে কর্তৃপক্ষকে দাবিগুলো জানানো হয়। সর্বশেষ ২০১৮ সালের মার্চ ও জুলাই মাসে জাতীয় প্রেসক্লাব ও গ্রামীণ ব্যাংক প্রধান কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়। তখন ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট আশ^াস দিলেও স্থায়ীকরণের মূল দাবি বাস্তবায়নের কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। উপরন্তু আন্দোলনের সাথে জড়িতদের নানা কৌশলে অন্য জেলায় হয়রানিমূলক বদলি, চাকুরিচ্যুতিসহ বিভিন্ন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে গ্রামীণ ব্যাংক ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ।
ড. ইউনুস গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক থাকাকালে ২০০৩ সালে স্থায়ী পিয়ন-কাম-গার্ড নিয়োগ বন্ধ করে ‘দৈনিক ভিত্তিক লোক কাজে লাগানো সংক্রান্ত’ সার্কুলার জারি করা হয়। এভাবে অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে গরিব কর্মচারীদের শোষণ ও অধিকারবঞ্চিত করেছেন ‘শান্তিতে নোবেল বিজয়ী’ ড. মুহাম্মদ ইউনুস। সরকার নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগ দিলেও এখনো সেই ড. ইউনুস প্রশাসনেরই ধারাবাহিকতা চলছে। এমতাবস্থায় বাংলাদেশ সরকার, বাংলাদেশ ব্যাংক ও গ্রামীণ ব্যাংক কর্তৃপক্ষের উচিত Ñ বাংলাদেশের শ্রম আইন, গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালনা-নিয়োগ বিধি, সর্বোপরি মানবিক দিক ও গ্রামীণ ব্যাংকের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি বিবেচনা করে ৩০০০ দৈনিকভিত্তিক পিয়ন-কাম-গার্ডদের চাকুরী স্থায়ী করে তাদের পরিবারের সম্মানজনক জীবিকা ও ভবিষ্যত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।”
[gs-fb-comments]Copyright © 2021 Amaderkatha | Design & Developed By: Design Ghor