
ডেস্ক রিপোর্ট।।
নারদ পুরাণে আছে দৈত্যরাজ হিরণ্যকশিপুর পুত্র প্রহ্লাদ ছিলেন পরম বিষ্ণুভক্ত। কিন্তু হিরণ্যকশিপু ছিলেন ঘোর বিষ্ণুবিদ্বেষী। পুত্রের এই বিষ্ণুপ্রেম তিনি কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলেন না। বহু চেষ্টা করেও ছেলের মনের পরিবর্তন করতে না পেরে তাঁকে হত্যা করতে আদেশ দিলেন হিরণ্যকশিপু। কখনো প্রহ্লাদ কে মত্ত হাতির সামনে ফেলে দেওয়া হলো ,কখনো পাহাড় থেকে সমুদ্রে ছুঁড়ে ফেলা হলো,কখনো তাঁর খাবারে বিষ দেওয়া হলো। প্রত্যেকবারই আশ্চর্যজনক ভাবে রক্ষা পেল প্রহ্লাদ।
তখন এগিয়ে এলো হিরণ্যকশিপুর বোন হোলিকা। সে তপস্যা করে ব্রহ্মার থেকে বর পেয়েছিল আগুনে তার কোনো ক্ষতি হবেনা। তার আদেশে বিরাট এক অগ্নিকুন্ড তৈরী হলো আর হোলিকা। প্রহ্লাদকে নিয়ে সেই কুন্ডের মধ্যে গিয়ে বসলো উদ্দেশ্য আগুনে প্রহ্লাদ পুড়ে ছাই হয়ে যাবে আর বেঁচে যাবে হোলিকা। আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হলো
তারপরেই দেখা গেল এক আশ্চর্য দৃশ্য। আগুন জ্বলতেই হোলিকার দেহ পুড়তে আরম্ভ করলো,আর প্রহ্লাদকে আগুন স্পর্শও করলো না। ব্রহ্মার বরের একটা কথা হোলিকার মাথায় ছিল না। সেটি হলো,নারী ও শিশুর ক্ষতি করার চেষ্টা করলে হোলিকার সব শক্তি নষ্ট হয়ে যাবে। তাই নিজের আগুনে সে নিজেই পুড়ে মরলো। আর ভগবান বিষ্ণুর আশীর্বাদে রক্ষা পেল প্রহ্লাদ।
হোলিকা রাক্ষসীর সেই মৃত্যুকে মনে রেখেই সমস্ত গোকুল,মথুরা,বৃন্দাবন জুড়ে চলে হোলিকা দহন
এই উৎসবের মধ্যে দিয়ে সমস্ত সমস্ত পাপ কে ধ্বংস করা হয়। এ অশুভের বিরুদ্ধে শুভশক্তির জয়। হোলির আগের দিন প্রতিটি গৃহের সামনে বা পাড়ায় পাড়ায় ছোটরা শুকনো গাছের ডাল এনে জড়ো করে | দিন শেষ হয়ে আকাশ যখন মায়াময় হয়ে ওঠে তখন তাতে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। দাউদাউ করে জ্বলে ওঠে আগুনের শিখা। এই হোলিকা দহনই বাংলায় ” বুড়ির ঘর পোড়ানো” বা “ন্যাড়াপোড়া”।
বস্তুত:, শীতশেষে যখন বসন্ত আসে তখন গাছপালার শুকনো পাতার আবর্জনায় ভরে ওঠে। তাই তা পুড়িয়ে পরিচ্ছন্ন করা হয় পরিবেশ। যখন হোলিকার আগুন জ্বলতে থাকে তখন অগ্নিদেবতার উদ্দেশ্যে মন্ত্র পড়া হয়। আগুন নিভে গেলে সেই ছাই সকলে পবিত্র মনে কপালে স্পর্শ করে। পরদিন ভোরের আলো ফুটলে শুরু হয় রঙের খেলা।