ব্রাক্ষণবাড়িয়া।।
সর্বত্র একটাই আলোচনা- ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা নির্বাচনে প্রশাসন কেন মারমুখী ছিল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী আর সমর্থকদের ওপর। কার নির্দেশে এসব হলো তার উত্তর খুঁজছেন দলের নেতারা। যদিও এরই মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার আবদুল মান্নানকে দায়ী করেছে ছাত্রলীগ। ভোটের আগের দিন রাতে তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া আসেন। সে সময় একান্ত বৈঠক করেন চেয়ারম্যান প্রার্থী ফিরোজুর রহমান ওলিও, পুরুষ ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী লোকমান হোসেন ও শামীমা আক্তারের সঙ্গে। ছাত্রলীগ অভিযোগ করেছে তার নির্দেশে ওই রাত থেকেই ভোটের দিন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের ওপর চড়াও হয় ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। কেন্দ্রের আশপাশে নয়, বাসাবাড়িতে গিয়েও দলের নেতাকর্মীদের ওপর চড়াও হয়েছে। বিভাগীয় কমিশনার রাতে যাদের সঙ্গে বৈঠক করেন পরদিন নির্বাচনে তাদেরই জয় হয়েছে।
অনেক কেন্দ্রে তাদের পক্ষে প্রিজাইডিং অফিসাররা পর্যন্ত সিল মারেন। ফেসবুকে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ‘পদ্মফুল’ প্রতীকের ব্যালটে টেবিলে রেখে সিল মারার ভিডিও প্রকাশ পেয়েছে। অন্যদিকে নৌকার সমর্থক-এজেন্টদের শুধু কেন্দ্র নয় বাড়িছাড়া করা হয়েছে। এসব ঘটনায় ক্ষোভের আগুন জ্বলছে নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে। শহরের ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজ কেন্দ্রে ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী লোকমান হোসেন নৌকার এজেন্টদের তাড়া দিতে বিজিবি ডেকে আনেন। এ তথ্য জানিয়ে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রবিউল হোসেন রুবেল বলেন- লোকমান হোসেন ওই কেন্দ্রে এসে তার প্রতিপক্ষের ভোটে সিল মারার অভিযোগ করেন। রাগান্বিত হয়ে বলেন- ১০ মিনিটের মধ্যে মজা দেখাচ্ছি। এরপরই বিজিবি এসে নৌকার সমর্থকদের ওপর চড়াও হয়। ভোট চলাকালে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি রুবেলের মোড়াইলের বাসায় বিজিবি’র একটি দল নিয়ে যান সদর উপজেলা প্রশাসনের এক কর্মকর্তা রুবেলের বৃদ্ধ মাকে ডেকে বলেন-‘এই নেতার মা, তর পুত কই, বাইর কর’। তাকে না পেয়ে বাসার গেটে লাথি মেরে চলে আসে বিজিবি সদস্যরা। রামকানাই হাই একাডেমি কেন্দ্র থেকে নৌকার এজেন্ট আকবর হোসেনকে বের করে দেয় পুলিশ। এরপর এক ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীর ব্যাজ পরে কেন্দ্রে ঢোকার চেষ্টা করে সে। দক্ষিণ পৈরতলা কেন্দ্রে গিয়ে এর আশেপাশের বাড়ির লোকজনের ওপর চড়াও হয় ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ সময় এলাকার বিশিষ্ট লোকজন এর কারণ জানতে এগিয়ে এলে তাদেরকে দেশবিরোধী বলে গ্রেপ্তার করার নির্দেশ দেন কর্তব্যরত ম্যাজিস্ট্রেট। পৈরতলা গ্রামের তালেব মিয়া জানান, উত্তর পৈরতলা কেন্দ্রে সারাদিন ফিরোজুর রহমান, লোকমান হোসেন ও শামীমা আক্তারের পক্ষে প্রভাব খাটান পৌর মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নায়ার কবিরের দেবর ফারুক মিয়া ও তার ছেলে রনি। তারা কেন্দ্রটি দখল করে দিনভর ভোটারদের হাত থেকে ব্যালট কেড়ে নিয়ে নিজেরাই সিল মেরে বাক্সে ভরেন। কিন্তু সেখানে ম্যাজিস্ট্রেট বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো তৎপরতা ছিল না। ফারুক স্বতন্ত্র প্রার্থী ফিরোজের বেয়াই। এ কেন্দ্রে তাদের পরিবারেরই ১২ জন বিভিন্ন প্রার্থীর এজেন্ট ছিলেন। কিন্তু মূলত ভোট নিয়েছেন ওই ৩ প্রার্থীর। রনি নৌকার এজেন্ট হিসেবে থাকলেও ভোট কাস্ট করেছেন আনারসের জন্য। এ উপজেলায় নির্বাচনী দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নির্বাচন কমিশনের ভোট সুষ্ঠু করার কঠোর নির্দেশের কথা বললেও তারা আওয়ামী লীগকেই দেখেছে কঠোরভাবে। আর ওই ৩ প্রার্থীকে দিয়েছে সুযোগ-সুবিধা। মজলিশপুর ইউনিয়নে লোকমান হোসেনের বাড়ি বলে সেখানে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর এজেন্টদের ওপর আরো বেশি চড়াও ছিল প্রশাসন। মৈন্দ উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের বেশ দূরে নৌকা ও কলসের ব্যাজ গলায় ঝুলিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রী রুনাক সুলতানা পারভীন। তিনি জানান, একজন পুলিশ কর্মকর্তা চট্টগ্রাম থেকে এসেছেন জানিয়ে তাকে বলেন এখানে ৪ জনের লাশ ফেলার অর্ডার আছে। তাকে সেখান থেকে দ্রুত সরে যেতে বলেন। তা না হলে ম্যাজিষ্ট্রেট ডাকবেন। এরপর প্রাণভয়ে পারভীন সেখান থেকে নৌকার অফিসে চলে যান। পারভীন জানান, আনারস আর চশমা গলায় ঝুলানো লোকজনকে কিছু বলেনি তারা। নৌকা আর কলসের লোকজনকে মেরে রিকশাসহ পানিতে ফেলেছে। এসব অভিযোগ আর আলোচনা এখন মানুষের মুখেমুখে। প্রশাসনের একপক্ষীয় এই মনোভাবের কারণে নির্বাচন আদৌ সুষ্ঠু হয়েছে কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য অধ্যক্ষ জয়নাল আবেদীন বলেন, নির্বাচনে একজনকে জেতানোর জন্যই পরিকল্পিতভাবে এমনটা করা হয়েছে।
[gs-fb-comments]Copyright © 2023 Amaderkatha | Design & Developed By: Design Ghor