
ঢাকা।।
উপজেলা নির্বাচনের ‘তিক্ত অভিজ্ঞতায়’ স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয় প্রতীকে না করার বিষয়ে ভাবছে আওয়ামী লীগ। উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী চূড়ান্ত করা এবং বিদ্রোহীদের সামাল দেওয়া, ব্যক্তির বিরোধিতা করতে গিয়ে ‘নৌকাবিরোধী’ অবস্থানের কারণেই স্থানীয় সরকারে দলীয় নির্বাচন থেকে পিছু হটছে ক্ষমতাসীন দলটি।
গণভবনে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন থেকে সরে আসার ব্যাপারে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত হতে পারে। একই সঙ্গে পৌরসভায় মেয়রের পরিবর্তে চেয়ারম্যান পদে ফিরে যাওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। দলের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া গেছে। দলীয় সিদ্ধান্ত হলে এ মাসেই অনুষ্ঠেয় জাতীয় সংসদের অধিবেশনে আইন পাস করার প্রস্তাব করা হতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে। দলীয় সূত্র জানায়, আজ আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক থেকে কিছু সিদ্ধান্ত হতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক থেকে সরে আসা, আগামী অক্টোবরে জাতীয় সম্মেলনকে সামনে রেখে বিভিন্ন উপ-কমিটি গঠন, মেয়াদ উত্তীর্ণ জেলা, মহানগর ও উপজেলা কমিটির সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা প্রভৃতি। এছাড়া কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সফরের টিম চূড়ান্ত করা, উপজেলায় বিদ্রোহী প্রার্থীদের মদদদাতা এমপি-মন্ত্রী ও নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া, দলীয় পদে থেকে যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হয়েছেন তারা স্বপদে থাকবেন কিনা বা আগামীতে কোনো পদে আনা হবে কিনা সেসব বিষয়েও সিদ্ধান্ত হতে পারে আজ। এতে মেয়াদ উত্তীর্ণ সহযোগী সংগঠনের সম্মেলনের ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত আসতে পারে। বিকাল ৫টায় গণভবনে ওই বৈঠকে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভাপতিত্ব করবেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘উপজেলা নির্বাচনের অভিজ্ঞতার আলোকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক থেকে সরে আসার পক্ষে মনোভাব দেখিয়েছেন দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মাত্র তিন মাস আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যেখানে ৮০ ভাগ ভোটে পড়েছে এবং নৌকার প্রার্থীরা নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছে, সেখানে উপজেলায় ভোটার উপস্থিতি হতাশ করেছে। এছাড়া স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ব্যক্তির বিরোধিতা করতে গিয়ে ‘নৌকার বিরোধিতা’ নির্বাচনের জন্য সুখকর নয়। আবার বিদ্রোহীদের বহিষ্কার, প্রার্থী চূড়ান্তকরণসহ নানা কারণে স্থানীয় নির্বাচনে দলীয় প্রতীক থেকে সরে আসার চিন্তা-ভাবনা চলছে। আজ শুক্রবার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। জানা গেছে, গত ২০১৫ সালের নভেম্বর মাসে উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, সিটি ও পৌরসভার মেয়র এবং ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করার আইন পাস করা হয়। ইতিমধ্যে একদফা পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ এবং কয়েকটি সিটি করপোরেশন ও সর্বশেষ উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদের বিদ্রোহী প্রার্থীর ছড়াছড়ি ছিল। উপজেলাতেও শতাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী বিজয়ী হয়েছে। অন্যদিকে দলীয় প্রার্থী ও বিদ্রোহীর মধ্যে বেশকিছু জায়গায় সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। ব্যক্তির বিরোধিতা করতে গিয়ে নৌকার বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। স্থানীয় এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র ও ইউপি চেয়ারম্যানদের আলাদা বলয় তৈরি হয়েছে। এসব বলয়ের কারণে তৃণমূলে কোন্দল আরও বড় আকার ধারণ করেছে। সে কারণেই আগামীতে স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলো দলীয় প্রতীকে না করার চিন্তা করছে আওয়ামী লীগ।
জাতীয় ও জেলা সম্মেলনের তারিখ চূড়ান্ত হবে আজ : গত শুক্রবার আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়ামের বৈঠকে আগামী অক্টোবরে দলের জাতীয় সম্মেলনের প্রস্তুতি নিতে নিদের্শনা দিয়েছিলেন দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলের সবোর্চ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরাম কার্যনির্বাহী সংসদের আজকের বৈঠকে চূড়ান্ত করা হতে পারে জাতীয় সম্মেলনের তারিখ। একই সঙ্গে যেসব জেলা-উপজেলা মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে, সেগুলোর সম্মেলন করার তারিখ নির্ধারণ করতে বিভাগীয় যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকদের নিদের্শনা দেবেন দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, শুক্রবারের দলের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে অনেকগুলো সিদ্ধান্ত আসবে। এর মধ্যে দলের জাতীয় সম্মেলন সফল করতে বিভিন্ন উপ-কমিটি গঠন, সম্মেলনের সম্ভাব্য তারিখ, মেয়াদ উত্তীর্ণ জেলা-উপজেলা এবং মহানগরের সম্মেলনের তারিখ চূড়ান্ত করা হতে পারে।
শাস্তির মুখোমুখি হচ্ছেন এমপি-মন্ত্রী ও নেতারা : শাস্তির মুখোমুখী হতে যাচ্ছেন উপজেলা নির্বাচনে দলের প্রার্থীর বিরোধিতাকারী এমপি-মন্ত্রী ও নেতারা। এবারের উপজেলা নির্বাচনে যেসব দলীয় এমপি-মন্ত্রী ও দলের গুরুত্বপূর্ণ পদের নেতা বিদ্রোহী প্রার্থীদের মদদ দিয়েছেন, নৌকার বিরোধিতা করেছেন, তাদের অধিকাংশের তালিকা দলীয় সভানেত্রীর কার্যালয়ে জমা হয়েছে। আজকে দলের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে তা তুলে দেওয়া হবে দলীয় সভানেত্রীর হাতে। একই সঙ্গে বৈঠকে তাদের শাস্তির বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান বলেন, যারা বিদ্রোহীদের মদদ দিয়েছেন, নৌকার বিরোধিতা করেছেন তাদের ব্যাপারে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কঠোর হতে যাচ্ছেন। ব্যক্তির বিরোধিতা করতে গিয়ে অনেক এমপি-মন্ত্রী ও নেতা নৌকার বিরোধিতা করেছেন। নিজেরা নৌকা নিয়ে বিজয়ী হয়ে নৌকার বিরোধিতা করবে তা মেনে নেওয়া হবে না। দলের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে তাদের চূড়ান্ত শাস্তির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হতে পারে।