
নবীনগর।।
সরকারের যেখানে খাল, বিল, নদী, নালায় অবৈধ দখল ও স্থাপনা উচ্ছেদের অভিযান চলছে সেখানে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে প্রশাসনের নাকের ডগায় চলছে খাল বিল নদী নালায় দখলের মাহোৎসব। উপজেলার জিনদপুর ইউনিয়নে সারাদেশসহ আভ্যন্তরিন যোগাযোগের একমাত্র ব্যস্ততম নবীনগর টু কোম্পানীগঞ্জ বড়সড়কের পাশে সড়ক ও জনপদ বিভাগের একটি সরকারি বড় খাল ভরাট করে দখল করে নিয়েছে ভূমিদস্যুরা। খাল দখল করে ওই খালের জায়গা বিক্রীর সাইনবোর্ড লাগিয়ে দিয়েছে এলকার চিহিৃত প্রভাবশালী ভূমিদস্যু হাসান আলী। সরকারের আইন থাকা স্বত্বেও দিনে দুপুরে প্রকাশ্যে কিভাবে দখল হলো ‘কড়ইবাড়ি খাল’ জনমনে নানা প্রশ্ন ? এলাকার জনসাধারণ সড়ক ও জনপদ বিভাগের কর্মকর্তা/কর্মচারীদের উপর আঙ্গুল তুলছেন। তারা বলছেন,চলমান এ কড়ইবাড়ি খালটি সড়ক ও জনপদ বিভাগের কতিপয় অসাদু কর্মকর্তা/কর্মচারীদের যোগসাজসে মাটি দিয়ে ভরাট করে দখল নেয় এলাকার প্রভাবশালী ভূমিদস্যু মো. হাসান উদ্দিন। ওই সড়কের কড়ইবাড়ি বাসষ্ট্যান্ড হতে জিনদপুর বাসষ্ট্যান্ড পর্যন্ত খালের অংশটি বিভিন্ন স্থানে ছোট ছোট বাধঁ দিয়ে ভরাট এবং এর অংশবিশেষ স্থায়ী ভরাট হয়ে যাওয়ার ফলে অত্র অঞ্চলের বিশাল এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। বড়সড়কের পাশে উপজেলার দক্ষিনাঞ্চলের ৫টি ইউনিয়ন ইব্রাহিমপুর, জিনদপুর, লাউরফতেহপুর, সাতমোড়া ও রসুল্লাবাদ ইউনিয়নের বিশাল অঞ্চলের শত শত একর ফসলী জমির ও সমস্ত এলাকার পানি নিষ্কাষনের একমাত্র পথ এ খাল। এটি ঐতিহ্যবাহি তিতাস নদীর শাখা বুড়ি নদী হতে উৎপত্তি হয়ে উপজেলা পার্শ্ববর্তী মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরার অদের খালে গিয়ে সংযুক্ত হয়। পানি নিষ্কাষনের একমাত্র বিশাল এ খালটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে এলাকার সাধারণ মানুষের মাঝে চরম উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। এ খাল স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে গেলে হাজার হাজার কৃষক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হবে এবং বন্ধ হয়ে যাবে দেশের একটি অঞ্চলের খাদ্যশস্য উৎপাদন। এ খাল ভরাটকে কেন্দ্র করে এলাকায় দাংগা হাঙ্গামা সৃষ্টি সম্ভাবনা রয়েছে বলে স্থানীয়রা জানায়। খালটি উদ্ধারের জন্য এলকাবাসির পক্ষে মো. বশির আহম্মেদ জেলা প্রশাসক বরাবরে একটি লিখিত আবেদন করেও কোন প্রতিকার পাননি। সওজ দায়সারা ভাবে গত ২৫ মার্চ ওই দখলদার ভ’মিদস্যুকে সাত দিনের মধ্যে মাটি সরিয়ে নিতে একটি নোটিশ দেয়। সেই নোটিশের সময়সীমা পেরিয়ে গেলেও কোন কার্যকর প্রদক্ষেপ নিতে এখনো দেখা যায়নি।
সরজমিন এলাকায় গিয়ে জানা যায়, এলাকার চিহিৃত ভ’মিদস্যু মো. ছগির,আবুল হোসেন ও হাসান মিয়ার গ্রুপ দির্ঘদিন ধরে বৈধ অবৈধ পন্থায় সাধারণ জনগনের ও সরকারি খাস জমি দখল করে জমি ও মাটি বেচাঁকেনা করে আসছে। সম্প্রতি ওই গ্রুপের মোঃ হাসান উদ্দিন খালের পাড়ের জমি থেকে মাটি কেটে খালটি ভরাট করে ফেলে। কথা হয় রাস্তার পূর্ব ও পশ্চিম পাশের খাল পাড়ের জমির কৃষক মো.মিজান মিয়া, মো. মোস্তফা মিয়া,মো. সোহেল মিয়া,মোবারক হোসেন, উহেদজামানসহ বেশ কয়েকজন সাথে। তারা বলেন, রাস্তার দুই পাশের খালের পূর্ব পাশটি অধিকাংশই ভরাট হয়ে গেছে এখন যদি রাস্তার পশ্চিম পাশের খালের অংশটি ভরাট হয়ে যায় তাহলে এলাকার জলবায়ৃ পরিবেশ ঝুঁকির মধ্যে পরবে এবং আমরা কৃষকরা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হবো। বন্ধ হয়ে যাবে ফসল উৎপাদন জলাবদ্ধতায় আবদ্ধ হয়ে যাবে গোটা অঞ্চল। বিষয়টি সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিতে আনা হলেও এখনও কোন কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়নি।
এ ব্যাপারে হাসান আলীর সাথে কথা বললে তিনি এটি একটি মরা খাল, পাশে আমার জমি, পানি চলাচলের সুরু পথ রাখা হয়েছে । এ ব্যাপারে জিনদপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আবদুল রউফ বলেন, বেশ কিছুদিন চিকিৎসাজনিত কারনে দেশের বাইরে ছিলাম , এসে বিষয়টি নজরে পরেছে,ওই তিনজনের মাটি ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন যাবত সড়ক ও জনপদ বিভাগে কর্মরত কতিপয় অসাদু ব্যক্তিদের সহযোগীতায় সরকারি খালসহ খাস জায়গা দখল করে নিচ্ছে,ইতিমধ্যে ওই সিন্ডিকেটের লোকদের ডেকে খালের উপর ছোট ছোট বাধ এবং খাল ভরাটের মাটি সরিয়ে ফেলার জন্য বলেছি, খুব দ্রুত প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
এ ব্যাপারে সড়ক ও জনপদ বিভাগের নবীনগর উপজেলার দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারি প্রকৌশলী আবদুল কাইয়ুম তাদের যোগসাজসের কথা অস্বীকার করে বলেন,খালের ভরাটকৃত মাটি সরিয়ে ফেলার জন্য হাসানকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে, আবারো তাকে চুড়ান্ত নোটিশ দেয়া হবে,কাজ না হলে আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হবে। এ ব্যাপারে সড়ক ও জনপদ বিভাগের জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শামিম আল মামুন বলেন,বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে, তাকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে আইনগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।