আমরা সময়ের কথা সময়ে বলি।

Advertisement

জেলের ভেতরে পলাশকে পুড়িয়ে মারা হয়েছে?

সারাদেশ 17 May 2019 ৪৬৯

জেলের ভেতরে পলাশকে পুড়িয়ে মারা হয়েছে?

শিতাংশু গুহ নিউইয়র্ক।।

অভিযোগ উঠেছে, এডভোকেট পলাশ কুমার রায়-কে পঞ্চগড় জেল কারাগারে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকে জেলে নিয়ে পুড়িয়ে মারা হয়? মৃত্যুর আগে পলাশ নিজে বলে গিয়েছেন: “২৬ এপ্রিল শুক্রবার আনুমানিক সকাল ১০টার দিকে দু’জন লোক টাইগার পানীয় বোতল থেকে কি যেন আমার শরীরে ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয়। এই অপরাধীর বিচার চাই”। এ অভিযোগ নিহত পলাশের পরিবারের। পলাশের মা মীরা রানী রায় পুত্র হত্যার বিচার চেয়েছেন। তিনি বলেছেন, তার পুত্রকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। বাংলাভিশন টেলিভিশনে সংবাদটি এসেছে। বেশ ক’টি ইন্টারনেট মিডিয়ায় এসেছে। প্রিন্ট মিডিয়া বা অন্য টিভিতে কেন আসেনি সেই প্রশ্ন অবান্তর। প্রধানমন্ত্রী মুখ খুললে সকল মিডিয়ায় আসবে। এই ঘটনার সাথে নাসরিনকে পুড়িয়ে মারার ঘটনার মিল আছে। তবে এটি আরো জঘন্য, কারণ ঘটনা ঘটেছে জেলখানার অভ্যন্তরে।

১৯৭৫ সালে জেলখানায় চার জাতীয় নেতাকে হত্যার পর ২০১৯ সালের ২৬শে এপ্রিল আবারো জেলখানায় একটি বর্বরতম হত্যাকান্ড ঘটলো। পঁচাত্তরের জেলহত্যা নিয়ে জাতি সোচ্চার ছিলো, পলাশ হত্যা নিয়ে জাতি নীরব। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন, ঘটনার তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। অভিযোগ আছে, পলাশ নাকি কোন এক সভায় প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে বক্তব্য রেখেছিলেন। কে এই পলাশ? পলাশ কুমার রায় ছিলেন হিন্দু ছাত্র মহাজোটের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক। বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতনের বিরুদ্ধে তিনি সোচ্চার ছিলেন। কিন্তু এসব তো তাকে পুড়িয়ে মারার কারণ হতে পারেনা? পলাশের বাবা প্রণব কুমার রায় থানা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার। পলাশ বাংলাদেশ বার কাউন্সিল তালিকাভুক্ত। দেশে এই নিয়ে মিডিয়া তেমন সরব না হলেও কলকাতার দৈনিক যুগশঙ্খ ব্যানার হেডিং করেছে। যুগশঙ্খ বলেছে, পুলিশ সুপার কথা বলতে চাননি।

জেল কর্তৃপক্ষ জানেনা কিভাবে আগুন লেগেছে? আগুন লাগলো, একজন মানুষের শরীরের বেশিরভাগ অংশ পুড়ে গেলো, কারা কর্তৃপক্ষ কিছুই টের পেলেন না? পলাশ মরার আগে তিনজনের নাম বলে গেছেন, এরা হলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের যুগ্ন-সচিব জাহাঙ্গীর আলম, কোহিনুর কেমিক্যালের ম্যানেজিং ডিরেক্টর মোহাম্মদ রেজাউল করিম এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব অজিত কুমার পাল। পলাশ কিছুকাল কোহিনুর কেমিক্যালে আইনী কর্মকর্তা হিসাবে কাজ করেছেন। সেখানে কর্তৃপক্ষের সাথে তাঁর ঝামেলা হয়। কর্তৃপক্ষ মামলা করে। পলাশ ও তার পরিবার মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবীতে ২৫শে মার্চ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অনশন এবং শের-ই-বাংলা পার্কের সামনে মানববন্ধন করে। বলা হচ্ছে, এর কোন একটি সভায় নাকি তিনি প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে বক্তব্য রেখেছেন। একই দিন তিনি গ্রেফতার হন?

বাংলা নওয়াজ ২৪ জানায়, ব্যারিষ্টার সাইদুল হক সুমন সুপ্রীমকোর্টে রীট করেছেন। সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতি বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবী করেছে। নাসরিনের ঘটনায় যাঁরা সোচ্চার ছিলেন তারা এখন মুখে কুলুপ এঁটেছেন। মানবাধিকার সংস্থাগুলো ঘুমিয়ে আছে? হিন্দু সংগঠনগুলো মানববন্ধন আর বিবৃতি দিয়ে তাদের কর্তব্য শেষ করেছে। এই ন্যাক্কারজনক ঘটনা বাংলাদেশের ইতিহাসে এই জঘন্যতম অধ্যায়। দেশে মানুষের বিবেক কি মরে গেছে? পলাশ রায় আওয়ামী লীগ করতেন। তিনি আটোয়ারী উপজেলার ভাইস-চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ছিলেন। তার মা একই উপজেলার আওয়ামী লীগের ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। পঁচিশে মার্চ পলাশ রায়কে একটি মামলায় আটক করা হয়, এক মাস তিনি জেলে। ২৬ এপ্রিল জেলের ভেতরে তার গায়ে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়? তাঁর পরিবারকে কিছুই জানানো হয়নি। পহেলা মে তিনি মারা যাবার পূর্বক্ষণে জেল কর্তৃপক্ষ তার মা-কে জানায়। পলাশ তার মা-কে শেষ কথা বলে গেছে, বিচার চেয়ে গেছে। বিচার কি পলাশ পাবে? কারা এর পেছনে? কারণ কি এই জঘন্য হত্যাকাণ্ডের? এসব উদ্ঘাটন না হলে এর খেসারত একদিন জাতিকে দিতে হবে বটে? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি কথা বলুন, জাতি আপনার কথা শুনতে চায়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কথা মিডিয়ায় এসেছে, তবে তা যথেষ্ট নয়, তিনি দায় এড়াতে পারেন না?

একজন এডভোকেটকে খুন হলো, অন্যরা যতটা সোচ্চার হবার কথা তা হচ্ছেন না কেন? এর অন্তর্নিহিত কারণ কি ভয় বা পলাশ হিন্দু বলে? হিন্দু না হলে কি পলাশ এভাবে মরতো? নাসরিনের ঘটনায় আমরা হুজুরকে কষে গালাগাল দিয়েছি, পলাশের ঘটনায় হত্যাকারীদের কি আমরা স্যালুট জানাবো? পলাশ চোর-ডাকাত-ধর্ষক-জামাত-বিএনপি কিছুই নন, তবু কেন তাকে এ অপঘাতে মরতে হলো? জেলের ভেতরে ঘটনার দায়িত্ব কি জেল কর্তৃপক্ষ নেবে না? দেশে কি প্রধানমন্ত্রী ব্যাতিত আর দায়িত্বশীল কোন কর্তৃপক্ষ নাই? দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, মনুষ্যত্ব কি হারিয়ে যাচ্ছে? সমাজ পিছিয়ে যাচ্ছে? আমরা কোথায় যাচ্ছি? দেশ কোথায় যাচ্ছে? মাহে রমজান শুরু হয়েছে। পবিত্র এই মাসে মানবিক কারণে জাতি নাসরিন ও পলাশ হত্যার বিচার চায়। হত্যার বিচার না চাইলে আমরা কি বিবেকের কাছে জিন্মী হয়ে যাবোনা? কে যেন বলেছিলেন, ‘অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে—’।