
বিশেষ প্রতিবেদক।।
নৌপরিবহন অধিদপ্তরের ইনল্যান্ড ড্রাইভারশীপ পরীক্ষায় ভয়াবহ দুর্নীতি ধরা পড়েছে। বিস্ময়কারভাবে ২য় শ্রেণীর ২ জন প্রার্থী পরীক্ষায় স্বশরীরে অংশ গ্রহন না করেও কৃতকার্য হয়েছেন। তাদের পক্ষে প্রক্সি পরীক্ষা দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। ওই ২জন প্রার্থী পরীক্ষার সময় ভারতে অবস্থান করছিলেন বলে তথ্য পাওয়াগেছে। এখানেই শেষ নয়, সীমাহীন দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে পরীক্ষার ৪ দিন পর স্পেশাল ভাবে ৩জন পরীক্ষার্থীর পরীক্ষা গ্রহন করে তাদেরকে পাশ করিয়ে ফল প্রকাশ করা হয়েছে । প্রধান প্রকৌশলী মন্জুরুল কবীর তার অনুগত দালাল চক্রের মাধ্যমে এই ৩ জন পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে ৩ লক্ষ টাকা উৎকোচ নিয়েছেন এমন অভিযোগ উঠেছে।
এঘটনার বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেয়ে নৌ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে গত ১৯ ফেব্র“য়ারি ২০১৯ইং উপ সচিব মো: মনিরুজ্জামান মিয়াকে আহবায়ক করে ১ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। যার স্মারক নং১৮.০০.০০০০.০২৪.৩৭.০০১.১৮.৮১। বিষয়টি নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অবগত হলে তিনিও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। যে কমিটির আহবায়ক ছিলেন অধিদপ্তরের মেরিণ নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট বদরুল হাসান লিটন । কিন্তু কোন কারণ ছাড়াই উক্ত কমিটি বিলুপ্ত করে নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের একটি প্রকল্পের ডেপুটি চীফ নটিক্যাল সার্ভেয়ার ক্যাপ্টেন মো: সাদিক মিয়াকে আহবায়ক ও মুখ্য পরিদর্শক মো: শফিকুর রহমানকে সদস্য করে ২ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন । গত ২৪ ফেব্র“য়ারি ২০১৯ এই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। যার স্মারক নং আই.এস.এন নং ৭ (২৪৩) আই এস পরীক্ষা ২০১৩/১২৬৩ ।
অভিযোগসুত্রে জানাগেছে,গত ২০ জানুয়ারি ২০১৯ নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের ইনল্যান্ড ২য় শ্রেণীর ড্রাইভারশীপ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এই পরীক্ষায় প্রক্সি পরীক্ষা দিতে এসে অধিদপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটের হাতে ১৭ জন জাল পরীক্ষার্থী আটক হন। বিধি মোতাবেক এই ১৭ জন জাল পরীক্ষার্থীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন না করে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে তাদের কাছ থেকে কেবল মুচলিকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। এখানেই শেষ নয়, এই ১৭ জন জাল পরীক্ষার্থীর মধ্য থেকে ৩ জন পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে,মোটা অংকের টাকা উৎকোচ নিয়ে প্রধান প্রকৌশলীর একক সিদ্ধান্তে পরীক্ষার ৪ দিন পর ২৪ তারিখে অতি গোপনে তাদের স্পেশাল পরীক্ষা নিয়ে পাশ করিয়ে দেওয়া হয়। যাদের রোল নং ০৫১, ০৫২ও ০৫৮। এটি নৌ পরিবহন অধিদপ্তরে একটি নজিরবিহিন ঘটনা। আর ঘটনার মুখ্য ভূমিকা পালন করেন প্রধান প্রকৌশলী ও ইনল্যান্ড ড্রাইভারশীপ পরীক্ষক বোর্ডের চেয়ারম্যান মো: মন্জুরুল কবীর।
বিষয়টি জানারপর গত ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবরে জনৈক সাদিবুল ইসলাম লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগটি আমলে নিয়ে সচিব মহোদয় মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মো: মনিরুজ্জামান মিয়াকে তদন্ত করার নির্দেশ দেন। এখবর জানতে পেরে নৌ পরিবহন অধিদপ্তরও ২ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে। ৫ কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত শেষ করার বাধ্যবাধকতা থাকলেও অধিদপ্তরের তদন্ত কমিটি ৩ মাসেও তদন্ত কার্য সম্পন্ন করতে পারেনি। এ বিষয়ে কথা বললে তদন্ত কমিটির আহবায়ক ক্যাপ্টেন মো: সাদিক মিয়া বলেন, আমি কিছুদিন বিদেশে থাকায় থাকায় তদন্ত কার্য সম্পন্ন করতে পারিনি তবে তদন্ত কার্যক্রম চলমান আছে।তদন্ত শেষ করতে আর কত দিন লাগবে? এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন-সেটা এখনি বলতে পারছি না।
্এ দিকে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে গঠিত ১ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটির প্রধান উপসচিব মো: মনিরুজ্জামান মিয়াও অদ্যাবধি তদন্ত কার্য শুরু করেন নি। এ বিষয়ে কথা বললে তিনি বলেন, আমি বিদেশে থাকায় তদন্তে বিলম্বে হয়েছে তবে ইদের পরে এক দিবসেই কাজ শেষ করব ইনশাল্লাহ। ২ টি তদন্ত কমিটির এই ভূমিকায় এটাই প্রতীয়মান হচ্ছে যে, তারা সকলেই ম্যানেজ হয়ে গেছেন। ফলে আজ অব্দি তদন্ত কাজই শুরু হয়নি। অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার জোর প্রচেষ্টা চলছে। অভিযোগটি দুর্নীতি দমন কমিশনেও জমা পড়েছে।
অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রধান প্রকৌশলী মো: মন্জুরুল কবীর বলেন, পরীক্ষায় কোন অনিয়ম -দুর্নীতি হয়নি। যা কিছূ করা হয়েছে তা বিধি বিধান মেনেই মহাপরিচালকের নির্দেশে করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির বিষয়ে তিনি অবগত আছেন বলেও জানান।
এ বিষয়ে অভিযোগকারী মো: সাদিবুল ইসলামের সাথে কথা বললে তিনি বলেন,এতবড় একটা দুর্নীতির বিষয়ে অভিযোগ করেও তিনি কোন প্রতিকার পাচ্ছেন না। তাহলে প্রধান মন্ত্রীর ঘোষিত দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি কেমনে বাস্তবায়ন হবে? দীর্ঘ ৩ মাসেও তদন্ত কমিটি কেন কাজ শুরু করেনি সেটাও তিনি জানতে চান। বিষয়টিতে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নৌ প্রতিমন্ত্রীর পদক্ষেপ কামনা করেন।