কমিশনারের নেতৃত্বে বর্ডার বাজার পুকুরটি রাতের অন্ধকারে ভরাট হচ্ছে

১ জুলাই, ২০১৯ : ৬:৫২ পূর্বাহ্ণ ৪৬০

 

ব্রাক্ষণবাড়িয়া।।

অদৃশ্য ক্ষমতার প্রভাবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের আওতাভুক্ত শতাধিক বছরের পুরনো বর্ডার বাজার পুকুরটি সংঘবদ্ধ একটি ভূমিদস্যু সিন্ডিকেট রাতের অন্ধকারে মাটি ফেলে ভরাট করে যাচ্ছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এমন ভূমিদস্যু চক্রের দৃষ্টি যেখানে পড়ছে সেখানেই হার মানছে নিয়ম বিধিবিধান বা দেশের প্রচলিত আইন। আইনের তোয়াক্কা না করে এমন সিন্ডিকেটের সদস্যরা গিলে খাচ্ছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার ঐতিহ্যবাহী পুকুরগুলো।

২৯ জুন শনিবার সরেজমিন অনুসন্ধানে বর্ডার বাজার পুকুরটি ভরাটের নানা আয়োজন লক্ষ্য করা গেছে। ইতিমধ্যে পুকুরটির পূর্ব ও পশ্চিম পাড়ের বেশ কিছু অংশ মাটি ফেলে ভরাট করে ফেলেছে এ চক্রটি। জানা গেছে, রাত ১২টার পর থেকেে শুরু হয়ে ভোর পাঁচটা পর্যন্ত চলে পুকুর ভরাটের কাজ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বর্ডার বাজারের কয়েকজন দোকান মালিক বলেন, স্হানীয় কমিশনারের নেতৃত্বেই চলছে এ পুকুর ভরাটের কাজ। দিনে নয়, রাতের বেলাতেই তারা বড় ট্রাক্টর দিয়ে মাটি ফেলে পুকুর ভরাট করছে। স্থানীয় লোকজন বাঁধা দিলেও এরা কারো কথাই কানে নিচ্ছেনা। পুকুর মালিকরা বলছে আমার পুকুর আমি ভরাট করবো তাতে কার কি। বর্ডার বাজার পুকুর নামে পরিচিত এ পুকুরটি সাধারণ মানুষের জন্য বেশ উপকারী ছিলো। পুকুরটি ভরাট হয়ে গেলে মানুষের অপূরণীয় ক্ষতি হবে বলেও তারা জানান।

পুকুর মালিক পক্ষের কয়েকজনকে পুকুর পাড়ে পাওয়া গেলেও পুকুর ভরাটের কারণ হিসেবে তারা কোনো প্রকার সদুত্তর দিতে পারেননি। তারা অনেক প্রশ্নেরই উত্তর কৌশলে এঁড়িয়ে যান। তাদের ব্যক্তি মালিকানার পুকুর তারা ভরাট করবে তাতে কার কি? এমন প্রশ্নও করেন মালিক পক্ষের একজন। তাদের নাম জানতে চাইলে তা-ও বলেননি উপস্থিত মালিক পক্ষের কেউ।

এ বিষয়ে ওয়ার্ড কমিশনার আলী আহসান মোঃ কাউসার তার নেতৃত্বে পুকুর ভরাটের অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, মালিকপক্ষের লোকজনই এ পুকুরটি ভরাট করছে। এটা একটি পরিত্যক্ত পুকুর। বাড়ি ঘরের ময়লা আবর্জনা ফেলে এই পুকুরে। ফলে চারপাশে দূর্ঘন্ধ ছড়ায়। আমার অফিসও আছে এই পুকুর পাড়। দূর্গন্ধের কারণে অফিসে বসা কষ্টকর হয়ে যায়। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি পুকুর ভরাটে মালিক পক্ষকে বাঁধা দিইনাই। আমি সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাউকে জানাইনাই। কারণ, এর আগেও আমার এলাকায় কয়েকটা পুকুর ভরাট হইছে। বাঁধা দিয়েও সুফল পাইনাই। তাই এ পুকুর ভরাটেও তাদের বাঁধা দিইনাই।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার পণ্কজ বড়ুয়া বলেন, মাননীয় প্রধাণমন্ত্রীর সুস্পষ্ট নির্দেশনা আছে পুকুর ও জলাধার সংরক্ষণ করতে হবে। কোনো অবস্থাতেই জলাধার ভরাট করা যাবেনা। আমরা অবশ্যই এ ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার মেয়র নায়ার কবির বলেন, বর্ডার বাজার পুকুরটি ভরাট করতে শুনেছি। তবে, কে বা কারা করছে তা আমার জানা নেই। যেহেতু পুকুর ভরাট করা একদম নিষিদ্ধ। তাই খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া পরিবেশ অধিদপ্তরের রিসার্চ অফিসার রুনায়েত আমিন রেজা বলেন, পুকুর-দীঘি ভরাট করার নিয়ম নেই কোনভাবেই। অনুমতি ছাড়া পুকুর ভরাট করা আইন বহির্ভুত। আইন অমান্য করে পুকুর ভরাট করলে অবশ্যই জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। এই পুকুর ভরাটকারীদের বিরুদ্ধে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ সংশোধিত ২০১০ এর ৬(ঙ) ধারায় মামলা চলমান আছে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য হতে জানা যায়, বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫-এর ৬ (ঙ) ও সংশোধনী-২০১০-এর ৬ (খ) ধারা অনুযায়ী, জলাধার হিসেবে চিহ্নিত জায়গা ভরাট বা অন্য কোনোভাবে পরিবর্তন করা যাবে না। পুকুর বা জলাধার ভরাটের প্রমাণ পাওয়া গেলে প্রথমবারের জন্য ২ বছর কারাদণ্ড ও ২ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। এছাড়া পরবর্তী প্রতিটি অপরাধের ক্ষেত্রে ১০ বছরের কারাদণ্ড ও ২ থেকে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। তবে অপরিহার্য জাতীয় স্বার্থের বিবেচনায় ছাড়পত্র গ্রহণসাপেক্ষে এসব বিধিনিষেধ শিথিল করা সম্ভব।

[gs-fb-comments]
Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com