
ব্রাক্ষণবাড়িয়া।।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব শ্রী শ্রী জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা উৎসব গত বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে। আগামী ১২ জুলাই উল্টো রথযাত্রার মধ্য দিয়ে এ উৎসব শেষ হবে।
এ উপলক্ষে বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠন এবং মন্দির নানা মাঙ্গলিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আন্তর্জাতিক কৃষ্ণ ভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) রথ যাত্রা উপলক্ষে নয় দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস জগন্নাথদেব হলেন জগতের নাথ বা অধীশ্বর। জগত হচ্ছে বিশ্ব আর নাথ হচ্ছেন ঈশ্বর। তাই জগন্নাথ হচ্ছে জগতের ঈশ্বর। তাঁর অনুগ্রহ পেলে মানুষের মুক্তিলাভ হয়। জীব রূপে তাঁকে আর জন্ম নিতে হয় না। এ বিশ্বাস থেকেই রথের ওপর জগন্নাথ দেবের প্রতিমা রেখে রথযাত্রা করেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।
সকালে বিভিন্ন মাঙ্গলিক আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে শুরু হয় রথযাত্রার অনুষ্ঠান মালা। এর মধ্যে ছিল হরিনাম সংকীর্তন, বিশ্ব শান্তি ও মঙ্গল কামানায় অগ্নিহোত্র যজ্ঞ, মহাপ্রসাদ বিতরণ, আলোচনা সভা, পদাবলী কীর্তন, আরতি কীর্তন, ভাগবত কথা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শ্রীমদ্ভাগবত গীতা পাঠসহ বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি।
আন্তর্জাতিক কৃষ্ণ ভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) এর আয়োজনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার মধ্যপাড়ায় শ্রী শ্রী রাধামাধব মন্দিরে বিশ্ব শান্তি ও মঙ্গল কামনায় অগ্নিহোত্র যজ্ঞের মাধ্যমে রথ উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু করে।
গত বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টায় শ্রী শ্রী জগন্নাথ, বলদেব ও সুভদ্রা মহারাণীর রথযাত্রা মহোৎসব-২০১৯ এর উদ্বোধনী অনুুষ্ঠান ও আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি র. আ. ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি।
রথযাত্রা উদযাপন পরিষদ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সভাপতি সুভাষ চন্দ্র পালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ও সাবেক পৌর চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আল মামুন সরকার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) রেজাউল কবির, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার পঙ্কজ বড়ুয়া, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ট্রাস্টি শ্যামল ভট্টাচার্য্য, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এড. মাহবুবুল আলম খোকন। ব্রাক্ষণবাড়িয়া রিপোর্টার্স ক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রবীর চৌধুরী রিপনের সঞ্চালনায় এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেলা হিন্দু বৌদ্ব খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি দিলীপ কুমার নাগ, জেলা পুজা উদযাপন পরিষদের সাধারন সম্পদাক ও রথযাত্রা উদযাপন পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক পরিতোষ,জেলা আওয়ামীলীগ নেতা খোকন কান্তি আচার্য্য,হাজী মাহমুদুল হক ভূইয়া,স্বপন কুমার রায়,রাধা মাধব মন্দির কমিটির সভাপতি তাপস কুমার পাল, মানবর্দ্ধন পাল, প্রবীর দাস, প্রহল্লাদ পাল, চৈতন্য দাস প্রমুখ।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে র. আ. ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি বলেন, হিংসা বিদ্বেষ পরিহার করে দেশ ও মানুষের কল্যানে আমাদের কাজ করতে হবে। ধর্ম যার যার উৎসব সবার। কেননা প্রতিটি ধর্মে বলা আছে ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে নেই। ধর্মের প্রতি আনুগত্য ও বিশ্বাস রেখেই প্রতিটি ধর্মের মানুষ ধর্ম পালনে এগিয়ে যেতে হবে। তিনি আরো বলেন, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ যাতে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে সেজন্য সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমরা অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী। আমরা জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সবাই সোচ্চার। এই বাংলাদেশে কেউ যাতে সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প ছড়াতে না পারে এবং জঙ্গিবাদ যেনো আমাদের দেশে মাথাচাড়া দিতে না পারে সে জন্য সকলের সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।
পরে শহরের মধ্যপাড়ায় শ্রী শ্রী রাধামাধব মন্দির থেকে বর্ণাঢ্য সাজে তিনটি বিশাল রথে জগন্নাথ দেব, শুভদ্রা ও বলরামের প্রতিকৃতিসহ শোভাযাত্রা বের হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে শ্রী শ্রী আনন্দময়ী কালিবাড়ীতে এসে শেষ হয়।