
ঢাকা।।
চলমান ক্যাসিনো ও দুর্নীতিবিরোধী অভিযান অব্যাহত থাকবে। এ অভিযানের আওতায় আসা ব্যক্তিদের তালিকা আরো দীর্ঘ হচ্ছে। এরমধ্যে অন্তত ছয় জন এমপি ও সাবেক কয়েকজন এমপি, মন্ত্রীও রয়েছেন। রয়েছেন, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণের ১৭ জন কাউন্সিলর। সংসদ সদস্য ছাড়া অন্যরা আত্মগোপনে রয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে লাগামহীন অভিযোগ রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের কাছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি , জবর-দখল, অবৈধ হাট-বাজার বসানো ও ক্যাসিনো বাণিজ্যে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। ইতিমধ্যে গ্রেপ্তারকৃতদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে মাঠ পর্যায় থেকে তথ্য উদঘাটন করছেন গোয়েন্দারা।
সবকিছু মিলিয়ে চলমান এই অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন দায়িত্বশীলরা। ক্যাসিনো বিরোধী অভিযানের পর থেকেই আত্মগোপনে রয়েছেন ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণের অনেক কাউন্সিলর। বাসায় গিয়ে তাদের খোঁজ করলে বলা হচ্ছে অফিসে। অফিসে গিয়েও পাওয়া যাচ্ছে না। দলীয় নেতাকর্মী, অনুসারীরাও বলতে পারছেন না তারা কোথায় আছেন।
সিটি করপোরেশনমুখিও হচ্ছেন না তারা। ফোনে কল দিয়েও পাওয়া যাচ্ছে না তাদের। সূত্রে জানা গেছে, গত ২০শে অক্টোবর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বোর্ড মিটিংয়ে ১০০ কাউন্সিলরের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ৮৬ জন। কম উপস্থিতির জন্য চলমান অভিযানকেই কারণ হিসেবে দেখছেন সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। ১৮ই সেপ্টেম্বর অভিযান শুরুর পর থেকেই আত্মগোপনে চলে যান ঢাকা দক্ষিণ সিটির কাউন্সিলর এ কে এম মমিনুল হক সাঈদ। শেষ পর্যন্ত কাউন্সিলর পদ থেকে অপসারণ করা হয়েছে তাকে। ঢাকার অপরাধ জগতের বাদশা সম্রাটের ঘনিষ্ঠ সাঈদ পরিচালনা করতেন ক্যাসিনো ব্যবসা। মতিঝিল এলাকায় জবর, দখল, চাঁদাবাজি করে রাতারাতি আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন যুবলীগের এই নেতা। মতিঝিলকেন্দ্রিক আরো বেশ কয়েকজন কাউন্সিলর বর্তমানে আত্মগোপনে রয়েছেন।
ইতিমধ্যে ঢাকা উত্তর সিটির কাউন্সির হাবিবুর রহমান মিজান, তারেকুজ্জামান রাজীবকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে জবর, দখল, মাদক ও চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও ক্যাসিনো ব্যবসায় জড়িত ছিলেন হাবিবুর রহমান মিজান। উত্তর সিটির আরো কয়েকজন কাউন্সিলরও বর্তমানে আত্মগোপনে রয়েছেন। তাদের ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
অভিযানের এই তালিকায় রয়েছে বর্তমান সংসদের অন্তত ছয় সংসদ সদস্যের নাম। এরমধ্যে যুবলীগ নেতা নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন এমপি, সরকারদীয় হুইপ শামসুল হক চৌধুরী ও মোয়াজ্জেম হোসেন রতন এমপির বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তাদের বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগ রয়েছে। একইভাবে নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য ও ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. নজরুল ইসলাম বাবুর ব্যাংক হিসাবসহ সব সম্পদের তথ্য চেয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থার এই তালিকায় রয়েছেন, বরিশালের একজন বহুল আলোচিত সংসদ সদস্য, যিনি বরিশালের বরগুনার একটি চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডে আলোচনায় আসেন। রয়েছেন ঢাকার মিরপুর এলাকা থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য। জবর-দখল, চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। একইভাবে যুবলীগের সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা আবু কাওছার ও সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ দেবনাথ এমপি রয়েছেন আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারিতে। এছাড়াও যুবলীগের অন্তত দুই ডজন নেতার আমলনামা রয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে। এসব বিষয়ে র্যাব-১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সারওয়ার-বিন-কাশেম বলেন, অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ইতিমধ্যে গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ অনেক তথ্য পাওয়া গেছে। এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। জড়িতরা নজরদারিতে রয়েছে। অপরাধী কাউকে ছাড় দেয়া হবে না বলে জানান তিনি।