ব্রাক্ষনবাড়িয়া।।
কসবায় ট্রেন দুর্ঘটনায় আহত নাজমা আক্তার। ভেঙে গেছে তার বাঁ পায়ের হাঁড়। প্রচণ্ড ব্যথা। কিন্তু এ ব্যথা যেন তার কাছে কিছুই নয়। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে পাহাড়সম কষ্ট যেন নাজমার বুকে ভর করেছে। সে কষ্ট দুই বছর দুই মাস বয়সী শিশু কন্যা আদিবা আক্তার ছোঁয়াকে হারানোর। মায়ের আগে মেয়ে চলে যাওয়ার বিষয়টি কিছুতেই স্বাভাবিকভাবে নিতে পারছেন না নাজমা। শুধু নাজমা নন। রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক্স হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে (পঙ্গু হাসপাতাল) চিকিৎসা নিচ্ছেন নাজমার স্বামী সোহেল।
তিনিও গুরুতর আহত। চিকিৎসা নিচ্ছে তাদের পাঁচ বছরের ছেলে নাফিজও। শুধু এই পরিবারই নয় আরও একটি পরিবারের চার সদস্য চিকিৎসা নিচ্ছেন এ হাসপাতালে। ওই পরিবারের এক সদস্য মারা গেছেন দুর্ঘটনায়।
নাজমা বলেন, অনেক শান্ত ছিল আমার মেয়েটি, কিছু পেলেই অনেক খুশি হতো। শান্ত স্বভাবের বলে সবাই তাকে আদর করতো। দুই ছেলেমেয়ে আর স্বামী সংসার নিয়ে অনেক সুখে ছিলাম। ট্রেন দুর্ঘটনা আমার মেয়েকে কেড়ে নিয়েছে। মরার আগে শক্ত করে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরেও মেয়েকে বাঁচাতে পারিনি। তিনি জানান, স্বামী স্ত্রীসহ দুই ছেলে মেয়ের সংসার নাজমার। চট্টগ্রামে দুটি পৃথক পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন তারা। গার্মেন্টে থাকাকালীন নাজমার মা-ই সোহা ও তার ভাইকে দেখভাল করতেন। সেদিন কি হয়েছিল জানতে চাইলে নাজমা বলেন, হবিগঞ্জে বেড়ানো শেষে পরিবারের সবাই রাত সাড়ে বারোটার ট্রেনে ওঠেন শায়েস্তাগঞ্জ থেকে। রাত তিনটার দিকে হঠাৎ সব অন্ধকার হয়ে যায়। আর বিকট শব্দ। ট্রেনের বগি ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। ওই সময়ও মেয়ে ছোঁয়াকে বুকের মধ্যে শক্ত করে জড়িয়ে রাখি।
কিছুক্ষণ পর দেখি তার শরীর অর্ধেক চাপা পড়ে গেছে। এ সময় বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করতে থাকি। এরপর আর কিছু মনে নেই। পরে শুনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একটি হাসপাতালে মারা যায় আমার মেয়ে। একই হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন নাজমার চার বছর বয়সী ছেলে নাফিজুল হক নাফিজ। দুর্ঘটনায় বেঁচে যায় এই শিশুটি। ডান হাতে বাঁধা ব্যান্ডেজ নিয়ে একবার মায়ের বিছানায় আরেকবার বাবার পাশে বসে সময় কাটছে তার। নাজমার পরিবার ছাড়াও পঙ্গু হাসপাতালে এসেছে ভয়াবহ দুর্ঘটনার শিকার আরো একটি পরিবার। যাদের পাঁচজনই ব্রাহ্মণবাড়িয়া ট্র্যাজেডিতে আক্রান্ত। মাত্র পাঁচদিন আগেই স্বামীকে হারান জাহেদা খাতুন। আর এই দুর্ঘটনায় স্বামীর কাছে পরপারে চলে যান তিনিও। ট্রেন দুর্ঘটনায় আহত জাহেদার পরিবারের বাকি সদস্যরা হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছেন। আছেন মা সুরাইয়া খাতুন ও জাহেদার তিন সন্তান। পঙ্গু হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে সুরাইয়া খাতুন বলছিলেন, তার বাড়ি আখাউড়া। মেয়ে জাহেদা খাতুনের বিয়ে হয়েছিল মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার গাজীপুর এলাকার রামনগরের মুসলিম মিয়ার সঙ্গে। চট্টগ্রামে জাহাজ কাটা শিল্পে কাজ করতেন তিনি। চাকরি সূত্রে বাস করতেন চট্টগ্রামের পাহাড়তলীতে। মুসলিম মিয়া পাঁচদিন আগেই মারা যান। সে কারণেই মা সুরাইয়া খাতুন ও সন্তানদের নিয়ে শ্রীমঙ্গল গিয়েছিলেন জাহেদা খাতুন। সেখানে মুসলিম মিয়ার দাফন শেষে সোমবার রাতে সিলেট থেকে চট্টগ্রামগামী উদয়ন এক্সপ্রেসে রওনা দেন তারা।
[gs-fb-comments]Copyright © 2023 Amaderkatha | Design & Developed By: Design Ghor