
বিজয়নগর।।
শেষ পর্যন্ত বিজয়নগর আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব তুলে দেয়া হয়েছে পুরনোদের হাতেই। শনিবার জেলা আওয়ামী লীগের সভায় কমিটি ঘোষণার পর এ নিয়ে প্রতিক্রিয়াও হয়েছে। আবারো সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পাওয়া এডভোকেট তানভীর ভূঁইয়া নৌকা বিরোধীকে পদ দেয়ায় প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সদরের সংসদ সদস্য র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীও এ নিয়ে তার অসন্তোষ প্রকাশ করেন। নৌকা বিরোধীদের পদ না দেয়ার অবস্থান থেকে সরে আসতে হওয়ায় ক্ষমা প্রার্থনা করেন তিনি। জেলা আওয়ামী লীগের ওই সভায় সদর উপজেলার কমিটিও ঘোষণা করা হয়। যুদ্ধাপরাধীর সন্তান হওয়ায় সরাইল আওয়ামী লীগের এক সদস্যের বহিষ্কারের দাবি জানানো হয় সভায়। নৌকা রিরোধীরা জেলা আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতার আশপাশে থাকে বলেও জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা মন্তব্য করেন।
তবে সার্কিট হাউজে অনুষ্ঠিত ওই সভায় বিজয়নগর কমিটি নিয়েই কথাবার্তা হয়েছে বেশি।
তানভীর বিজয়নগর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী ছিলেন। ওই নির্বাচনে উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি জহিরুল ইসলাম ভূঁইয়া তার বিরোধিতা করেছেন, এই অভিযোগ করে আসছেন তিনি নির্বাচনের পর থেকেই। জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছেও জহিরুলের বিরুদ্ধে নালিশ করেন তিনি। নির্বাচনের প্রায় ৩ মাস পর বিজয়নগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে দাঁড়িয়ে মোকতাদির চৌধুরী ঘোষণা দেন নৌকা বিরোধীদের পদ না দেয়ার। দু’মাসের বেশি সময় পর শনিবার পুরনোদের স্বপদে রেখে বিজয়নগরের কমিটি ঘোষণার পর জেলা আওয়ামী লীগের অনেকেই তাজ্জব হন। জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার কমিটি ঘোষণা করার পরপরই তানভীর ভূঁইয়া দাঁড়িয়ে তার প্রতিক্রিয়া জানান। তানভীর বক্তৃতা করার সময় জেলা আওয়ামী লীগ সদস্যরা তাকে টেবিল চাপড়ে সমর্থন দেন। তানভীর ভূঁইয়া জানান- আমি বলেছি রবিউল ভাই ওইদিন সম্মেলনে যে বক্তৃতা দিয়েছেন সেই ভিডিও রেকর্ডের ২৬ হাজার কপি হয়েছে। তিনি জহিরের নাম উল্লেখ না করে বলেন- তার কেন্দ্রে ১৮শ’ ভোট। কিন্তু আমি পেয়েছি ৯১ ভোট। সভায় তানভীর ভূইয়া আরো জানান- নির্বাচনের দিন বিকাল বেলা তার (জহিরুল) এলাকার ওপর দিয়ে আমি যখন শহরের দিকে আসি তখন তার ভাই-ভাতিজারা আমার গাড়িতে পাথর ছুঁড়ে। নির্বাচনকালীন একমাস ঘোড়ার ষ্টিকার লাগানো একটি গাড়ি তার শহরের বাসার সামনে দাঁড়ানো থাকতো। প্রচারণা চালাতে তার গ্রামে আমাকে ঢুকতে দেয়া হয়নি। নির্বাচনে বিরোধিতার এ সব আলামতের উল্লেখ করে সভায় প্রশ্ন রাখি তাহলে তিনি কিভাবে আওয়ামী লীগ সভাপতির যোগ্য হন। এরপরই র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী তার বক্তব্যে বলেন- তানভীর তুমি যে অভিযোগ করেছো তার সবই সত্য। তোমাকে যে ফেল করাইছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। রাজনীতির কারণে অনেক সময় বিষও খেতে হয়। দেখতে পারি না এ সব লোকজনকে নিয়ে চলতে হয়। এদের হায়া লজ্জা বলতে কোনো কিছু নেই। এগুলো পাপ করে কিন্তু পাপবোধ নেই।
কতোবার যে সামনে থেকে সরিয়ে দিয়েছি তারপরও সামনে এসে বসে থাকে। তানভীর ভূঁইয়া বলেন- রবিউল ভাই আরো বলেছেন- আমি এখন পারলাম না। আমি এখন পর্যন্ত তাকে কমিটিতে রাখতে ইচ্ছুক না। তিনি আকার-ইঙ্গিতে বুঝিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল এক নেতার কারণে তিনি তার কথা রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন। তবে পুরো সভায় জহিরুল ইসলাম ভূঁইয়া ছিলেন নীরব। তিনি তানভীরের অভিযোগের কোনো প্রতিবাদ করেননি। সভায় জেলা আওয়ামী লীগের অর্থ বিষয়ক সম্পাদক হাজী মো. মহসীন দলের শীর্ষ এক নেতাকে লক্ষ্য করে বলেন- নৌকা বিরোধীরা আপনার আশপাশেই থাকে। তাদেরকে আপনি কিছু বলেন না। জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল হান্নান রতন- যুদ্ধাপরাধীর ছেলেকে সরাইল আওয়ামী লীগের সদস্যপদ থেকে বহিষ্কার করার দাবি জানান। বলেন, তার পিতা শান্তি কমিটির সভাপতি ফয়েজ আহমেদ খন্দকার। রতন এ বিষয়ে তার বক্তৃতায় বলেন- আমি প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি সে একজন যুদ্ধাপরাধী পরিবারের সন্তান। কারণ যুদ্ধাপরাধী পরিবারের কোনো সন্তান আওয়ামী লীগ করতে পারবে না সেটা দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দু’জনেই বলেছেন। সভায় সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটিও ঘোষণা করা হয়। এখানে সভাপতি করা হয়েছে আবুল কালাম ভূঁইয়াকে আর সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে এমএইচ মাহবুব আলমকে।