
রিপন চৌধূরী।।
বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের তাত্ত্বিক নির্মাতা, সারা বিশ্বের শ্রমিক শ্রেনী ও মেহনতী মানুষের মহান শিক্ষাগুরু কার্ল মার্কসের আজ ১৩৭ তম প্রয়ান দিবস। কার্ল মার্কস দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদী বিশ্ববীক্ষন, শ্রমের উদ্বৃত্ত মূল্যের তত্ত্ব এবং ঐতিহাসিক বস্তুবাদের ভিত্তিতে সমাজ বিকাশের নিয়ম উদঘাটন করে ইতিহাসের চালিকাশক্তি হিসেবে শ্রেনী সংগ্রামের তত্ত্ব প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বুর্জোয়া উৎপাদন সম্পর্ক ও উৎপাদিকা শক্তির অমীমাংশেয় বিরোধের ফলশ্রতিতে সমাজতন্ত্রের অনিবার্যতা তুলে ধরেছিলেন।মার্কসবাদ সম্পর্কে লেনিন বলেছেন:
মার্কসবাদের তিনটি উৎস ও অংগ-
(ক) মার্কসীয় দর্শন: দ্বান্দ্বিক ও ঐতিহাসিক বস্তুবাদ।
(খ) মার্কসীয় অর্থশ্বাস্ত্র: উদ্বৃত্তমূল্য তত্ত্ব।
(গ) মার্কসীয় সমাজবিজ্ঞান: শ্রেনী সংগ্রাম।
মানব ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রতিভা ও চিন্তক, শ্রমজীবি মানুষের মুক্তি সংগ্রামের পথপ্রদর্শক কার্লমার্কস ১৩৭ বছর আগে চিন্তা থেকে বিরত হলেও, তার চিন্তাধারা আজও মুক্তিকামী মানুষকে অনির্বান আলোকবর্তিকা হয়ে পথ দেখায়।
প্রয়ান বার্ষিকীতে কার্লমার্কসকে গভীর শ্রদ্ধায় স্মরন করছে।জার্মানীর রাইন নদীর তীরে ছোট্র শহর ট্রিয়ার( Trier)। এই শহরে বাস করতেন হার্সকেল ও হেনরিয়েটা মার্কস নামে এক ইহুদি দম্পতি। হার্সকেল ছিলেন আইন ব্যবসায়ী।
১৮১৮ সালের ৫ মে হেনরিয়েটা তার দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম দিলেন। প্রথম সন্তান ছিল মেয়ে। জন্মের পর শিশুর নাম রাখা হল কার্ল।
যখন কার্লের বয়স ৬ বছর, হার্সকেল তার পরিবারের সব সদস্যই খ্রিস্টান ধর্মে দীক্ষা নিলেন। ইহুদির উপর নির্যাতনের আশংকায় ভীত হয়ে পড়েছিলেন হার্সকেল। সন্তানদের রক্ষার জন্য নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্মান্তরিত হলেন।
বার বছর বয়সে কার্ল স্থানীয় বিদ্যালয়ে ভর্তি হলেন। তিনি ছিলেন ক্লাসের সেরা ছাত্র।
সতেরো বছর বয়সে কৃতিত্বের সাথে স্কুলের শেষ পরীক্ষায় উত্তীর্ন হলেন। ভর্তি হলেন জার্মানীর বন বিশ্ববিদ্যালয়ে। বাবার ইচ্ছা পূর্ন করতেই ভর্তি হলেন আইন পড়তে। কিন্তু আইনের বই এর চেয়ে বেশী ভাল লাগত কবিতা,সাহিত্য,দর্শন। আর যাকে ভালো লাগতো তার নাম জেনি। পূরো নাম জোহান্না বার্থাজুলি জেনি ওস্টেফালেন। জেনির বাবস ছিলেন ট্রিয়ারের এক সম্ভ্রান্ত ব্যারন, রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা। শৈশবে খেলার সাথী,যৌবনে নিজের অজান্তেই দূ’জনে প্রেমের বাধনে বাধা পড়ে গেল। যতদিন ট্রিয়ারে ছিলেন, নিয়মিত দেখা হতো কিন্তু বনে যেতেই কার্ল অনুভব করলেন জেনির বিরহ। দিন-রাত এখানে- ওখানে ঘুরে বেড়ান।
ছেলের এই অস্থিরতার কথা শুনে বিচলিত হয়ে পড়লেন হার্সকেল। ডেকে পাঠালেন মার্কসকে, ট্রিয়ারে এসে পৌছতেই ফিরে পেলেন জেনিকে। আবার আগের মতো স্বাভাবিক হয়ে উঠলেন কার্ল। কিন্তু এখানে তো বেশিদিন থাকা সম্ভব হবে না। তাই গোপনে জেনি কার্লের বাগদত্তা হয়ে গেলেন। কিন্তু এ খবর গোপন রাখা গেলনা। চিন্তায় পড়ে গেলেন হার্সকেল, সামনে গোটা ভবিষ্যৎ পড়ে রয়েছে। ঠিক করলেন এবার বন নয়,কার্ল কে পাঠাবেন বার্লিনে। সেখানে রয়েছেন অনেক জ্ঞানী- গুনী অধ্যাপক। সেখানকার পরিবেশে গেলে হয়তো কার্লের পরিবর্তন হতে পারে। বার্লিনের নতুন পরিবেশ ভাল লাগলো কার্লের। পড়াশোনার ফাকে ফাকে নিয়মিত চিঠি লেখেন জেনিকে।বার্লিন থেকে মার্কস এলেন জেনাতে। এখানকার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনশাস্ত্রে ডক্টরেট লাভ করেন। তার ইচ্ছা ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার চাকরি নেবেন। কিন্তু উগ্র স্বাধীন মতামতের জন্য তার আবেদন অগ্রাহ্য হল।
ইতিমধ্যে বাবা মারা গিয়েছেন। ট্রিয়ারে রয়েছে মা আর জেনি। চাকরির আশা ত্যাগ করে তাদের কাছেই ফিরে চললেন মার্কস। অবশেষে দীর্ঘ প্রেমের পরিনতি ঘটল। মার্কস আর জেনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলেন। বিয়ের পর ফিরে এলেন বনে। এই সময়ে হেগেল ছিলেন জার্মানীর শ্রেষ্ঠ দার্শনিক। তার দার্শনিক মতবাদ, চিন্তা যুবসমাজকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল।বনে এসে কয়েকজন তরুন যুবকের সাথে পরিচয় হল। তারা সকলেই ছিল হেগেলের মতবাদে বিশ্বাসী। এদের সাথেই তিনি স্থানীয় বৈপ্লবিক কাজকর্মে যুক্ত হয়ে পড়লেন।