
ব্রাক্ষণবাড়িয়া।।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলায় শিশু ধর্ষণের ঘটনায় তিনটি মেডিকেল রিপোর্ট ও একটি ছাড়পত্রে ভিন্ন তথ্য হওয়ায় বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।গত রোববার বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। জানা যায়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে দেয়া ছাড়পত্রে বলা হয়েছে ৩ সেপ্টেম্বর শিশুটি ধর্ষণের শিকার হয়। সেখান থেকে দেয়া আরেক রিপোর্টে বলা হয়, শিশুটির বাহ্যিক কোনো সমস্যা পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে সদর হাসপাতালের মেডিকেল রিপোর্টে বলা হয়েছে, ৭২ ঘণ্টার মধ্যে যৌন নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। তাদেরই আরেকটি তথ্য বলছে, জোরপূর্বক যৌন নির্যাতন হয়েছে।এজাহার ও নথিপত্র পর্যালোচনা করে আদালত বলেছেন, গত ৪ সেপ্টেম্বর ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর ৬ থেকে ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভুক্তভোগী শিশুটি নাসিরনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল। চার সদস্যের চিকিৎসকের মেডিকেল বোর্ডের রিপোর্ট অনুযায়ী, ৭২ ঘণ্টার মধ্যে যৌন নির্যাতন হয়েছে, বিষয়টি প্রশ্নবোধক।আদালত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিভিল সার্জন, পুলিশ সুপার ও ডাক্তারসহ ১২ জনকে তলব করেছেন। অন্যরা হলেন সদর হাসপাতালের পাঁচ চিকিৎসক এবং নাসিরনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তিন চিকিৎসক, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও নাসিরনগর থানার ওসি। তাদের ১৮ ফেব্রুয়ারি আদালতে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।আদালত এই মামলায় ভুক্তভোগীর (শিশুর) ডাক্তারি পরীক্ষায় কোনো অনিয়ম হয়েছে কি না, তা তদন্ত করে এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে স্বাস্থ্য সচিবকে বলা হয়েছে। তদন্তকারী কর্মকর্তা, নাসিরনগর থানার ওসি ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এসপির কোনো অনিয়ম আছে কি না, সে জন্য তদন্ত করে এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে পুলিশের মহাপরিদর্শকে (আইজিপি) নির্দেশ দেয়া হয়েছে।আদালতে আইনের সঙ্গে সংঘাতে জড়িত শিশুটির পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী মো. শাহ পরান চৌধুরী। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মনিরুল ইসলাম।
নথিপত্র থেকে জানা যায়, গত ৯ সেপ্টেম্বর বেলা তিনটায় প্রথম শ্রেণিতে পড়ুয়া শিশু ধর্ষণের শিকার হয়। প্রথমে শিশুটিকে নাসিরনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই ঘটনায় ভুক্তভোগী শিশুটির বাবা গত ১১ সেপ্টেম্বর নাসিরনগর থানায় এক শিশুর বিরুদ্ধে মামলা করেন। এই মামলায় শিশুটি হাইকোর্টে জামিন চেয়ে আবেদন করেন। শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট গত নভেম্বর শিশুটিকে আট সপ্তাহের আগাম জামিন দেন। একই সঙ্গে তদন্তকাজ শেষে এক মাসের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে তদন্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন আদালত।এরই ধারাবাহিকতায় তদন্ত প্রতিবেদন ও মামলার সিডি আদালতে দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা। এসবের ওপর শুনানি নিয়ে এই আদেশ দেয়া হয়।ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, ভুক্তভোগী শিশুটির ভিন্ন ভিন্ন মেডিকেল রিপোর্ট তিন ধরনের তথ্য এসেছে। নথি পর্যালোচনা করে হাইকোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত রুলসহ এই আদেশ দেন। রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত নাসিরনগর থানায় করা মামলাটির কার্যক্রমও স্থগিত করেছেন আদালত।