আমরা সময়ের কথা সময়ে বলি।

Advertisement

আমি প্রধানমন্ত্রী ও আইনমন্ত্রীর কাছে বিচার চাই-মরিয়ম

বিশেষ প্রতিবেদন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর 10 January 2022 ২৯৭

ব্রাহ্মণবাড়িয়া।।

২০১৩ সালে জয়িতা সম্মানে ভূষিত হয়েছিলেন মরিয়ম খাতুন নাটোরের বড়ইগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার স্বাক্ষর করা ওই সম্মাননাপত্রটি হাতে নিয়ে বসে ছিলেন।তিনি বলেন, ‘মন্ত্রী মুরাদকে সরাতে তো কোনো রায় লাগেনি। জামালপুরের ডিসি’র বেলায়ও তো রায়ের প্রয়োজন হয়নি। তাহলে আমি কেন পথে পথে ঘুরব?’
আজ সোমবার ১০ জানুয়ারি বেলা ২টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে কথা হয় মরিয়ম খাতুনের সঙ্গে। কার্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে ১০ বছর বয়সী শিশুকন্যা মিথিলা খাতুনকে নিয়ে বসে ছিলেন তিনি। পেছনেই বিভিন্ন দাবির কথা উল্লেখ করে আমরণ অনশনের ব্যানার টানানো। মরিয়ম খাতুন জানান, বেলা ১১টা থেকে যেভাবে ছিলেন সেভাবেই তিনি সেখানে ব্যানার টানিয়ে বসে আছেন। সব দাবি না আদায় হওয়া পর্যন্ত তিনি মেয়েকে নিয়ে অনশন চালিয়ে যাবেন।
মরিয়ম বলেন ১১ বছর আগে স্বামী আমাকে ডিভোর্স দেয়। প্রায় ৫০ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করলেও আদালতে অসচ্ছলতার কাগজ দেখিয়ে মাসে মাত্র এক হাজার টাকা মেয়েকে দিচ্ছে। এ টাকায় মেয়ের পড়ালেখাসহ অন্য খরচ চালানো যাচ্ছে না। তার বাবা জাতীয় পরিচয়পত্র কাগজ না দেওয়ায় স্কুলেও ভর্তি করানো যাচ্ছে না মেয়েকে।’তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘অন্যায় করার পর মন্ত্রী মুরাদকে পদ থেকে সরে যেতে হয়েছে। জামালপুরের ডিসির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তাহলে আমি কেন এখানে-সেখানে ঘুরব? আমি প্রধানমন্ত্রী ও আইনমন্ত্রীর কাছে বিচার চাই।
নাটোর জেলার বড়ইগ্রাম উপজেলার কৃষ্ণপুর গ্রামের সিতাব আলী মণ্ডলের মেয়ে মরিয়ম খাতুন। ২০০৮ সালের ২৯ আগস্ট পাবনার আটঘরিয়া গ্রামের রামেশ্বর গ্রামের সুরমান মিয়ার ছেলে মো. শাহ আলমের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। শাহ আলম পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে লাইনম্যান হিসেবে চাকরি করেন। বর্তমানে তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলায় কর্মরত আছেন।
বিয়ে প্রায় তিন বছর পর ২০১১ সালে ডিভোর্স হয়ে যায় শাহ আলম ও মরিয়ম দম্পতির। মরিয়ম এর পর ব্র্যাকের প্রগ্রাম অর্গানাইজার হিসেবে চাকরি নেন। অনৈতিক আবদার মেটাতে না পারায় এক কর্মকর্তার মিথ্যা অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাঁর চাকরি চলে যায়। এর পর থেকে মানবেতর জীবন যাপন করতে থাকেন তিনি।
মরিয়ম বেগম বলেন, ‘আদালতের রায় অনুযায়ী আমার কাবিননামার টাকা দিয়ে দেয় শাহ আলম। মেয়ের জন্য মাসে এক হাজার টাকা করে দেয়। কিন্তু এ টাকার খরচ চালানো সম্ভব না। ব্যাংকে থাকার টাকার লাভ ও ওই এক হাজার টাকা দিয়ে আমার মাসহ তিনজনের সংসার চালানো খুবই কষ্টকর।’
তিনি বলেন, ‘এখন সবচেয়ে বড় সমস্যায় পড়েছেন মেয়ের ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি করানো নিয়ে। কেননা ভর্তির জন্য পিতার জাতীয় পরিচয়পত্র প্রয়োজন। কিন্তু মিথিলার বাবা সেটা দিচ্ছে না। অনেকে বলছে বাবাকে মৃত দেখাতে। কিন্তু সেটাও আমি করতে চাই না। এ ছাড়া জীবিত মানুষের মৃতের সার্টিফিকেট কে দেবে?’
মরিয়ম অভিযোগ করেন, এখনো তাঁকে নানাভাবে নির্যাতন করা হয়। শাশুড়ি স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করলে তাঁর নামে হত্যা মামলা দেওয়া হয়। পুলিশের তদন্তে সেটি মিথ্যা মামলা হিসেবে প্রমাণিত হলে রক্ষা পান। ডিভোর্স দেওয়ার পর শাহ আলম আরেকটি বিয়ে করেছেন।