আমরা সময়ের কথা সময়ে বলি।

Advertisement

পৌরসভার শেরপুর ও ছয়ঘড়িয়াপাড়ায় একের পর এক চুরি।। জিম্মি এলাকাবাসী

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর 1 February 2022 ২৫০

ব্রাহ্মণবাড়িয়া।।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার শেরপুর ও ছয়ঘড়িয়াপাড়ায় থেমে নেই চোরদলের উপদ্রব। সর্বশেষ এক রাতে দুটি বাড়িতে হানা দিয়ে মূল্যবান সামগ্রী নিয়ে গেছে চোরদল। পাশাপাশি এক ব্যবসায়ীকে পথিমধ্যে আটক করে টাকা-পয়সা ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টাও করেছে তারা। রোববার (৩০ জানুয়ারি) দিবাগত রাত সন্ধ্যা ৭টায় এবং রাত ১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত  এ দুর্ধর্ষ চুরির কাহিনী ঘটে। অভিযোগ রয়েছে খোদ পুলিশের বিরুদ্ধেও। টহল পুলিশ কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়ক দিয়ে ঘুরে ‘তাদের এলাকা’ কাভার করে চলে যায়। শেরপুর-ছয়ঘড়িয়াপাড়া মহল্লায় কদাচিৎ টহল গাড়ি ঢুকলেও তা একেবারেই ক্ষণিকের জন্য। টহল না দিলেও গুপ্তচরের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে পদক্ষেপ না নেয়ায় এ সমস্যা দিনকে দিন বাড়ছে। ফলে ওই দুই মহল্লাবাসী চোর-মাদকসেবীদের উপদ্রব থেকে রক্ষা পাচ্ছে না। এ অবস্থায় মাদকসেবী ও চোরদলের নিকট জিম্মি হয়ে রয়েছে শেরপুর-ছয়ঘড়িয়া পাড়াবাসী।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সন্ধ্যার পর থেকেই শেরপুর মহল্লায় বহিরাগতদের আনাগোনা বেড়ে যায়। এখানে ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করা কয়েকজন মাদক সেবনকারীর সাথে মিলে বহিরাগতরা শেরপুরের মীর শাহাব উদ্দিন (র.) এর মাজার শরীফ এর আশপাশে গভীর রাত পর্যন্ত ঘুরাফেরা করে। মাজার, মাদ্রাসা, মসজিদ ও কবরস্থান এলাকায় জনগণের আনাগোনা বেশি থাকায় আলাদাভাবে চোরদলের সদস্য বা বহিরাগতদের শনাক্ত করাটা কঠিন হয়ে পড়ে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দেদারছে শেরপুর-ছয়ঘড়িয়া পাড়ায় চুরি করে যাচ্ছে তারা। বাদ যাচ্ছে না মাজার শরীফও। জানুয়ারি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে মাজার মসজিদের কলাপসিবলের তালা ভেঙ্গে ভিতরে থাকা মাজারের শরীফের দানবাক্সের তালা ভেঙ্গে টাকা চুরির চেষ্টা করছিল। এ সময় অযাচিতভাবে শেরপুরের একজন ব্যক্তি মাজার মসজিদের সামনে এসে পড়ায় সে চুরির চেষ্টা ভণ্ডুল হয়ে যায়। এছাড়া গত বৃহস্পতিবারও সাবেক কাউন্সিলর রাশেদ মিয়ার ভাই মিনাই মিয়ার বাড়ির কলাপসিবলের তালা ভেঙ্গে বাসার ভাড়াটিয়া প্রাণ কোম্পানীর চাকরিজীবির মোটরসাইকেল চুরি করে নিয়ে গেছে চোরদল। সর্বশেষ রোববার (৩০ জানুয়ারি) দিবাগত রাতে মাজার পুকুরের পশ্চিম-দক্ষিণ পাশের এক বাসায় সন্ধ্যা ৭টায় হানা দেয় চোর দল। এ সময় গৃহকর্ত্রী এক চোরকে হাতে-নাতে আটক করতে পারলেও ধরে রাখতে পারেননি। চোরেরা ওই বাড়ির মোবাইল ও নগদ টাকা নিয়ে যায়। এদিনই দিবাগত রাত ১টা থেকে দেড়টার মধ্যে শেরপুরের বাসিন্দা ও দৈনিক একুশে আলো’র স্টাফ রিপোর্টার হাফেজ মোঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন খানের বাসায় ঢুকে জানালা দিয়ে ল্যাপটপ চুরি করে নিয়ে যায়। এর ঘন্টাদেড়েক পর প্রায় ৩টার দিকে ব্যবসায়ী ফরহাদ খান মাজার রোড দিয়ে শেরপুরে তার বাসায় যাওয়ার সময় সাদেক মাস্টারের বাড়ির পাশে ২/৩ জন চোর তার পথরোধ করে। এ সময় ছুরি-চাকুর ভয় দেখিয়ে তার হাত থেকে ব্যাগ ও মোবাইল কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করে। চিৎকার-শোরগোলে আশপাশের বাড়ির লোকজন এগিয়ে আসতে থাকলে চোরদল ওরফে ছিনতাইকারী দল পালিয়ে যায়। ফরহাদ খান হাতে-পায়ে আঘাত পেয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নেন।
সূত্র জানায়- মাজার পুকুরের পশ্চিম পাশে বিভিন্ন অলিগলিতে গভীর রাত পর্যন্ত মাদক সেবন করে তারা। রাত ১২টার পরে সেখান থেকে বের হয়ে যে বাড়িতে সুযোগ পায় সে বাড়িতেই তারা হানা দেয়। চোরদল কারও সামনে পড়ে গেলে মাজারে যাচ্ছি- জিয়ারতে যাচ্ছি বলে তারা কেটে পড়ে। শহরের অন্যান্য এলাকায় চোর-ছিনতাইকারীর উপদ্রব কমলেও ছয়ঘড়িয়া পাড়া, উত্তর শেরপুর-দক্ষিণ শেরপুর কখনো চোরমুক্ত হয়নি। সপ্তাহের ৭ দিনের মধ্যে ৩/৪ দিনই কোনো না কোনো বাড়িতে চুরি হচ্ছে বা চুরির চেষ্টা চলছে। থানা পুলিশ বা শহরের ০১নং ফাঁড়ি পুলিশও শেরপুর-ছয়ঘড়িয়াপাড়া নিয়ে নির্বিকার। টহল পুলিশ বেশিরভাগ সময়ই কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়ক দিয়ে চলে যায়। মাঝে মাঝে শেরপুর-ছয়ঘাড়িয়া পাড়ায় আসলেও কখনো মাদকসেবী বা চোরকে তাড়াতে/ধরতে শোনা যায়নি। গত এক বছরে এই দুই মহল্লায় অনেকগুলো চুরির ঘটনায় জিডি করলেও এ পর্যন্ত একটিরও কোনো সমাধান দিতে পারেনি পুলিশ। গোপন সংবাদের ভিত্তিতেও শেরপুর-ছয়ঘড়িয়া পাড়ায় চুরির ঘটনায় এ পর্যন্ত কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ।
ভুক্তভোগী হাফেজ মোঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন খান বলেন- গভীর রাতে অপরিচিত ছেলে-পেলে এদিকে ঘুরাফেরা করে। সাধারণ মানুষ ইচ্ছে করলেই সব বিষয়ে কথা বলতে পারে না।
ব্যবসায়ী ফরহাদ খান বলেন- বাসায় যাওয়ার সময় অতর্কিত ২/৩ জন ভয়ভীতি দেখিয়ে আমার ব্যাগ ও মোবাইল নেওয়ার চেষ্টা করে। আমি চিৎকার-চেচামেচি শুরু করলে তারা দৌঁড়ে চলে যায়।