
ঢাকা।।
১১ জেলাকে আওয়ামী লীগের রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত,পরিচালিত হবে শুদ্ধি অভিযান। দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল তীব্র আকার ধারণ করেছে আওয়ামী লীগের ১১ জেলায়। আর এই ১১ জেলাকে আওয়ামী লীগের নেতারা রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। আগামী এক বছরের মধ্যে এই জেলাগুলোতে দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল মেটানোর তাগিদ দেয়া হয়েছে হাইকমান্ড থেকে। আর এজন্য প্রয়োজনে শুদ্ধি অভিযান পরিচালিত হবে। আর অভ্যন্তরীণ কোন্দল যদি মীমাংসা না করা হয় তাহলে আগামী নির্বাচনে এই ১১ জেলায় আওয়ামী লীগের বড় রকমের সমস্যা হতে পারে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এই অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে আওয়ামী লীগের অনেক ক্ষতি হয়েছে বলে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা মনে করছেন। যে ১১ জেলাকে আওয়ামী লীগ রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করেছে তাদের মধ্যে রয়েছে-
নোয়াখালী:- নোয়াখালীতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, তার ছোটভাই কাদের মির্জা বনাম একরামুল করিম চৌধুরীর বিরোধ এখন প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। গতকাল একরামুল করিম চৌধুরীকে আওয়ামী লীগ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে এবং তা চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটিতে। এখন শেষ পর্যন্ত একরাম চৌধুরীকে অব্যাহতি দেওয়া হবে কিনা সেটা দেখার বিষয়। কিন্তু একরাম চৌধুরী-কাদের মির্জার বিরোধ নোয়াখালীতে আওয়ামী লীগকে টালমাটাল করে রেখেছে। এই পরিস্থিতির যদি অবসান না হয়, তাহলে আগামী নির্বাচনে এটি আওয়ামী লীগের জন্য একটি বড় ধরনের সংকটের কারণ হবে বলে মনে করা হচ্ছে।গাজীপুর:- গাজীপুরে সদ্য বহিষ্কৃত সিটি মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে আওয়ামী লীগের অন্যান্য নেতাদের বিরোধ এখন প্রকাশ্য রূপ ধারণ করেছে। সব হারিয়েও জাহাঙ্গীর আলম এখন পর্যন্ত দলের কিছু অংশের কর্মীদের নিয়ে পৃথক অবস্থান করছেন এবং এটি জাহিদ আহসান রাসেল এবং আজমত উল্লার জন্য একটি বড় ধরনের হুমকি বলে মনে করা হচ্ছে। এই অভ্যন্তরীণ কোন্দল এখন যদি মেটানো না যায়, তাহলে দ্বিতীয় গোপালগঞ্জ হিসেবে পরিচিত গাজীপুরেও আওয়ামী লীগের অবস্থা সংকটাপন্ন হয়ে উঠতে পারে।
ফরিদপুর:- ফরিদপুর আওয়ামী লীগের আরেকটি ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। কিন্তু ফরিদপুরেও আওয়ামী লীগের বিভক্তি প্রকাশ্য রূপ ধারণ করেছে। ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন একসময় ফরিদপুর আওয়ামী লীগে প্রভাবশালী ছিলেন কিন্তু এখন তার প্রভাব আগের চেয়ে অনেক খর্ব হয়েছে। নিক্সন চৌধুরীর সঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরউল্লাহর বিরোধ সেখানে নতুন মাত্রায় রূপ নিয়েছে। এখন তাদের প্রকাশ্য বিরোধ নেই কিন্তু বিভিন্ন কমিটি গঠন নিয়ে দুইটি শিবির পরস্পর বিপরীত মেরুতে অবস্থান করছে।
সিরাজগঞ্জ:- সিরাজগঞ্জ আওয়ামী লীগ এখন মোটামুটি নেতৃত্বহীন এবং এখানে বহুমুখী দ্বন্দ্ব দেখা যাচ্ছে। প্রয়াত মোহাম্মদ নাসিমের পুত্র তানভীর শাকিল জয়ের সঙ্গে হাবিবে মিল্লাতের বিরোধ, আবার একজন সচিবের এলাকায় প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা আওয়ামী লীগের জন্য এলাকার রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে নাজুক করে তুলেছে।
কুমিল্লা:- কুমিল্লাতেও আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ বিরোধ প্রবল আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে কুমিল্লা বিভাগ নিয়ে আওয়ামী লীগ এখন দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছে।
নারায়ণগঞ্জ:- নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ বিরোধ নতুন করে বলার কিছু নেই। এখানে আইভী বনাম শামীম ওসমানের বিরোধের এখন চূড়ান্ত ফয়সালা হওয়ার অপেক্ষায়। শেষ পর্যন্ত এই বিরোধের যদি মীমাংসা হয় তাহলে আগামী নির্বাচনে তার প্রভাব পড়তে পারে বলে অনেকে মনে করছেন।
নরসিংদী:- নরসিংদীতে আওয়ামী লীগের বিরোধ থেমে থেমে চলছে এবং এই বিরোধের কারণে নরসিংদী আওয়ামী লীগ সম্পূর্ণভাবে দ্বিধাবিভক্ত।
কিশোরগঞ্জ:- কিশোরগঞ্জে একটি আসনের এমপি নূর মোহাম্মদের সঙ্গে অন্যদের দ্বন্দ্ব প্রায় প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে এবং বিভিন্ন সময়ে এই দ্বন্দ্বের নানারকম প্রকাশ হচ্ছে। কখনো কখনো এসব দ্বন্দ্বের প্রকাশ হচ্ছে সশস্ত্র কায়দায়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া:- ব্রাহ্মণবাড়িয়াতেও আওয়ামী লীগ দ্বিধাবিভক্ত এবং ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সে দ্বিধাবিভক্তির ফলাফলও পাওয়া গেছে।
চাঁদপুর:- চাঁদপুরে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির বিরুদ্ধে প্রকাশ্য অবস্থান নিয়েছেন আওয়ামী লীগের একজন এমপি। এছাড়াও আওয়ামী লীগের আরেক নেতাও সেখানে বিভক্তি সৃষ্টি করছেন। এ নিয়ে চাঁদপুরের রাজনীতিও এখন টালমাটাল অবস্থায় রয়েছে।
মাদারীপুর:- মাদারীপুরে আওয়ামী লীগের বিরোধ দীর্ঘদিনের। সেখানে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিমের সঙ্গে প্রেসিডিয়াম সদস্য শাহজাহান খানের বিরোধ নিয়ে শেখ হাসিনা পর্যন্ত গড়িয়েছে কিন্তু তারপরও এই বিরোধের মীমাংসা হয়নি।এই জেলাগুলোতে অবিলম্বে বিরোধ নিষ্পন্ন করার তাগিদ দিচ্ছেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা। তারা মনে করছেন, আগামী নির্বাচনের আগেই যদি এই নেতৃত্বের বিভক্তি এবং অন্তঃকলহ দূর না করা যায় তাহলে তার প্রভাব আগামী নির্বাচনের পড়বে।