আমরা সময়ের কথা সময়ে বলি।

Advertisement

আগুন নেভানোর দুই ঘণ্টা পর বুঝতে পারি হাদিস মারা গেছে’

আন্তর্জাতিক, বিশেষ প্রতিবেদন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর 10 March 2022 ২০৪

ব্রাহ্মণবাড়িয়া।।
সহকর্মী হারানোর দুঃসহ যন্ত্রণা নিয়ে দেশে ফিরেছেন ইক্রেনের বন্দরে আটকা বাংলাদেশী জাহাজ ‘বাংলার সমৃদ্ধির’ ২৮ নাবিক। গতকাল বুধবার (০৯ মার্চ) দেশে ফিরেন তারা। তাদের সঙ্গে ফিরেছেন জাহাজটির সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার সৈয়দ আসিফুল ইসলাম। তার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের মুন্সেফপাড়ায়। সম্প্রতি তিনি চিফ ইঞ্জিনিয়ার পদে পদোন্নতি পান। বাংলার সমৃদ্ধির চিফ ইঞ্জিনিয়ারের দায়িত্ব নেওয়ার কথা ছিল। তবে ইউক্রেন-রাশিয়ার মধ্যকার চলমান যুদ্ধে বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজে হামলা চালানো হয়। এতে জাহাজের থার্ড ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুর রহমান মারা যান।
রেলওয়ের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সৈয়দ নূরুল ইসলামের দুই ছেলে-মেয়ের মধ্যে বড় আসিফুল। গত বুধবার (০৯ মার্চ) রাতে নিজ বাড়িতে ফিরেন তিনি। যুদ্ধের কারণে ইউক্রেনের বন্দরে আটকা পড়ার পর থেকেই ছেলেকে জীবিত ফেরত পাওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন বাবা নুরুল ইসলাম ও মা পারভীন আক্তার। অবশেষে ছেলেকে ফিরে পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন তারা। যুদ্ধ পরিস্থিতি থেকে রক্ষা পেয়ে ফিরে আসায় আসিফুল আল্লাহতালার কাছে শুকরিয়া আদায় করেন। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী, সংশ্লিষ্ট হাইকমিশন ও দেশবাসীর প্রতি।
নিজ বাড়িতে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে ইউক্রেনের বন্দরে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায় কাটনো দিনগুলোর স্মৃতিচারণ করেছেন আসিফুল। তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের এক সহকর্মীকে হারিয়েছি। আল্লাহ্ তাকে জান্নাত নসিব করুক। সেদিন (ঘটনার দিন) তুমুল হামলা হয় ইউক্রেনে। আমরা ভাবতে পারেনি আমাদের জাহাজে হামলা হবে। থার্ড ইঞ্জিনিয়ার হাদিস আসর নামাজ পড়ে জাহাজের ৬ তলার উপরে ব্রিজে যায় মোবাইলে কথা বলার জন্যে। সেখানে নেটওয়ার্ক ভাল পাওয়া যেত। এর মধ্যে তার থেকে ২/৩ ফুট দূরে রকেটটি পড়ে। প্রথমে আমরা কেউ বুঝতে পারিনি হাদিস মারা গেছে। রকেট হামলায় জাহাজে লাগা আগুন নেভানোর দুই ঘণ্টা পর বুঝতে পারি হাদিস মারা গেছে। আমাদের জাহাজে ইউক্রেন নাকি রাশিয়া হামলা করেছে- সেটি আমরা বুঝতে পারছি না। তবে যতক্ষণ জাহাজে আটকা ছিলাম- ভয়ে ছিলাম। আমাদের দেড় থেকে দুইমাসের খাবার, পানি ও তেল মজুদ ছিল। কোন খাদ্য সংকট ছিল না।
আসিফুল আরও বলেন, রকেট হামলা হয়েছিল জাহাজের ৬ তলার ছাদে। আমাদের ফোকাস ছিল আগুনের দিকে। সেখানে ছিল প্রচন্ড শীত। যদি জাহাজ থেকে নেমে যেতে হয়, তখনো সেইফ এক্সিটের আমাদের কোন প্ল্যান হয়নি। যদি জাহাজ থেকে নামি তাহলে প্রচ- ঠান্ডা ও শীতে অবস্থা খারাপ হয়ে যেত। যদি কেউ আমাদেরকে উদ্ধার করতে নাও আসে; অন্তত জাহাজে কয়েকদিন থাকতে পারবো, তাই আমাদের ফোকাস ছিল আগুনের দিকে। আগুন নেভানোর পর আমরা হাদিসের মরদেহ উদ্ধার করে ফ্রিজিং কক্ষে রাখি। এর একদিন পরই আমাদের উদ্ধার করা হয়।
আসিফ বলেন, আমরা ২৩ তারিখ দুপুরে ইউক্রেন বন্দরে পৌঁছেছি। ২৪ তারিখ হামলার ঘটনাটি ঘটে। আমরা ধারণা করতে পারিনি রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে। আমাদের কাছে তথ্য ছিল রাশিয়া ইউক্রেন সীমান্ত থেকে তাদের সৈন্য উঠিয়ে নিয়ে গেছে। ভেবেছিলাম পরিস্থিতি ভাল হবে।
বাড়ি ফেরার অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, এখন বাসায় ফিরে ভাল লাগছে। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, বিশেষ করে বাংলাদেশ হাইকমিশন, পোল্যান্ড হাইকমিশন, রোমানিয়া হাইকমিশনের প্রতি কৃতজ্ঞতা। দেশবাসীর প্রতিও আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই, তারা দোয়া করেছেন। সবার আন্তরিক প্রচেষ্টায় আমরা ২৮জন মা-বাবার কাছে ফিরে আসতে পেরেছি।
একমাত্র ছেলেকে ফিরে পেয়ে আসিফুলের বাবা সৈয়দ নুরুল ইসলাম সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।