
ব্রাহ্মণবাড়িয়া।।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ ফার্টিলাইজার এন্ড কেমিক্যাল কোম্পানি লিমিটেড এর এ্যামোনিয়া প্লান্ট থেকে নির্গত গ্যাসে কারখানার আশপাশ এলাকার শতাধিক একর ফসলী জমি পুড়ে সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। এতে এই এলাকার শতাধিক কৃষক পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বলে দাবি ভূক্তভোগীদের। এছাড়া কারখানা থেকে নির্গত গ্যাসের কারণে একটি পুকুরের প্রায় লক্ষাধিক টাকার মাছ মরে গেছে বলে দাবি করেছেন একজন মৎস্যচাষী। এভাবে এ্যামোনিয়া গ্যাস নির্গত হতে থাকলে আরো ক্ষতির আশঙ্কা করছেন স্থানীয় কৃষক ও মৎস্যচাষীরা।
জানা যায়, এই ব্যাপারে প্রতিকার চেয়ে ভুক্তভোগীরা আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট লিখিত দরখাস্ত করেছেন। এতে বলা হয়- উপজেলার চরচারতলা এলাকার ৬ ও ৭নং ওয়ার্ড এর আশপাশ এলাকায় আশুগঞ্জ ফার্টিলাইজার এন্ড কেমিক্যাল লিমিটেডের ইউরিয়া প্লান্টের এ্যামোনিয়া গ্যাসের অতিরিক্ত গ্যাস বাতাসে ছাড়ার কারণে শতাধিক একর রোপনকৃত বোরো জমির চাড়া পুড়ে যায়। এছাড়াও আগাম লাগানো অনেক ফসলী জমিতে চারা থেকে ধান বের হয়ে যাওয়া গাছও পুড়ে গেছে। এতে করে এই এলাকার শতাধিক কৃষক পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। পাশাপাশি এই নির্গত গ্যাসের কারণে কারখানার আশপাশের বিভিন্ন পুকুরের মাছ মরে যাচ্ছে। যার কারণে একটি পুকুরে ছাড়া মাছ মরে অন্তত লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়েছে।
এ ব্যাপারে ভূক্তভোগীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশরাফুল ইসলামকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে উপজেলা প্রশাসন।
সরেজমিনে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকায় গিয়ে জানা যায়, গত ১৫ মার্চ মঙ্গলবার রাতে কারখানারি এ্যামোনিয়া প্লান্ট থেকে নির্গত গ্যাসের কারণে এলাকার আশপাশের লোকজনের স্বাসকষ্টও শুরু হয়। পরে বুধবার সকালে কৃষকরা জমিতে গিয়ে দেখতে পায় তাদের রোপন করা চারা এ্যামোনিয়া গ্যাসের কারণে পুড়ে লাল হয়ে গেছে। এতে অন্তত একশ একর জমি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বলে দাবি কৃষকদের। ক্ষতিগ্রস্থদের দাবি তাদের পুড়ে যাওয়া জমির ক্ষতিপূরণের। ক্ষতিপূরণ চেয়ে তারা আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, আশুগঞ্জ ফার্টিলাইজার এন্ড ক্যামিকেল কোম্পানী লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর আবেদন করেছেন।
ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক মোক্তার হোসেন জানান, কারখানা থেকে নির্গত এ্যামোনিয়া গ্যাসের কারণে আমার রোপন করা ১৫ কানি জমি পুড়ে লাল হয়ে গেছে। আমার পরিবার কিভাবে চলব তা বুঝতে পারছি না।
রহমত আলী নামে আরো একজন কৃষক জানায়, আগেরদিন জমিতে সবকিছু ভাল আছে দেখে বাড়িতে গিয়ে পরের দিন আবারো জমিতে এসে দেখি সব চারা পুড়ে লাল হয়ে গেছে। আমরা এই ক্ষতিপূরণের দাবি জানাচ্ছি।
সাজেদা বেগম নামে এক কৃষাণী জানান, এই ফসল দিয়েই আমাদের পরিবার চলে। আমার ৫ কানি জমির চারা পুড়ে গেছে। এখন আমি কি করব বুঝতে পারছি না। যদি ক্ষতিপূরণ পাই তাহলে পরিবারের লোকজন নিয়ে চলতে পারব। অন্যথায় আমাদের চলা মুশকিল হয়ে যাবে।
সাদেকুল ইসলাম সাচ্চু নামের একজন মাছ চাষী জানান, আশুগঞ্জ ফার্টিলাইজার এন্ড কেমিক্যাল কোম্পানি লিমিটেড এর এ্যামোনিয়া প্লান্ট থেকে নির্গত গ্যাসে আমার পুকুরের লক্ষাধীক টাকার ক্ষতি হয়েছে। আমি যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি সুরাহার জন্য দাবি জানাই। পাশাপাশি আমাদের ক্ষতিপূরন করা হোক।এই বিষয়ে আশুগঞ্জ ফার্টিলাইজার এন্ড ক্যামিকেল কোম্পানি লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক একেএম আনোয়ারুল হক জানান, অভিযোগের কোন কপি আমরা এখনো পাইনি। অফিসিয়াল কাজে ঢাকায় আছি। এসে কথা বলব বলেও জানান তিনি।
এই বিষয়ে আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অরবিন্দ বিশ্বাস জানান, সোমবার সকালে আমি এই বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগের প্রেক্ষিতে ক্ষতির পরিমাণ জানতে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশরাফুল হককে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনের পর আমরা কারখানা কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে বিষয়টি সুরাহা করার চেষ্টা করব।