আমরা সময়ের কথা সময়ে বলি।

Advertisement

প্রেমিক সফিউল্লাহর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান

আশুগঞ্জ, জাতীয় 29 March 2022 ২২৯

ব্রাহ্মণবাড়িয়া।।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামে শিশু ইয়াছিন খান-(৭) ও মোরসালিন খান-(৫) কে বিষমাখা মিষ্টি খাইয়ে হত্যা ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত মোঃ সফিউল্লাহ ওরফে সোফাই মিয়া-(৪৮) আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করেন। সফিউল্লাহ ওরফে সোফাই মিয়া শিশুদের মা রিমা বেগমের পরকীয়া প্রেমিক।আজ মঙ্গলবার বিকেলে পুলিশ গ্রেপ্তারকৃত সফিউল্লাহ ওরফে সোফাই মিয়াকে সিনিয়র জুডিশিয়াল দ্বিতীয় আদালতের সোপর্দ করলে বিজ্ঞ বিচারক বেগম আফরিন আহাম্মেদ হ্যাপীর সামনে সে ঘটনার দায় স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করে। এর আগে গত সোমবার বিকেলে ৫টার দিকে ঢাকার টঙ্গীর আবদুল্লাহপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে সফিউল্লাহ ওরফে সোফাই মিয়াকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সে ঢাকা থেকে সৈয়দপুর দিয়ে ভারতে পালানোর চেষ্টা করছিলো। সোফাই মিয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জ উপজেলার তালশহর ইউনিয়নের মৈশার গ্রামের শাসছু মিয়ার ছেলে। সোফাই মিয়া আশুগঞ্জের একটি চাতালকলের শ্রমিক সর্দার ছিলেন।এর আগে সোমবার রাত ৯টায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক প্রেসব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনিসুর রহমান সাংবাদিকদেরকে সোফাই মিয়াকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনিসুর রহমান বলেন, ঘটনার পর থেকে সোফাই মিয়াকে একাধিকবার গ্রেপ্তারের চেষ্টা করেছে। বার বার স্থান পরিবর্তন করায় সোফাই মিয়াকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। সোমবার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিশ্বরোড থেকে সড়কপথে সোফাই মিয়া ঢাকায় পৌছে। বিকেলে টঙ্গীর আবদুল্লাহপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। সোফাই মিয়া বাসে করে সৈয়দপুর যাওয়ার চেষ্টা করেছিল। গ্রেপ্তারের পর সোফাই মিয়া পুলিশকে জানায় সে সৈয়দপুর থেকে ভারত যাওয়ার পরিকল্পনা করছিলো। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে সে শিশুদের মা রিমা বেগমের সাথে পরকীয়া থাকার ও ঘটনার সাথে সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেন। পুলিশ সুপার বলেন, যারা গত ১১দিন সোফাই মিয়াকে আশ্রয়-পশ্রয় দিয়েছে তাদেরকেও আইনের আওতায় আনা হবে। এর আগে গত ১৭ মার্চ পুলিশ শিশুদের মা রিমা বেগমকে গেপ্তার করে।
এদিনই দুই শিশু ইয়াছিন ও মোরসালিনের পিতা ইটভাটা শ্রমিক ইসমাইল হোসেন সুজন আশুগঞ্জ থানায় স্ত্রী রিমা বেগম ও তার পরকীয়া প্রেমিক সফিউল্লাহ ওরফে সোফাই মিয়ার বিরুদ্ধে আশুগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।এর আগে ১০ মার্চ রাতে আশুগঞ্জ উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের ইটভাটা শ্রমিক ইসমাইল হোসেন সুজনের ছেলে ইয়াছিন খান-(৭)  ও মোরসালিন খান-(৫) কে বিষ মোশানো মিস্টি খাইয়ে হত্যা করেন তার মা রিমা বেগম।  পরকীয়া প্রেমিক সফিউল্লাহর পাঠানো বিষমাখা মিস্টি তাদেরকে খাওয়ানো হয়। ১৭ মার্চ গ্রেপ্তারের পর রিমা বেগম পুলিশকে জানায়, সংসারের অসচ্ছলতার কারণে আশুগঞ্জের চাতালকলে কাজ শুরু করেন তিনি। সেখানে চাতালকলের সর্দার সফিউল্লাহ ওরফে সোফাই মিয়ার সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। সফিউল্লাহ শর্ত দেন রিমা তার দুই সন্তানকে সরিয়ে ফেললে তিনি তাকে বিয়ে করবেন। পরিকল্পনা অনুয়ায়ি ঘটনার দিন (১০ মার্চ) বিকেলে রিমাকে বিষ মেশানো পাঁচ পিস মিষ্টি দিয়ে যান সফিউল্লাহ। ওই সময় তিনি বলেন, এই মিষ্টি  দুই শিশুকে খাওয়ানো পর আর কিছুই করতে হবেনা। শিশু দুটির  শরীরে আগে থেকেই জ্বর ছিল। রিমা বেগম সফিউল্লাহর দেয়া বিষ মেশানো মিষ্টির মধ্যে পুত্র ইয়াছিনকে তিনটি ও মোরছালিনকে দুইটি মিষ্টি খাওয়ান। পরে নাটক সাজাতে রিমা বেগম তার শাশুড়িকে দিয়ে ফার্মেসি থেকে নাপা সিরাপ আনান। পরে দুই শিশুকে এক চামচ করে খাওয়ান।  এর কিছুক্ষণ পর শিশুরা বমি করতে থাকলে রিমা তাদেরকে নিয়ে প্রথমে আশুগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যান। সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসক তাদেরকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে এসে হাসপাতালের ইমার্জেন্সি থেকে দুটি টিকেট কিনে চিকিৎসক না দেখিয়েই অসুস্থ্য দুই ছেলেকে নিয়ে বাড়ি চলে যান। পরে রাতেই ছেলে দুটি মারা যায়। শিশু দুটি মারা গেলে পরে রিমা নাটক সাজান শিশু দুটি নাপা সিরাপ খেয়ে মারা গেছে।