
আশুগঞ্জ।।
৫ জনের মৃত্যুর মুল্য ২৪ লাখ টাকা রফাদফা করেছে সালিশ সভায়।ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জে আবাসিক ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় শিক্ষক দম্পতি মকবুল মিয়া, রেখা বেগম এবং তাঁদের তিন সন্তানের মৃত্যুর বিষয়টি নিয়ে এ রফাদফা হয়েছে। এরএকটা অংশ স্থানীয় মসজিদ-মাদ্রাসায় এবং বাকি টাকা মকবুলের মা ও শ্বশুরকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ১১ এপ্রিল সোমবার দুপুরে আশুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ছফিউল্লাহ মিয়ার নেতৃত্বে এ সালিশ সভা হয়।স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, ছফিউল্লাহ মিয়ার নেতৃত্বে আশুগঞ্জ বাজারে তাঁর কার্যালয়ে এ সালিস বৈঠক হয়। সেখানে উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান সেলিম পারভেজ, উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আতাউর রহমান, জেলা কাজী সমিতির সভাপতি মহিউদ্দিন মোল্লা, মকবুল মিয়ার মা খোরশেদা বেগম, শ্বশুর খোরশেদ আলম, ভবনমালিক আলাই মোল্লাসহ আরো অনেকে উপস্থিত ছিলেন। সালিসে রেখার গর্ভের সন্তানের জন্ম না হওয়ায় চারজনের মৃত্যু হয়েছে ধরে জরিমানা করা হয়েছে। মাথাপিছু ৬ লাখ ধরে ৪ জনের মোট ২৪ লাখ টাকা জরিমানা করেন আগামী ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে তা পরিশোধের সিদ্ধান্ত হয়।সালিসের বিষয়ে আশুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ছফিউল্লাহ মিয়া জানান, মকবুলের অনেক টাকা ঋণ আছে। মোট জরিমানা থেকে কিছু টাকা মসজিদ-মাদ্রাসায় এবং বাকি টাকা মকবুলের মা ও শ্বশুরকে দেওয়া হবে। স্বামী-সন্তানদের পর মারা গেলেন দগ্ধ রেখাও।ওই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় করা মামলার সূত্রে জানা গেছে, গত ২২ ফেব্রুয়ারি রাত সোয়া ১০টার দিকে রান্নাঘরে মশার কয়েল জ্বালাতে যায় মকবুল–রেখা দম্পতির ১১ বছর বয়সী শিশুপুত্র আরিফ হোসেন। দেশলাই জ্বালাতেই দাউদাউ করে আগুন জ্বলে ওঠে। এ সময় আরিফকে বাঁচাতে ছুটে আসেন তাঁর মা, বাবা ও ছোট ভাই জোবায়ের হোসেন (৭)। অগ্নিকাণ্ডে বিদ্যুৎ-সংযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অন্ধকারে তাঁরা আর বাইরে আসতে পারেননি। ভেতরে আটকা পড়ে দগ্ধ হন সবাই। ঘটনাস্থলেই জোবায়ের (৭) মারা যায়। পরে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় একে একে মকবুল মিয়া (৪২), আরিফ হোসেন ও সবশেষে রেখা বেগম মারা যান। এর আগে হাসপাতালে রেখার গর্ভে থাকা কন্যাসন্তানের জন্ম হয় মৃত অবস্থায়।এ ঘটনায় গত ২ মার্চ ভবনমালিকের গাফিলতি এবং গ্যাস–সংযোগে ফুটা থাকার অভিযোগে পাঁচজনকে আসামি করে আশুগঞ্জ থানায় একটি মামলা করেন মকবুলের মা খোরশেদা বেগম। মামলায় ভবনমালিক আলাই মোল্লা (৬০), তাঁর স্ত্রী সালমা আক্তার (৪৭), দুই ছেলে মাহফুজ মোল্লা (২২) ও আলম মোল্লা (২৫) এবং বাড়ির দারোয়ান কবির মিয়াকে আসামি করা হয়।
মকবুল মিয়া আশুগঞ্জ উপজেলার শরীফপুর গ্রামের সফর মিয়ার ছেলে। তিনি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক সদস্য ও ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ছিলেন। উপজেলা সদরের শরীয়তনগর এলাকার আলাই মোল্লার ভবনের নিচতলায় পরিবার নিয়ে ভাড়ায় থাকতেন তিনি। নিজেদের প্রতিষ্ঠা করা একটি কিন্ডারগার্টেনে পড়াতেন মকবুল ও রেখা।
মুহূর্তের আগুনে শেষ হয়ে যায়একটি পরিবার
ঘটনার পাঁচ দিন পর ২৭ ফেব্রুয়ারি উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশরাফুল আলমকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে উপজেলা প্রশাসন। মার্চের প্রথম দিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে প্রতিবেদন জমা দেন এ কমিটির সদস্যরা। তদন্তে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটন করা হয়েছে। কোড না মেনে ওই ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। ভবন মালিকের গাফিলতি ও গ্যাস–সংযোগে ফুটা থাকার কারণে মকবুলের ঘরে গ্যাস পুঞ্জীভূত ছিল বলে তদন্তে উঠে আসে।আপস রফাদফার বিষয়ে কিছু জানা নেই আশুগঞ্জের ইউএনও অরবিন্দ বিশ্বাসের।
এ ব্যাপারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) মোল্লা মো. শাহীন বলেন, এ ঘটনায় অপরাধ অনুযায়ী আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেবে পুলিশ।মামলায় আপস রফাদফার প্রভাব পড়বে না।