
আখাউড়া।।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দিয়েছে জেলা প্রশাসন।নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী এবং রড কম দেওয়াসহ বিভিন্ন অনিয়মের কারণে।আজ বৃহস্পতিবার সকালে জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলম আখাউড়ায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের নির্মাণ কাজ পরিদর্শনে আসেন। এসময় তিনি নির্মাণ কাজে বিভিন্ন অনিয়ম দেখতে পেয়ে ১৪২টি ঘরের নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কাজের পুরোপুরি তদারকিতে ছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও)। সংশ্লিষ্টরা জানান, ইউএনও যেভাবে নির্দেশ দিয়েছেন সেভাবেই তারা কাজ করেছেন। প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) এ বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে আপত্তি তুললেও ইউএনও’র একঘেমেয়ির কারণে তিনি কোনোভাবেই কুলিয়ে উঠতে পারেন নি।
একাধিক সূত্র জানায়, প্রকল্প বাস্তবায়নে জায়গা নির্ধারণ শুরু করে সব ক্ষেত্রেই নানা অনিয়ম করা হচ্ছে। ৩০-৪০ হাজার টাকার জায়গা এক থেকে দেড় লাখ টাকা শতক করে কিনছেন। কেনা একটি টিলা কেটে কয়েক লাখ টাকার মাটি বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় এক ঠিকাদার ও দু’জন গণমাধ্যমকর্মীকে ইউএনও দায়িত্ব দিয়েছেন এসব দেখভাল করার। উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও ঠিকাদার নুরুজ্জামান ভূইয়াকে ১৬৯টি ঘরের কাজ দেন ইউএনও।
এদিকে এসব কাজে যেন মুখ না খুলেন সেজন্য স্থানীয় প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিবিদদের ম্যানেজ করতে ইউএনও ৮০টি পাঞ্জাবি, বেশকিছু শাড়ি কিনেছেন ঈদকে সামনে রেখে দেওয়ার জন্য। সব মিলিয়ে প্রায় দুই লাখ টাকার কেনাকাটা করেন তিনি। আলোচনা আছে, এসব ক্রয়ে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার কাছ থেকেই টাকা নেন ইউএনও। তবে বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসকের পরিদর্শনে ইউএনও অনেকটাই থিতু মেরে গেছেন। জেলা প্রশাসক চলে যাওয়ার তিনি মনমরা হয়ে অফিস করেন। এর আগে কর্মমঠ এলাকায় তিনি অনেকের সামনে কান্নাকাটি করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আখাউড়ার আশ্রয়ণ প্রকল্পের অনিয়মের বিষয়টি জানতে পেরে এরই মধ্যে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি করেন জেলা প্রশাসক। বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলম নিজেই এসব ঘর পরিদর্শনে যান। এ সময় তিনি রাজমিস্ত্রী ও সহাকরি নিয়ে যান। অনিয়ম দেখে কিছু কিছু ভবনের অংশ তিনি ভাঙতে বলেন। এ সময় নির্ধারিত রড না দেওয়াসহ নানা অনিয়ম রেরিয়ে আসে। ক্ষুব্ধ জেলা প্রশাসক এ সময় কাজ বন্ধের নির্দেশ দেন। ইউএনও, এসিল্যান্ড ও পিআইওকে ভৎর্সনা করেন তিনি। উপজেলার কর্মমঠ, খলাপাড়াসহ ছয়টি প্রকল্পের মোট ৮০টির বেশি ঘর নির্মাণে অনিয়ম পেয়ে কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন জেলা প্রশাসক।
একজন ঠিকাদারকে দিয়ে ১৬৯টি ঘরের কাজ দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে ইউএনও রুমানা আক্তার বলেন, ‘কিছু কাজে অনিয়ম হওয়ায় জেলা প্রশাসক কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। তবে ঠিকাদারের কাছ থেকে টাকা নেওয়া বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।
জেলা প্রশাসক শাহগীর আলম সাংবাদিকদেরকে জানান, আশ্রয়ণ প্রকল্প নিয়ে কোনো ধরণের অনিয়ম মেনে নেওয়া হবে না। এ বিষয়ে কোনো কর্মকর্তার অনিয়ম গাফিলতি পাওয়া গেলে প্রয়োজনে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এছাড়াও ইট, বালি, সিমেন্টেও কিছু ত্রুটি পাওয়া যায়। এসব কারণে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৭টি স্থানের ১৪২টি ঘরের নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দিয়েছে জেলা প্রশাসক। এ বিষয়ে প্রাথমিক ভাবে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা তাপস চক্রবর্তী, ঠিকাদার নূরুজ্জামান ভূইয়া, মো. আক্তার মাস্টার এবং মো. লিটনের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। অন্য কোন সরকারী কর্মকর্তা অনিয়মের সাথে জড়িত কিনা সেটি খতিয়ে দেখা হবে।