আমরা সময়ের কথা সময়ে বলি।

Advertisement

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ইউপি সচিবদের বদলীতে মারা গেল হারাধন চাকুরী ছারল অহিদুল।।এ এঘটনার চাঞ্চল্যের সৃষ্টি

বাঞ্ছারামপুর, বিশেষ প্রতিবেদন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, সারাদেশ 9 June 2022 ২৪৪

ব্রাহ্মণবাড়িয়া।।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ইউপি সচিবদের গনবদলীতে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।মানবিক আবেদন-নিবেদন উপেক্ষিত। ৭ই জুন হারাধন সুত্রধর নামে এক ইউপি সচিব মারা যান। আরেকজন চাকুরী ছেড়ে দিয়েছেন।
হারাধন সুত্রধরের(৬০) দাহের সময় শ্মশানেও উপস্থিত ছিলেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতাল থেকে লাশ বাঞ্ছারামপুর পৌছা পর্যন্ত সার্বক্ষনিক খোজ রাখা হয়। লাশ বাড়িতে পৌছার আধঘন্টা পরই সেখানে পৌছান ইউএনও এবং এসি ল্যান্ড। ৭ জুন দুপুর আড়াইটার দিকে ব্রাহ্মনবাড়িয়া জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে মারা যান হারাধন সুত্রধর। তিনি সরাইলের শাহবাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের সচিব ছিলেন। তার মৃত্যু চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। আর হাসপাতাল থেকে দাহ পর্যন্ত সতর্ক ছিলো ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রশাসন। আর এই কারনে এই মৃত্যু নিয়ে সন্দেহের তীর বেড়েছে। সম্প্রতি হওয়া বদলী আদেশ নিয়ে জেলার ইউনিয়ন পরিষদ সচিবদের মাঝে প্রতিক্রিয়া রয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে এই মৃত্যুর ঘটনা। বাঞ্ছারামপুরের রুপসদী ইউনিয়ন পরিষদ থেকে এক মাস আগে সরাইলের শাহবাজপুরে বদলী করা হয় হারাধনকে। গত ৯ মে এখানে যোগদান করেন শাহবাজপুরে তিনি। পরিবারের লোকজন জানিয়েছেন, জেলার এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে এই বদলীতে ডিপ্রেশনে ভোগছিলেন হারাধন। তার মৃত্যুতে খবর ছড়ায়,শারিরীক ভাবে অসুস্থ হারাধন বদলী পরিবর্তনে প্রশাসনের পদস্থ এক কর্মকর্তার সাথে স্বাক্ষাত করতে গিয়েছিলেন। সেসময় কড়া ধমক দেয়া হয় তাকে। এরপরই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। ৭ জুন দুপুর ৩ টার দিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে হারাধনকে মৃত অবস্থায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক আরিফুজ্জামান জানান, হারাধন সুত্রধরকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছে। তাৎক্ষনিক তার ইসিজি করে কোন সারা মিলেনি। হারাধনকে হাসপাতালে নিয়ে আসার সাথে সাথে জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার শাখার উপপরিচালকের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মো: রুহুল আমিন এবং নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট সামিন সারোয়ার হাসপাতালে আসেন। তারা দু’জনেই হাসপাতাল থেকে লাশ এম্বুল্যান্সে উঠিয়ে বাঞ্ছারামপুরে গ্রামের বাড়িতে রওনা করা পর্যন্ত সেখানে উপস্থিত ছিলেন।হারাধনের লাশ নিয়ে বাঞ্ছারামপুরে যান স্থানীয় সরকার শাখার সিএ তাইফুর লতিফ,অফিস সহকারী বাচ্চু মিয়া এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরের নাটাই দক্ষিনের সচিব লিটন চক্রবর্তী এবং জেলা ইউনিয়ন পরিষদ সচিব সমিতির সাধারন সম্পাদক মো: হাসান ভূইয়া। সুত্র জানায়, তারা রওনা করার পর বারবারই বাঞ্ছারামপুর প্রশাসনের কর্মকর্তারা যোগাযোগ করে লাশ কোথায় আছে জানতে চান। ইউএনও একি মিত্র চাকমা ও সহকারী কমিশনার-ভূমি(এসি ল্যান্ড) কাজী আতিকুর রহমান উপজেলা কমপ্লেক্সে লাশ পৌছার অপেক্ষা করতে থাকেন। সুত্র জানায়- ওইদিন রাত সাড়ে ৮ টার দিকে হারাধনের লাশ তার বাড়িতে পৌছার পর সেখানে ছুটে আসেন ইউএনও এবং এসি ল্যান্ড। বাঞ্ছারামপুর কেন্দ্রীয় স্মাশানে দাহ শুরুর সময়ও সেখানে উপস্থিত ছিলেন তারা। নিহতের ছেলে তুষার সুত্রধর এই তথ্য দিয়ে জানান,৯টায় শুরু হয়ে রাত ১ টায় দাহ শেষ হয়। ইউএনও-এসি ল্যান্ড দাহ শুরু করার আধঘন্টা পর সেখান থেকে চলে যান। তবে সার্বক্ষনিক তারা মোবাইলে ফোন করে খোজখবর রাখেন। অনেক শান্তনা দেন। তুষার জানান- সোমবার(৬ জুন) বাড়ি থেকে শাহবাজপুর যান তার বাবা। তিনি অসুস্থ ছিলেন। হার্টের সমস্যা ছিলো। শরীরের এই অবস্থার মধ্যেই তাকে বাঞ্ছারামপুর থেকে শাহবাজপুর বদলী করা হয়। বলেন,ছোটবেলা থেকেই দেখছি বাবা এলাকায় জব করেন। এখন শেষ বয়সে তাকে বদলী করা হয় বাড়ি থেকে অতিরিক্ত দূরে। তাছাড়া তার চাকুরীও শেষের দিকে ছিলো। সে কারনে তিনি কষ্টে ছিলেন। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অফিসের কাজেই গিয়েছিলেন বলে শুনেছি। গত ২৫ এপ্রিল জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার শাখা থেকে জেলার একশো ইউনিয়ন পরিষদ সচিবের মধ্যে ৫৭ জনকে বদলী করা হয়। তবে ওই তারিখে দুটি বদলী আদেশ হয়। প্রথম আদেশ ছিলো ৫৬ জনের। পরের আদেশে ৫৭ জন করা হয়। ৫৭ নম্বর ক্রমিকেই হারাধনের নাম স্থান পায়। আদেশে জনস্বার্থে তাদের বদলীর কথা বলা হয়েছে। এতে ৯ মে’র মধ্যে নতুন কর্মস্থলে যোগদান করতে বলা হয়। জেলার ইউনিয়ন পরিষদ সচিবদের বদলী হয়েছে আগেও। কিন্তু এতো সংখ্যক এক সাথে কখনো হয়নি। তাছাড়া এবার এক উপজেলা থেকে আরেক উপজেলায় বদলী করা হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সচিব বলেন-এই বদলী দু:খজনক। আমরা ছোট চাকুরী করি। কিন্তু অনেক দূরে দূরে আমাদের বদলী করা হয়েছে।
বদলীতে মানবিক আবেদন-নিবেদনও উপেক্ষিত হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে বেকায়দায় পড়েছেন অনেকে। শেষ পর্যন্ত মারাই গেলেন হারাধন। আর নিরুপায় হয়ে চাকুরী ছেড়ে দিয়েছেন অহিদুল আলম নামের এক ইউপি সচিব। তার চাকুরী ছাড়ার বিষয়টি ব্যাপক আলোচিত। অহিদুলকে ওই বদলী আদেশে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরের নাটাই উত্তর ইউনিয়ন থেকে বাঞ্ছারামপুরের উজানচর ইউনিয়ন পরিষদে বদলী করা হয়। অহিদুল আলম জানান-তার ব্রেইন ষ্ট্রোক করেছে দু’বার। নতুন কর্মস্থলে তিনি তার ছেলেকে সাথে নিয়ে ৮ দিন গিয়েছেন। এতে তার খরচ হয়েছে ১৬ হাজার টাকা। শেষ পর্যন্ত গত সপ্তাহে চাকুরী ছাড়ার আবেদন জমা দিয়েছেন। এরআগে বদলী আদেশের পর জেলা প্রশাসকের কাছে তার শারিরীক অবস্থার বিবরন তুলে ধরে একটি আবেদন করেন। এরপর জেলা প্রশাসকের সাথে সরাসরি সাক্ষাতের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। তিনি জানান,দু-মেয়েকে সাথে নিয়ে সকাল ১০ টায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যান। বেলা ১ টায় স্বাক্ষাত হবেনা বলে তাকে ফিরিয়ে দেয়া হয়। এরপর নিরুপায় হয়ে চাকুরী ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন। অহিদুল জেলা ইউনিয়ন পরিষদ সচিব সমিতির সাবেক সাধারন সম্পাদক। ১৫ বছর এ পদে দায়িত্ব পালন করেন। ৩২ বছর হয়েছে তার চাকুরীর। আর দু’বছর পরই অবসরে যেতেন।
বদলীর বিষয়ে কথা বলার জন্যে বুধবার দুপুরের পর একাধিকবার জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার শাখার উপপরিচালকের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মো: রুহুল আমিনের মোবাইল নাম্বারে ফোন করে কোন সারা পাওয়া যায়নি।