
ডেস্ক।।
পরম্পরা অনুসারে রাজা ইন্দ্রদুম্ন যখন জগন্নাথ দেবের কাঠের বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করলেন তখন থেকে এই স্নান যাত্রার উৎসব শুরু। স্নান যাত্রার দিনটিকে জগন্নাথ দেবের আবির্ভাব তিথি বা জন্মদিন হিসেবে পালন করা হয়। স্নান যাত্রার আগের দিন জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রা দেবী এবং সুদর্শন দেবকে বেদী থেকে বিশেষ ভাবে তৈরি করা স্নান বেদীতে নিয়ে আসা হয়। পুরীর মন্দির প্রাঙ্গনে বিশেষ ভাবে তৈরি করা এই মণ্ডপকে বলা হয় স্নান মণ্ডপ। এটা এত উঁচু যে মন্দির প্রাঙ্গনের বাইরে থেকেও বেদিতে উপবিষ্ট বিগ্রহ সকল দৃষ্টিগোচর হয়।
ঐতিহ্য অনুযায়ী অনুষ্ঠানের দিন স্নান মণ্ডপকে ফুল, পাতা, গাছ ও নানা চিত্রে সজ্জিত করা হয়। সাথে তোরণ এবং পতাকাও থাকে। জগন্নাথ,বলরাম ও সুভদ্রা দেবীর বিগ্রহ ফুল দিয়ে সাজানো হয়। এর পর বিগ্রহের উদ্দশ্যে ধুপ-ধুনা জ্বালানো হয়।
পুরীতে স্নানের জন্য মন্দির প্রাঙ্গনে অবস্থিত স্বর্ণবেষ্টিত সুনাকুয়া থেকে জল সংগ্রহ করা হয়। এরপর আবার এই কুয়ার মুখ এক বছরের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয়। কুয়া থেকে নেওয়া জল সুগন্ধী দ্রব্য মিশিয়ে বৈদিক ক্রিয়াসহ পাবমনী মন্ত্র উচ্চারণের মাধ্যমে শুদ্ধিকরণ করে স্বর্ণপাত্রে সঞ্চিত করা হয়। জল আনার সময় পুরোহিতরা তাদের মুখ কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখেন যাতে জল তাদের মুখ-নিঃসৃত বস্তু বা নিঃশ্বাস দ্বারা দূষিত না হয়।স্নান মহোৎসবের পূর্বে জগন্নাথ,বলরাম এবং সুভদ্রা দেবীকে সিল্কের কাপড় দ্বারা আবৃত করা হয় এবং তারপর লাল এক ধরনের পাউডার দিয়ে প্রলেপ দেওয়া হয়। ১০৮ টি স্বর্ণপাত্র জল দ্বারা পূর্ণ থাকে। এই জল দ্বারা অভিষেক করা হয়। অভিষেকের সময় বৈদিক মন্ত্র উচ্চারণ, কীর্তন এবং শঙ্খ বাজানো হয়।
এরপর জগন্নাথ দেব এবং বলরাম দেবকে গজবেশে সাজানো হয়। এই সময় সুভদ্রা দেবীকে পদ্ম সাজে সাজানো হয়। স্নান যাত্রা উৎসবের পর ১৫ দিন মহাপ্রভুকে ভক্তদের দৃষ্টির অগোচরে রাখা হয়। এই ১৫ দিন মন্দিরে কোন অনুষ্ঠান করা নিষেধ। এই সময় ভগবান জগন্নাথ , বলরাম এবং সুভদ্রা দেবীকে রতনবেদী নামে এক বিশেষ বেদীতে রাখা হয়। এই সময়কে বলা হয় অনাবাসর কাল মানে পূজা করার জন্য অযোগ্য সময়। স্নান করানোর ফলে বিগ্রহ সমূহ বিবর্ণ হয়ে যায়। এই ১৫ দিনে জগন্নাথ দেবকে আগের সাজে ফিরিয়ে আনা হয়। ১৬তম দিনে জগন্নাথ দেবকে আবার সবার দর্শনের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।
রীতি অনুযায়ী মহাপ্রভু জগন্নাথদেব তাঁর রত্ন সিংহাসন থেকে স্নানবেদীতে আসীন হওয়ার পূর্বে পুরীর গজপতি রাজা দিব্যসিংহ দেব সোনার ঝাড়ু দিয়ে সেই বেদী পরিমার্জন করেন।