আমরা সময়ের কথা সময়ে বলি।

Advertisement

বিভিন্ন কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া মুক্ত দিবস পালিত

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, রাজনীতি, সারাদেশ 8 December 2022 ১১১

ব্রাহ্মণবাড়িয়া।।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিভিন্ন কর্মসূচীর মধ্যে দিয়ে আজ ৮ ডিসেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া হানাদার মুক্ত দিবস পালিত হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, জেলা আওয়ামীলীগসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের নাম ফলকে পুষ্পস্তক অর্পন, বীর মুক্তিযোদ্ধা পুর্নমিলনী ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। দিবসটি উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার সকালে পৌর এলাকার কাউতলীতে অবস্থিত শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের নামফলকে পুষ্পস্তবক অর্পন করেন জেলা প্রশাসনের পক্ষে জেলা প্রশাসক মোঃ শাহগীর আলম, জেলা পুলিশের পক্ষে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনিসুর রহমান, জেলা পরিষদের পক্ষে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক, যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা আল-মামুন সরকার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার পক্ষে মেয়র মিসেস নায়ার কবির, জেলা আওয়ামীলীগ, বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ ও শিক্ষক মন্ডলীসহ বিভিন্ন সামাজিক ও  সাংস্কৃতিক সংগঠন।
পুষ্পস্তবক অর্পন শেষে জেলা প্রশাসক মোঃ শাহগীর আলম বলেন, সার্বজনীনভাবে এবারই প্রথম দিবসটি পালনের জন্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ২০৪১ সালে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশে যেতে চাই।
জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আল-মামুন সরকার বলেন, স্বাধীনতার পরাজিত শক্তি বাংলাদেশকে জঙ্গী রাষ্ট্রে পরিণত করার অপচেষ্টা করছে তারা কোনো ভাবেই সফল হবেন না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় স্বাধীনতার পরাজিত শত্রুদের মোকাবেলা করতে হবে।
দিবসটি উপলক্ষ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় স্থানীয় শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ভাষা চত্ত্বরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া মুক্ত দিবস উদযাপন কমিটির উদ্যোগে বীরমুক্তিযোদ্ধাদের পুর্নমিলনী ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা আল-মামুন সরকার। এছাড়া বিকেল ৫টায় শহরের বঙ্গবন্ধু স্কয়ারে আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শাখার উদ্যোগে আলোচনা সভা ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা প্রদান করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি যুদ্ধাহত বীরমুুক্তিযোদ্ধা উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি। পৃথক পৃথক অনুষ্ঠিত সভায় বক্তারা স্বাধীনতার পরাজিত সৈনিকদের সকল ধরনের ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় ঐক্যবদ্ধ থাকার আহবান জানান।
উল্লেখ্য, ৮ ডিসেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে মুক্তিযুদ্ধের পূর্বাঞ্চলীয় জোনের প্রধান জহুর আহমেদ চৌধুরী ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের পুরাতন কাচারী ভবন সংলগ্ন তৎকালীন মহকুমা প্রশাসকের কার্যালয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেছিলেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে শত্রুমুক্ত করতে ১৯৭১ সালের ৩০ নভেম্বর থেকে জেলার আখাউড়া সীমান্ত এলাকায় মিত্রবাহিনী  পাকিস্তানী বাহিনীর উপর বেপরোয়া আক্রমন চালাতে থাকে। ১ ডিসেম্বর আখাউড়া সীমান্ত এলাকায় যুদ্ধে ২০ হানাদার নিহত হয়। ৩ ডিসেম্বর আখাউড়ার আজমপুরে প্রচন্ড যুদ্ধে ১১ হানাদার নিহত হয়। শহীদ হন ৩ মুক্তিযোদ্ধা। এরই মাঝে বিজয়নগর উপজেলার মেরাশানী, সিঙ্গারবিল, মুকুন্দপুর, হরষপুর, আখাউড়া উপজেলার আজমপুর, রাজাপুর এলাকা মুক্তিবাহিনীর দখলে চলে আসে। ৪ ডিসেম্বর পাকিস্তানী বাহিনী পিছু হটতে থাকলে আখাউড়া অনেকটাই শত্রুমুক্ত হয়ে পড়ে। এখানে রেলওয়ে স্টেশনের যুদ্ধে পাকিস্তানী বাহিনীর দুই শতাধিক সেনা হতাহত হয়। ৬ ডিসেম্বর আখাউড়া সম্পূর্ণভাবে মুক্ত হয়। এরপর থেকে চলতে থাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে মুক্ত করার প্রস্তুতি। মুক্তিবাহিনীর একটি গ্রুপ ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের দক্ষিণ দিক থেকে কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়ক দিয়ে এবং মিত্র বাহিনীর ৫৭তম মাউন্টের ডিভিশন আখাউড়া-ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেললাইন ও উজানীসার সড়ক দিয়ে অগ্রসর হতে থাকে।
শহরের চর্তুদিকে মুক্তিবাহিনী অবস্থান নিতে থাকায় পাকিস্তানী সেনারা পালিয়ে যাবার সময় ৬ ডিসেম্বর রাজাকারদের সহায়তায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজের অধ্যাপক কে.এম লুৎফুর রহমানসহ ব্রাহ্মণবাড়িয়া কারাগারে আটক থাকা অর্ধশত বুদ্ধিজীবী ও সাধারণ মানুষকে চোখ বেঁধে শহরের  কুরুলিয়া খালের পাড়ে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। ৭ ডিসেম্বর রাতের আধাঁরে পাকিস্তানী বাহিনী ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর ছেড়ে আশুগঞ্জের দিকে পালাতে থাকে। ৮ ডিসেম্বর বিনা বাঁধায় বীর মুক্তিযোদ্ধারা ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে প্রবেশ করে স্বাধীনতার বিজয় পতাকা উত্তোলন করে। মুক্ত হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া। ওই দিন সকাল ৯টার দিকে মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিকামী জনতার উপস্থিতিতে শহরের পুরাতন কাচারী ভবন সংলগ্ন তৎকালীন মহকুমা প্রশাসকের কার্যালয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন মুক্তিযুদ্ধের পূর্বাঞ্চলীয় জোনের প্রধান জহুর আহমেদ চৌধুরী। একই দিন সন্ধ্যায় জেলার সরাইল উপজেলা শত্রুমুক্ত হয়।