মাঘী পূর্ণিমা একটি মহত্ত্ব পূর্ণ তিথি

৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ : ৯:২৬ পূর্বাহ্ণ ৫২

রিপন চৌধুরী।।

আজ থেকে ৫১২৪ বছর পূর্বে এই তিথিতেই মানবরূপধারী পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ প্রকৃতির নিয়মকে বজায় রেখে জরা নামক এক ক্ষুদ্র ব্যাধের তুচ্ছ বাণকে উপলক্ষে করে তাঁর মানবলীলা সংবরণ করেছিলেন এবং ঐ তিথিতেই কলিযুগের সূচনা হয়েছিলো।এখন প্রশ্ন আসতে পারে, কৃষ্ণ যেহেতু ভগবান তবে তো তাঁর জন্ম নেই- মৃত্যু নেই। তো তাঁর দেহত্যাগের প্রয়োজন কী ছিলো !
এ প্রশ্নের উত্তর ভগবান স্বয়ং গীতায় (৩/২১) বলছেন—
“যদ্যদাচরতি শ্রেষ্ঠস্তত্তদেবেতরো জনঃ৷
স যত্প্রমাণং কুরুতে লোকস্তদনুবর্ততে॥”
অর্থ – শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিরা যেভাবে আচরণ করেন সাধারণ মানুষেরাও তার অনুসরণ করেন। তিনি যা প্রমাণ বলে স্বীকার করেন সাধারণ লোকও তারই অনুসরণ করেন।
গীতায় (২/১৩) ভগবান বলছেন —
“দেহিনোস্মিন্যথা দেহে কৌমারং যৌবনং জরা৷
তথা দেহান্তরপ্রাপ্তির্ধীরস্তত্র ন মুহ্যতি॥”
অর্থ – দেহী যে ভাবে কৌমার, যৌবন এবং জরার মাধ্যমে দেহের রূপ পরিবর্তন করে চলে, মৃত্যুকালে ঐ দেহী সেইরূপ এক দেহ থেকে অন্য কোন দেহে দেহান্তরিত হয়। স্থিত প্রাজ্ঞ পন্ডিতেরা কখনো এই পরিবর্তনে মূহ্যমান হন না।
গীতায় (২/২২) ভগবান বলছেন —
“বাসাংসি জীর্ণানি যথা বিহায়
নবানি গৃহণাতি নরোহপরাণি৷
তথা শরীরাণি বিহায় জীর্ণা-
ন্যন্যানি সংযাতি নবানি দেহী॥”
অর্থ – মানুষ যেমন জীর্ণ বস্ত্র পরিত্যাগ করে নূতন বস্ত্র পরিধান করে আত্মাও সেইরূপ জীর্ণ শরীর ত্যাগ করে নতুন শরীর ধারণ করে।
অর্থাৎ, স্বয়ং ভগবান হয়েও তাঁর সৃষ্ট সৃষ্টির শৃঙ্খলকে তিনি অমান্য করেন নি। কারণ যেহেতু তিনি মানবরূপে মানবদেহ ধারণ করে মনুষ্যজন্ম গ্রহণ করেছিলেন সেহেতু তাঁর স্বয়ংসৃষ্ট শৃৃঙ্খলকে বজায় রাখতেই মনুষ্যধর্ম পালন করে তিনি তাঁর মানবদেহ ত্যাগ করেছিলেন এবং মানবশরীরধারী অবস্থায় তিনি মানুষের সকল আচরণ-সংস্কারই পালন করেছেন।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যতদিন মানবদেহ ধারণ করেছিলেন ততদিন পর্যন্ত কলিকাল শুরু হতে পারছিলো না। তাঁর নরদেহ ত্যাগের সাথে সাথে দ্বাপর যুগের সমাপ্তি ঘটে এবং কলিযুগের সূচনা হয়েছিলো এবং সেই তিথিটি ছিলো মাঘী পূর্ণিমা এবং দিনটি ছিলো শুক্রবার।
খ্রীষ্টপূর্ব ৩১০১ অব্দে কলিযুগের সূচনা হয়। বর্তমানে কলিযুগের ৫১২৪ বছর চলছে।সনাতন শাস্ত্রসমূহে বর্ণিত চারযুগের মধ্যে সত্যযুগে কোন অধর্ম ছিলো না। ত্রেতাযুগে চারভাগের মধ্যে একভাগ অধর্ম প্রবেশ করে, দ্বাপরে ধর্ম-অধর্ম ছিলো সমান সমান অর্থাৎ ধর্ম দুইভাগ-অধর্ম দুইভাগ। কিন্তু কলিতে এসে অধর্মের পরিমাণ হয়ে দাঁড়ায় তিনভাগ। অর্থাৎ কলির চারটি পায়ের তিনটিই অধর্ম। ধর্ম মাত্র একভাগ। আর এই একভাগ ধর্মকে কেন্দ্র করেই আমরা বেঁচে আছি।
কলিযুগের শেষলগ্নে সকল অধর্মকে বিনাশ করে পুনরায় সত্যযুগের সূচনা করতে পরমেশ্বর ভগবান আবির্ভূত হবেন কল্কিরূপে। অগ্রহায়ণ মাসের শুক্লপক্ষের তৃতীয়া তিথিতে তাঁর আবির্ভাবে বিনাশ হবে সকল অধর্মের। পুনরায় স্থাপিত হবে পূ্ণ্যপূর্ণ সত্যযুগ।
বিষ্ণুর দশম অবতার হলেন কল্কি, ভবিষ্যবানী হল যে কল্কি থার্মোনিউক্লিয়ার বিজ্ঞানের সাহায্যে মানব সমাজের দুঃখ দুর্দশা দূর করবেন।

[gs-fb-comments]
Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com