
ব্রাহ্মণবাড়িয়া।।
লাশবাহী একটি পিকআপ আগরতলা ইমিগ্রেশন থেকে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসে আখাউড়া চেকপোষ্টের শূণ্য রেখার দিকে। এ যেন মাটির টানে মাটির কাছে ফিরে আসা। এইতো কয়েক দিন আগে নিজ পায়ে হেঁেট তিনি এই চেকপোষ্ট দিয়েই ভারতে গিয়েছিলেন চিকিৎসার জন্য। মাত্র ২০ দিনের ব্যবধানে ফিরে এলেন কফিনবন্দী লাশ হয়ে। বাঁচার তীব্র আকাঙ্খা, পরিবারের শত চেষ্টা ব্যর্থ করে নিজেকে শপে দিলেন মৃত্যুর কাছে। তিনি জেলার সাংবাদিক নেতা ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন জামি’র (৫০)। গত সোমবার রাত সোয়া ১১টায় ভারতের মুম্বাই টাটা মেমোরিয়্যাল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী ও ২ ছেলে রেখে গেছেন। স্বামীকে বাঁচানোর কঠিন লড়াইয়ে স্বামীর পাশে হাসপাতলে ছিলেন প্রিয়তমা স্ত্রী রীনা আক্তার। বুকে পাথর চাপা দিয়ে স্বামীর লাশ নিয়ে দেশে ফিরলেন তিনি।বাবার লাশ গ্রহণ করার জন্য চেকপোষ্টে তিন ঘন্টা অপেক্ষা করে ক্লান্ত জামির দুই শিশু সন্তান বাবার লাশ দেখে কান্নান ভেঙ্গে পড়েন। এসময় সন্তানদের জাড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকেন প্রয়াতের স্ত্রী রীনা আক্তার। এময় শূণ্য রেখায় এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারনা হয়। কে দিবে কাকে শান্তনা। সকলেই শিশুর মত ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকেন।এদিকে সাংবাদিক নেতা জামির মরদেহ আসার খবরে আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই জেলার সর্বস্তরের সাংবাদিকরা স্থল বন্দরে উপস্থিত হয়। দুপুরে লাশবাহী কফিন চেকপোষ্টে এসে পৌঁছলে শূণ্য রেখার অপেক্ষমান সাংবাদিকরা আবেগে আপ্লত হয়ে পড়েন। প্রিয় নেতাকে কফিনে দেখে অনেকেই চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। দীর্ঘদিনের সহকর্মীকে হারিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকেন কেউ কেউ। প্রিয় নেতার এই অকাল মৃত্যু যেন কিছুই মেনে নিতে পারছিলেন না।এদিকে জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন জামির মরদেহ গ্রহণ করতে সকাল থেকেই সীমান্তের শূণ্য রেখায় উপস্থিত হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকৃন্দ। এসময় অন্যান্যের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার, আখাউড়া পৌরসভার মেয়র তাকজিল খলিফা কাজল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোঃ বাহারুল ইসলাম মোল্লা, সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ আরজু, সৈয়দ মিজানুর রেজা, জেলা প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহ সভাপতি মোঃ জসিম উদ্দিন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাবেদ রহিম বিজন, প্রেসক্লাবের কোষাধ্যক্ষ মোঃ মোশাররফ হোসেন বেলাল,আখাউড়া থানার ওসি মোঃ আসাদুল ইসলাম প্রমুখ।উল্লেখ্য, রিয়াজ উদ্দিন জামি গত ৬ মাস ধরে ক্যান্সারে ভুগছিলেন। এর আগেও তিনি একবার ভারতের চিকিৎসা নিয়ে দেশে ফিরেছিলেন। কিন্তু এ যাত্রার আর তাঁর ফেরা হলো না। বাদ মাগরিব মরহুতের জানাজা অনুষ্ঠিত হবে এবং জানাজা শেষে শেরপুর কবরস্থানের চিরনিদ্রায় শায়িত করা হবে।