
আমাদের কথা ডেস্ক :
পদ্মাসেতুর নির্মাণকাজ তদারকি ও নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে টেস্ট পাইলের কাজ পর্যবেক্ষণে ব্যবহার করা হচ্ছে ড্রোন (চালকবিহীন বিমান)। ঠিকাদারিপ্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি বাংলাদেশে কোনো কাজে এবারই প্রথম এ ধরনের বিমান ব্যবহার করছে। অত্যাধুনিক ক্যামেরা দিয়ে মাওয়ার অফিস সাইট থেকে তদারকির মাধ্যমে এটি নির্মাণকাজের অগ্রগতি জানিয়ে দিচ্ছে।
আগামী অক্টোবরে পদ্মাসেতুর মূল কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করার কথা রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট বিভাগের তথ্যমতে, ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে পদ্মাসেতুতে ৪২টি পিলার থাকবে। ১৫০ মিটার পর পর পিলার বসানো হবে। এজন্য দুই পাড় ও নদীর বিভিন্ন স্থানে টেস্ট পাইল করা হচ্ছে। তবে প্রচ- স্রোতের কারণে মাঝ নদীতে নির্মাণকাজ পর্যবেক্ষণ করা বেশ কঠিন। এজন্য ড্রোনের সাহায্যে তদারকির কাজ চলছে।
প্রায় ২ ফুট দীর্ঘ ও ২ ফুট প্রস্থ ড্রোনটি ফড়িং আকৃতির। এর পাখা রয়েছে চারটি। ড্রোনটিতে বসানো আছে হাই রেজুলেশন ক্যামেরা, যার দ্বারা নির্মাণকাজের স্থির ও ভিডিও চিত্র সংগ্রহ করা হয়।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, মূল সেতু নির্মাণ প্রস্তাবে ড্রোন ব্যবহারের কথা জানায় চায়না মেজর ব্রিজ। গত মাসে এটি চীন থেকে আনা হয়েছে। এর জন্য পৃথক কোনো মূল্য নেওয়া হচ্ছে না। ঠিকাদারিপ্রতিষ্ঠান নিজস্ব ব্যয়ে এটি সংগ্রহ ও পরিচালনা করছে।
সাধারণত ড্রোন ব্যবহারে সিভিল এভিয়েশন অথরিটি ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অনুমোদন নিতে হয়। এক্ষেত্রেও পদ্মাসেতুর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সেনাবাহিনীর ৯৯ ব্রিগেডের অনুমোদন নেওয়া হয়েছে। এছাড়া সিভিল এভিয়েশন অথরিটির অনুমোদনও সংগ্রহ করা হয়েছে।
পদ্মাসেতুর প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, পদ্মাসেতু একটি বিশেষ প্রকল্প। আর পদ্মা খরস্রোতা একটি নদী। তাই এ নদীতে সেতু নির্মাণ বেশ জটিল প্রক্রিয়া। এজন্য প্রকল্পের চূড়ান্ত প্রস্তাবেই ড্রোন ব্যবহারের কথা জানায় চায়না মেজর ব্রিজ। আর সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের অনুমতি নিয়েই এটি ব্যবহার করা হচ্ছে। নির্মাণ শেষে এটি ফেরত নিয়ে যাবে ঠিকাদারিপ্রতিষ্ঠানটি।
জানা গেছে, পদ্মাসেতুর প্রতিটি প্যাকেজের কাজ শুরু হলেও আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়নি। প্রকল্পের প্রধান দুটি অংশ চীনের ঠিকাদারিপ্রতিষ্ঠান করছে। তাই আগামী মাসে চীনের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরের সময় সেতুটির নির্মাণকাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ-চীন কূটনৈতিক সম্পর্কের ৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ঢাকা আসবেন চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিকিয়াং। সে সময় তার সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেতুটির নির্মাণকাজ উদ্বোধন করবেন। এরই মধ্যে প্রকল্পটির উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনায় (ডিপিপি) উদ্বোধন বাবদ ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, পদ্মার দুপাড়ে মাটিতে টেস্ট পাইলিং চলছে। নদীর বিভিন্ন স্থানেও পাইলিং করা হচ্ছে। পাশাপাশি বোল্ড পাইলিং করা হচ্ছে। এজন্য নদীর দুপাড়েই প্রচুর লোহার পাইপ আনা হয়েছে। আর পাইপ দিয়ে পাইলিং ব্যবহার করা হচ্ছে জার্মানের দুটি হ্যামার। এর মধ্য একটির ওজন আড়াই হাজার টন ও অপরটির ওজন ১০ হাজার টন। সব মিলিয়ে মূল সেতুর কাজ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কিছুটা এগিয়ে আছে।
প্রকল্পের নদী শাসনের কাজ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কিছুটা পিছিয়ে আছে। এর মধ্যে সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকে নদীভাঙন শুরু হওয়ায় কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড রক্ষায় দ্রুত ব্যবস্থা নেয় চীনের সিনোহাইড্রো কর্পোরেশন।
পদ্মা নদীর দুপাড়ে সেতুর সংযোগ সড়ক নির্মাণকাজও পুরোদমে এগিয়ে চলছে। এপাড়ে মুন্সীগঞ্জ জেলার লৌহজং থানার মেদেনীমন্ডল ও কুমারভোগ দুটি ইউনিয়নের মধ্যে দিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে এ সংযোগ সড়ক। ওপাড়ে শরিয়তপুর জেলার জাজিরা থানার নাওডোবা ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে সাড়ে ১০ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণ কাজ চলছে। উভয় সংযোগ সড়কের কাজই যৌথভাবে করছে বাংলাদেশের আবদুল মোনেম লিমিটেড ও মালয়েশিয়ার এইচসিএল কনস্ট্রাকশনস।
উল্লেখ্য, পদ্মাসেতুর ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব চূড়ান্ত করেছে সেতু বিভাগ। এরই মধ্যে তা অনুমোদনে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। দুই দফা বৃদ্ধির পর প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা।