ক্ষতিকর পলিথিন ব্যবহার নষ্ট করছে পরিবেশ

২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৫ : ৯:১২ পূর্বাহ্ণ ৬১৫

আমাদের কথা ডেস্ক :

নিষিদ্ধ পলিথিনে সয়লাব রাজধানীসহ সারাদেশের বাজার। পলিথিনের শপিং ব্যাগ বিক্রয়-বিতরণ, ব্যবহার, মজুদকরণ নিষিদ্ধ থাকলেও বাজারে এর প্রকাশ্যে ব্যবহার আগের চেয়ে অনেকগুণ বেড়েছে। নেই ভ্রাম্যমান আদালতের তেমন পরিচালনা, মাঝে মাঝে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা হলে কিছু দোকানিকে জরিমানা করা হয়। ভয়ে অন্য দোকানিরা পালিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর আবার তারা চলে আসে। পলিথিনের পসরা সাজিয়ে বসে। আইনি দুর্বলতার সুযোগে পরিবেশ বিপর্যয়কারী পলিথিন এখন সহজলভ্য। এর যত্রতত্র ব্যবহারের ফলে ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে, উর্বরতা হারাচ্ছে মাটি, ভরাট হচ্ছে নদী, অপরিচ্ছন্ন হচ্ছে সড়কগুলো। যার ক্ষতিকারক ফল ভোগ করছে দেশবাসি। পরিবেশ বিজ্ঞানীদের মতে, অতি সূক্ষ্ম ইথিনিল পলিমার পলিথিন তৈরিতে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার হয় যা অপচনশীল। এটি ক্ষতিকর কার্বন-ডাই অক্সাইড গ্যাস সৃষ্টির জন্য দায়ী। সিনথেটিক মেটেরিয়ালস দ্বারা তৈরি পলিথিন ব্যাগ সহজে পচে না অধিকন্তু পানিরোধক বলে এটা জমিতে পড়লে ব্যাকটেরিয়া তৈরিতে বাধা সৃষ্টি করে। ফলে জমির উর্বর শক্তি নষ্ট হয়। এছাড়া এতে বহন করা যে কোনো ধরনের খাবার দীর্ঘক্ষণ থাকলে বিষক্রিয়ায় খাবার নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
স্বাস্থ্য ও পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতিকর পলিথিন ব্যাগের উৎপাদন, ব্যবহার, বিক্রি ও বাজারজাতকরণে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও এতে বাজার সয়লাব। খাদ্যদ্রব্য পলিথিন ব্যাগের মাধ্যমে ভোক্তাদের হাতে তুলে দিচ্ছেন দোকানিরা। এছাড়া অভিজাত রেস্টুরেন্ট, মুদির দোকান, কাঁচাবাজার থেকে শুরু করে ফুটপাতের প্রায় সব দোকানের পণ্য বহনে ব্যবহৃত হচ্ছে পলিথিন ব্যাগ।
এমন এলাকা পাওয়া দুষ্কর, যেখানে পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার নেই। ক্ষতিকর ও নিষিদ্ধ এ পলিথিন ব্যাগের বিরুদ্ধে বাজারে প্রায়ই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। কিন্তু তা যথেষ্ট নয় বলে মনে করেন পরিবেশবিদরা।
রাজধানীর শান্তিনগর, মালিবাগ, মিরপুর, কারওয়ান বাজার, পান্থপথ, হাতিরপুল মোহাম্মদপুরসহ বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, পলিথিন ব্যাগে করে অধিকাংশ পণ্য-দ্রব্য ভোক্তাদের কাছে তুলে দিচ্ছেন বিক্রেতারা। এমনকি বাজারের ভিতরেই লোকচক্ষুর সামনে অন্য পণ্যের সঙ্গে পলিথিন ব্যাগও বিক্রি হচ্ছে “োরছে।
মিরপুর শেওড়াপাড়া কাঁচা বাজারের মুদি দোকানদার হাসান আলী ও মোহাম্মদপুরের কাঞ্চন মিয়া জানান, কয়েক বছর আগে পলিথিনের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান চালানো হতো। এখন তা কমে গেছে। তবে মাঝে মধ্যে প্রশাসনের লোকেরা বাজারে এলে পলিথিন লুকিয়ে রাখা হয়।
পরিবেশবিদরা মনে করেন, পলিথিন প্রস্তুতকারী কারখানায় উৎপাদন বন্ধ না করে শুধু বাজারে ভ্রাম্যমাণ অভিযান চালানোর মাধ্যমে এটি বন্ধ করা সম্ভব নয়। বিকল্প হিসেবে পাটের ব্যাগের ব্যবহার ও উৎপাদন বাড়ানো দরকার।
পরিবেশবাদীদের অভিযোগ, ২০০২ সালে আইন করে পলিথিন ব্যাগের উৎপাদন, ব্যবহার, বিপণন ও বাজারজাতকরণের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে সরকার। কিন্তু এ আইন বাস্তবায়নে সরকারের সদিচ্ছার অভাব রয়েছে।
তাদের আরও অভিযোগ, বাজারে পলিথিন ব্যাগের বিরুদ্ধে নিয়মিত মনিটরিং নেই। এ কারণে অসাধু পলিথিন ব্যাগ প্রস্ততকারী প্রতিষ্ঠানগুলো রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলাশহরে “োরছে উৎপাদন করছে অপচনশীল এসব ব্যাগ। আর তা বাজারজাতকরণের মাধ্যমে দোকানদার হয়ে সাধারণ মানুষের হাতে পৌঁছে, ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে তৈরি পলিথিন নষ্ট করছে পরিবেশ।
নিষিদ্ধ পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ না হওয়ার জন্য আইনের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা না থাকা, সরকারের সদিচ্ছা ও রাজনৈতিক অঙ্গীকারের অভাবকে দায়ী করছে পরিবেশবাদীরা।
স্বাস্থ্য বিজ্ঞান ও পরিবেশবাদীদের মতে, পলিথিন অপচনশীল পদার্থ হওয়ায় দীর্ঘদিন প্রকৃতিতে অবিকৃত অবস্থায় থেকে মাটিতে সূর্যালোক, পানি ও অন্যান্য উপাদান প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করে। পচে না বলে মাটির উর্বরতা শক্তি কমে যায় ও উপকারী ব্যাকটেরিয়া বিস্তারে বাধা তৈরি করে।
এছাড়া পলিথিন মোড়ানো গরম খাবার খেলে মানুষের ক্যান্সার ও চর্মরোগের সংক্রমণ হতে পারে। পলিথিনে মাছ ও মাংস প্যাকিং করলে তাতে অবায়বীয় ব্যাকটেরিয়ার সৃষ্টি হয়, যা দ্রুত পচনে সহায়তা করে।
অন্যদিকে, উজ্জ্বল রঙের পলিথিনে রয়েছে সীসা ও ক্যাডমিয়াম, যার সংস্পর্শে শিশুদের দৈহিক বৃদ্ধি ক্ষতিগ্রস্ত ও চর্মপ্রদাহের সৃষ্টি হয়।
বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ (২০০২ সালের ৯ নম্বর আইন দ্বারা সংশোধিত) এর ৬ক ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সরকার সব বা যেকোনো প্রকার পলিথিন শপিং ব্যাগ, বা পলিইথাইলিন বা পলিপ্রপাইলিনের তৈরি অন্য কোনো সামগ্রী পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর হলে, এরূপ সামগ্রীর উৎপাদন, আমদানি, বাজারজাতকরণ, বিক্রয়, বিক্রয়ের জন্য প্রদর্শন, মজুদ, বিতরণ, বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে পরিবহন বা বাণিজিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করেছে।
সম্প্রতি অবসরে যাওয়া পরিবেশ অধিদফতরের (সাবেক) অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. শাহজাহান একটি অনলাইনকে বলেছিলেন, পলিথিন ব্যবহার করে মাটিতে ফেলে দিলে নি:সন্দেহে পরিবেশের জন্য ভয়াবহ ক্ষতি হবে। এজন্য এ নিয়ে আইনও করা হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে পলিথিনের পুনরায় ব্যবহারের ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও পুনরায় ব্যবহারের ব্যবস্থা করতে পারে।
অপচনশীল দ্রব্যবহনে বিকল্প হিসেবে পাটের তৈরি শপিং ব্যাগের ব্যবহার বাড়ালে, পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার কমে আসবে বলে মনে করেন সাবেক এ পরিবেশ কর্মকর্তা।

[gs-fb-comments]
Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com