আমরা সময়ের কথা সময়ে বলি।

Advertisement

সরকারি চাকরিজীবীরা এবার পেল দারুণ এক সুখবর, উচ্চতর গ্রেড পাবেন যারা

জাতীয় 16 May 2017

pay-iscal

সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য একটি দারুণ সুখবর এসেছে। এখন থেকে উচ্চতর গ্রেড পাবেন টাইম স্কেল কিংবা সিলেকশন গ্রেড প্রাপ্তরা। এরই মধ্যে সরকারি চাকরিজীবীদের স্বয়ংক্রিয়ভাবে উচ্চতর গ্রেড পাওয়ার বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দেওয়া আদেশ অবৈধ ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট।

সংশ্লিষ্ট সংক্ষুব্ধ চাকরিজীবীদের এ সংক্রান্ত এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও কাজী ইজারুল হক আকন্দের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ গত মাসে এ রায় দেন।

সংশ্লিষ্ট আদালত বলেছে, উচ্চতর গ্রেডে যাওয়ার ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়ের স্পষ্টীকরণ করে দেওয়া ব্যাখ্যা মূল পে স্কেলের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। ফলে এ সংক্রান্ত পরিপত্রটি অবৈধ। আর এতে করে টাইম স্কেল কিংবা সিলেকশন গ্রেড প্রাপ্তদের উচ্চতর গ্রেড পাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো বাঁধা নেই।

সংশ্লিষ্টরা বলেন, সরকার হাইকোর্টের রায় কার্যকর করলে যারা এরই মধ্যে একাধিক টাইম স্কেল কিংবা সিলেকশন গ্রেড পেয়েছেন চাকরিতে বয়সের শর্তসাপেক্ষে তারাও উচ্চতর গ্রেডে যেতে পারবেন। অর্থাৎ পদোন্নতিবঞ্চিত সরকারি কর্মচারীদের আর্থিক সুবিধা আরো বাড়বে বলে সংশ্লিষ্টদের দাবি।

তবে সূত্রটি জানায়, গত ৪ জানুয়ারি দেওয়া এ রায়ের কপি অর্থ মন্ত্রণালয় এখনো পায়নি। পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি হাতে আসার পর পর্যালোচনা করে আপিলের উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে তারা জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাহবুব আহমেদ বলেন, কাগজপত্র দেখার পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

রিট আবেদনকারীর পক্ষে ব্যারিস্টার ইব্রাহিম খলিল বলেন, উচ্চতর গ্রেডে যাওয়ার ক্ষেত্রে মূল পে স্কেলের দেওয়া সুবিধা অর্থ মন্ত্রণালয় পরিপত্রের মাধ্যমে যে প্রক্রিয়ায় স্পষ্টীকরণ করেছে তা আইন অনুযায়ী করা হয়নি। পে অর্ডার ২০১৫ আইনের কথা উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, নির্বাহী আদেশ দিয়ে মূল আইন পরিবর্তন করা যায় না। ফলে পরিপত্রটি পে স্কেলের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। তাই আদালত রিটের প্রেক্ষিতে সঠিক রায় দিয়েছে।

জানা যায়, হাইকোর্টের বেঞ্চ অফিসার ইব্রাহিম আলম ভূঁইয়া রিট আবেদনকারীর একজন। তিনি বলেন, একই পদে দীর্ঘ সময় ধরে কর্মরত থেকে একটি টাইম স্কেল পেয়েছি। হাইকোর্টের রায় কার্যকর হলে নতুন স্কেল অনুযায়ী উচ্চতর গ্রেডে যাওয়ার সুযোগ পাব।

ইব্রাহিম আলম দাবি করেন, অর্থ মন্ত্রণালয় পরিপত্র জারি করে সরকারি কর্মচারীদের আর্থিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত করেছে।
জানা গেছে, অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওই আদেশের ফলে প্রায় ৩ লাখ সরকারি চাকরিজীবী বাড়তি আর্থিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।

পরিপত্রে যা বলা হয়েছে: গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর এক পরিপত্রে অর্থ মন্ত্রণালয় জানায়, একই পদে কর্মরত কোনো সরকারি কর্মচারী দুই বা তার চেয়ে বেশি টাইম স্কেল বা সিলেকশন গ্রেড পেয়ে থাকলে নতুন পে স্কেল অনুযায়ী তিনি উচ্চতর গ্রেড পাবেন না। তবে এরই মধ্যে একটিমাত্র টাইম স্কেল অথবা সিলেকশন গ্রেড পেলে নতুন স্কেলে শুধু একটি উচ্চতর গ্রেড পাবেন।

পরিপত্রে উল্লেখ করা হয়, সরকারি কর্মচারীদের প্রদত্ত এসব আর্থিক সুবিধা কোনোক্রমেই ২০১৫ সালের ১৫ ডিসেম্বরের আগে দেওয়া হবে না। পরিপত্রের এ আদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন সংক্ষুব্ধ সরকারি চাকরিজীবীরা।

জানা গেছে, পরিপত্রটি জারি হওয়ার পর সরকারি চাকরিজীবীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। তাদের দাবি ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে এটি জারি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এর মাধ্যমে পদোন্নতিবঞ্চিতদের আর্থিক সুবিধা কমানো হয়েছে। এক পর্যায়ে সরকারি চাকরিজীবীদের বিভিন্ন সংগঠন উলি্লখিত পরিপত্রের আদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে গত বছরের নভেম্বর থেকে ডিসেম্বরের বিভিন্ন সময়ে হাইকোর্টে একাধিক রিট করেন।

এর মধ্যে হাইকোর্টের বেঞ্চ অফিসারদের দায়ের করা রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শুনানি শেষে ৪ জানুয়ারি একটি বেঞ্চ অর্থ মন্ত্রণালয়ের দেওয়া আদেশ অবৈধ ঘোষণা করেন। এ ছাড়া পৃথকভাবে রিট আবেদন করেন সরকারি কর্মচারী পরিষদ, প্রাথমিক ট্রেনিং ইনস্টিটিউট অ্যাসোসিয়েশন অডিটর ও কৃষি ডিপ্লোমা সমিতি, পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাসহ আরও অনেকে। বর্তমানে এসব রিট বিচারাধীন রয়েছে।

মূল পে স্কেলে যা বলা আছে: সরকারি চাকরিতে নিচের স্তরের কর্মচারীদের পদোন্নতির সুযোগ সীমিত। এসব পদোন্নতিবঞ্চিতদের আর্থিক সুবিধা নিশ্চিত করতে বর্তমান সরকার বহুল আলোচিত টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেডের পুুরনো প্রথা বাতিল করে। একই সঙ্গে স্বয়ংক্রিয়ভাবে উচ্চতর গ্রেড প্রথা প্রবর্তন করে। নতুন স্কেল অনুযায়ী কোনো কর্মচারী একই পদে ১০ বছর চাকরি করার পর পদোন্নতি না পেলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে দুটি উচ্চতর গ্রেড পাবেন। এর মধ্যে একটি পাবেন চাকরির ১০ বছর পর ১১তম বছরে। অপরটি ১৬ বছর পর ১৭তম বছরে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মূল পে স্কেলে এ বিধান করা হলেও এ সুবিধা কীভাবে দেওয়া হবে সে বিষয়ে কোনো দিকনির্দেশনা ছিল না। এ প্রেক্ষাপটে মূল পে স্কেলে দেওয়া উলি্লখিত নিয়ম কার্যকর করতে স্পষ্টীকরণের ব্যাখ্যা দিয়ে একটি পরিপত্র জারি করে অর্থ মন্ত্রণালয়। মূল পে স্কেল কার্যকর হওয়ার তিন মাস পর গত বছরের সেপ্টেম্বরে এটি জারি করা হয়।

সম্মিলিত সরকারি কর্মচারী পরিষদের সভাপতি শফিউল আলম বলেন, তারা ২০১৫ সালের কার্যকর হওয়া মূল পে স্কেলের দেওয়া আর্থিক সুবিধা পুরোপুরি বাস্তবায়ন চান। প্রাইমারি ট্রেনিং ইনস্টিটিউট অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব সেলিম উদ্দিন বলেন, নতুন পে স্কেলে পদোন্নতিবঞ্চিতদের স্বয়ংক্রিয়ভাবে উচ্চতর গ্রেডে যাওয়ার সুযোগ দিয়ে আর্থিক সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে। কিন্তু পরে অর্থ মন্ত্রণালয় পরিপত্রের মাধ্যমে সেই সুবিধা কেড়ে নেয়। ফলে সরকারি চাকরিজীবীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়।