

মুক্তিযোদ্ধাদের অসম সাহসিকতার বিনিময়ে। এই দেশটাকে এই মানুষগুলো মৃত্যুভয়কে
অতিক্রম করে স্বাধীন করেছিল কি কেবল একটা ভূখণ্ড পাওয়ার জন্য?
না, মাথা উচু করে স্বাধীন ভূখণ্ডে মানুষের অধিকার নিয়ে বাঁচার জন্য।
আমার বাবা ১৯৭১ সালে ছিলেন কিশোর মুক্তিযোদ্ধা। সেই সময়ের দুরন্ত কিশোর অসংখ্য স্বপ্ন আর আশা নিয়ে যুদ্ধে যোগদান করেছিলেন।
কিন্তু আজ আমার বাবার একমাত্র সম্বল বাড়িটি, যেটার একমাত্র উত্তরাধিকার আমি। আমার নামে বাড়িটি দানপত্র দলিল করে লিখে দিয়ে গিয়েছেন। দূরারোগ্য কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ২০১৬ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
এরপর থেকেই বগুড়া শহরে আমার বাড়িটি জবর দখল করা হয়। আমি ৩৬তম বিসিএস পরীক্ষায় রিটেনে এলাউ হওয়ার পর ভাইভার জন্য আমার বাবার মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট আনতে গেলে আমাকে বলা হয়েছে, আমি যদি এই বাড়িটি লিখে দেই, তাহলে মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট পাব।
আমার বাড়ির দোতালায় বাসদ ভাড়া নিয়েছে অফিস রুম হিসেবে। সেই অফিসেই বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ওবায়দুল হাসান ববি আমাকে ঘুসি মেরেছে। সেই সময় আমি এমনকি থানায় যাওয়ার সাহসটুকুও পাইনি।
আমি বগুড়া মোহাম্মাদ আলী হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেলে প্রেসক্রিপসনের উপরে পুলিশ কেস লিখে চিকিৎসা দিয়েছে। আমি আমার ভাইভা বোর্ডে মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট দেখাতে পারিনি।
ভাইভা বোর্ডে আমাকে প্রশ্ন করা হয়েছে, “আপনি কি আসলেই মুক্তিযোদ্ধার সন্তান?
এই প্রশ্নটা আমার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে, এই দেশটা কি সত্যি আমাদের?
আমি গত মার্চ মাস থেকে থানা পুলিশ সমস্ত জায়গায় ঘুরেছি। থানার ওসি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন,
“ববির বিরুদ্ধে কেস দিয়ে টিকতে পারবেন?”
আমি সত্যি জানি না, একজন মাদক ব্যবসায়ী, সন্ত্রাসী, ভূমি দস্যু পুলিশের এই নির্লজ্জ প্রশ্নের উত্তর। সত্যি কি এই বাংলায় একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হেরে যাবে?
তথ্য আপডেট:
আমার কোন ভাই বা বোন নাই। আমার বাবার ২য় স্ত্রীর কোন সন্তান নেই। আমার বাবার নিজের কোন ভাই নেই। আমি আমার বাবার একমাত্র সন্তান এবং একমাত্র উত্তরাধিকারী। তারপরেও বাবা মুক্তিযোদ্ধা এ, কে, এম, আমিনুল ইসলাম মিঠু উক্ত জমিসহ বাড়িটা আমাকে দানপত্র দলিলের মাধ্যমে ২০১৫ সালে লিখে দিয়ে যায়।
এখানে দলিল নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোন জায়গা নেই। আমার বাবার ২য় স্ত্রী কে সামনে রেখে জেলা আওয়ামী লীগের পদাধিকার ব্যবহার করে ববি আমার বড়ি দখল করে রেখেছে। বাবার মৃত্যুর পর থেকে আজ পর্যন্ত ভোগ দখল এবং ভাড়া আদায় করে আসছে, যার একটি টাকাও আমি পাইনি।
গত ৬ ই মার্চ আমি বাবার মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট আনতে গেলে আমাকে ঘরে ঢুকতে তো দেয়নি। বাসদ অফিসে আটকে ববি ও তার দলবল জোর করে বাড়ি লিখে নেয়ার চেষ্টা করে, অস্বীকার করলে শারীরিক ভাবে আঘাত ও হয়রানি করতে থাকে।
প্রাণ বাঁচানোর জন্য চিৎকার করলে নিচতলার লোকজন এসে আমাকে বাঁচায়। নয়ত সেই দিনই হতো আমার জীবনের শেষ দিন।
লোকজন ধরে আমাকে মোহাম্মাদ আলী হাসপাতালে নিয়ে যায়। ওখানে ডাক্তাররা আঘাতের ধরন দেখে পুলিশ কেস লিখে প্রেসক্রিপশন দেয়। আমরা এক চোখে রক্ত জমে যায়। সেই চোখে এখনো ভাল দেখতে পাই না। সেই থেকে আজ অবধি নানাভাবে হুমকি, গালাগালি দিয়ে আসছে। এখন পর্যন্ত আমি চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি, থানায় আমার জিডি পর্যন্ত গ্রহণ করেনি।