
রিপন চৌধূরী।।
দেবর্ষি নারদ এক কঠোর পরিশ্রমী ব্যাক্তিকে ডেকে বললেন,
”পুত্র শোনো যাদের জন্য তুমি এত কাজ করছো পরিশ্রম করছো তারা কি তোমাকে ভালোবাসে ?
এই বৃদ্ব বয়সে যাদের জন্য এতো কষ্ট করছো ,যাদের কে খুব ভালোবাসো কিন্তু ওরাতো কেও তোমাকে ভালোবাসে না , হে পুত্র এই মিছে মায়া ত্যাগ করে আমার সাথে স্বর্গে গমন করো… ?”
লোকটি বললেন, কি বলছেন প্রভু ? আমি এখানে খুব সুখে আছি ,এখানে আমাকে সবাই খুবই ভালোবাসে, আমার স্ত্রী -পুত্র , পরিবার – পরিজন , আত্মীয় -স্বজন ও বন্ধু -বান্ধব সকলেই।
দেবর্ষি নারদ বললেন, পুত্র তুমি ভুল ভাবছো …ঠিক আছে আজ বাড়ি গিয়ে সকলকে জিজ্ঞাসা করো তোমাকে কে কে ভালোবাসে , তোমার মৃত্যুর পর কে কি করতে চায় বা দিতে চায় এক বার সেগুলি জিজ্ঞাসা করে দেখো ? কাল এখানেই আমি আবার আসবো।
#বৃদ্ধ টি বাড়ি গিয়ে সকলকে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসা করছেন।
প্রথমে তার স্ত্রী কে বলছেন হ্যা গো তুমি আমাকে কতটা ভালোবাসো ,আমি যদি মরে যাই তুমি কি করবে ?
স্ত্রী বলছেন ছি ছি আপনি এমন কথা বলছেন কেন… ? আমি তো আপনাকে খুব ভালোবাসি ,আপনি চলে গেলে আমি কি ভাবে বেঁচে থাকবো ,তাই আমিও মরে যাবো। বৃদ্ধ মনে মনে ভাবছেন ও আমাকে এত ভালোবাসে ,সে আমার সাথে মরতে চাই , আর প্রভু কি বললেন কেও আমাকে একটুও ভালোবাসে না।
বৃদ্ধ তার পুত্র কে ডেকে বললেন পুত্র তোমরা আমাকে কত টা ভালোবাসো ? পুত্র বলছেন পিতা আজ কেন হঠাৎ এমন কথা বলছেন ?
আমরা তো আপনাকে অনেক ভালোবাসি ,আপনি চলে গেলে আমরা অসহায় হয়ে যাবো আমরা পিতৃ হারা হয়ে যাবো ,আপনি আমাদের ছেড়ে যাবেন না পিতা। তখন পিতা বললেন দেখো পুত্র কেউতো আর সারা জীবন বেঁচে থাকে না ….।
একই ভাবে নাতি -নাতনি ,পরিবারের সকলকে জিজ্ঞাসা করলেন সকলে একই মধুর মধুর কথা বলে বৃদ্বকে মোহিত করল।
#পরদিন বৃদ্বটি নারদজীকে বললেন, প্রভু আপনার কথাতো ঠিক হলো না ? ওরা সকলেই আমাকে খুব ভালোবাসে ,আমার স্ত্রী তো আমার সাথে মরতেও রাজি আছে।
দেবর্ষি নারদ বললেন, ”পুত্র ওরা তোমায় নয় তোমার দেহকে ভালোবাসে ,আজ ওদের পরিশ্রম করে খাওয়াচ্ছ তাই বলছে ভালোবাসি…। পুত্র এবার তুমি নিজেই পরীক্ষা করে দ্যাখো , এই নাও একটি হর্তকি দিলাম তোমায়। এটি মুখে দিলেই তোমার শরীর মরে যাবে ,কিন্তু তোমার আত্মা সব শুনতে পাবে ,যখন গুলিটি মুখ থেকে বের করে ফেলবে তখন পূর্ব অবস্থায় ফিরে আসবে। তবে পুত্র বাড়ি গিয়ে তোমার মনের যা যা ইচ্ছা সেই জিনিস গুলো চাইবে ,আর ঘরের ভিতর চার হাত পা টান করে দিয়ে পরে থাকবে ,তাহলে সব বুঝতে পারবে”।
#বৃদ্ধ বাড়ি ফিরে প্রভুর কথা মতো সকলকে ডেকে বলছেন আজ আমি ইহলোক ত্যাগ করবো তাই আমার ইচ্ছা বাড়ির এই বড় আম গাছ টি কেটে যেন আমাকে পোড়ানো হয়। আর আমার সাথে যেন কিছু সোনাযদানা-টাকা -পয়সা দিয়ে দেওয়া হয় ?
বৃদ্বের এই সব কথা শুনে সকলে কান্না শুরু করে দিল।
নারদ মুনির কথামত বৃদ্ধ ঠিক তাই করলেন ,ঘরে গিয়ে হাত পা শক্ত টান করে দিয়ে পরে রইলেন। সকলে খুব কান্না করতে থাকলেন ,উনার স্ত্রী পায়ের কাছে বসে কান্না করছেন। এবারে প্রতিবেশীরা এসে বলছেন দেহ সৎকার্যের জন্য ঘর থেকে উনাকে বের করা হোক ?
সকলে মিলে উনার দেহ বের করার চেষ্টা করছেন ,কিন্তু হাত পা টান থাকায় ঘর থেকে বেরোচ্ছে না। সকলে সিধান্ত নিলেন দরজা ভেঙ্গে ফেলা হোক। এমন সময় উনার পুত্ররা বলল, নতুন দরজা অনেক দামি ,যে চলে গেছে সে তো আর ফিরবে না ,উনার হাত পা ভেঙ্গে বের করেন। এই কথা সে শুনে বৃদ্ব ভাবলো এই তোমার পিতার প্রতি ভালোবাসা ,বৃদ্ধ দেখলো ভাব খারাপ তাই নিজেই হাত পা নরম করে নিলেন।
সবাই বৃদ্বের দেহ বাইরে বের করে আনলেন। এক প্রতিবেশী বলছেন উনার ইচ্ছা ছিল বাড়ির বড় আম গাছ টি দিয়ে যেন উনাকে পোড়ানো হয়।
তা শুনে উনার স্ত্রী বলছেন, না না যে গেছেন তো গেছেন ,আম গাছ কেটে কি হবে ,আমাদের এত ফলদায়ক, আম আর খেতে পারব না। তারচেয়ে বাজার থেকে কাঠ কিনে পুড়িয়ে দিলেই হয়।
এই কথা শুনে বৃদ্ধ ভাবছেন এই তোমার ভালোবাসা , তুমি বলেছিলে আমার সাথে তুমিও মরে যাবে ,এখন আম গাছ তাও সেটা কাটতে দিলে না ,এই তোমাদের ভালোবাসা।
#তখনি দেবর্ষি নারদ মুনি ওই বাড়িতে এসে ,বৃদ্বের মুখ থেকে হর্তকিটি বের করে দিয়ে চলে যাচ্ছেন ,এমন সময় বৃদ্ধ ডেকে বললেন, দাঁড়ান প্রভু আমিও যাবো ,এই মিথ্যা মায়ার সংসারে আর থাকতে চাই না ,
যেখানে কেউ আমার নয় সেখানে থেকে কি করবো আপনি আমাকে নিয়ে চলুন প্রভু”।
এই বলে তিনি নারদ মুনির সঙ্গে চলে গেলেন।
আত্মীয়পরিজন অবাক হয়ে বৃদ্বের জীবন ফিরে পাওয়া ও তার চলে যাওয়া দেখতে লাগল, কেউ কোন একটি শব্দ উচ্চারন করার ভাষা রইল না।