নামী ব্র্যান্ডের মোড়কে ভেজাল প্রসাধনী

১৮ জুলাই, ২০১৯ : ৬:৪৩ পূর্বাহ্ণ ৩৮৮

ঢাকা।।

একটি গুদামে র‌্যাবের ভেজালবিরোধী অভিযান। গতকাল রাজধানীর চকবাজারে। একটি গুদামে র‌্যাবের ভেজালবিরোধী অভিযান। গতকাল রাজধানীর চকবাজারে। রূপচর্চায় বিদেশি নামীদামি ব্র্যান্ডের প্রসাধনীর চাহিদা বেশ। এসব নামী ব্র্যান্ডের মোড়ক ব্যবহার করে ভেজাল প্রসাধনী তৈরি হয় কেরানীগঞ্জের বিভিন্ন কারখানায়। পরে সেগুলো চকবাজারের গুদামে পুরে রাখা হয়। সেখান থেকে ছড়িয়ে পড়ে রাজধানীর নামী বিপণিবিতান, সুপারশপ থেকে শুরু করে বিভিন্ন শহর ও মফস্বলের দোকানে।

চকবাজারে এমন তিনটি গুদাম এবং বিভিন্ন দোকানে গতকাল মঙ্গলবার অভিযান চালায় র‌্যাব। ভেজাল পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাত করার দায়ে ১০ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড এবং ৪৮ লাখ টাকা জরিমানা করেন র‍্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। গুদাম ও দোকানগুলো সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে।

র‍্যাব–১০ ও মান নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বিএসটিআইয়ের যৌথ উদ্যোগে অভিযানে নকল প্রসাধনী ছাড়াও গুদামে শিশু ও বয়স্কদের ডায়াপার, স্যানিটারি ন্যাপকিনসহ এমন কিছু পণ্য পাওয়া গেছে, যার কোনোটিরই মেয়াদ ছিল না। এসব পণ্যে নতুন করে মেয়াদ বসিয়ে বাজারজাত করা হয়।

অভিযান শুরুর পর বেলা একটার দিকে চকবাজারের কামালবাগ এলাকায় একটি গুদামে বিপুল পরিমাণ প্রসাধনী খুঁজে পায় র‍্যাব। তাদের কাছে তথ্য ছিল, এগুলো নকল প্রসাধনী। তবে গুদামের মালিক ফারুক আহমেদ দাবি করেন, এগুলো নকল–ভেজাল নয়। এগুলো তিনি ভারত থেকে আমদানি করেছেন। এর মধ্যে বেশির ভাগই ছিল ইউনিলিভারের পন্ডস ক্রিম, জনসন অ্যান্ড জনসনের ফেস ওয়াসসহ নারীদের নানা ধরনের প্রসাধনী। পরে র‍্যাবের নির্বাহী হাকিম সারওয়ার আলমের অনুরোধে ঘটনাস্থলে আসেন ইউনিলিভারের একজন কর্মকর্তা। পণ্য দেখে তিনি বলেন, সব পণ্যই নকল। ভারতীয় ইউনিলিভারের পণ্যের মোড়কের সঙ্গে জব্দ করা পণ্যের মোড়কের অসংগতি আছে।

পরে নকল প্রসাধনী গুদামজাত করা ও বিক্রির অপরাধে সাপুয়ান এন্টারপ্রাইজ নামের ওই প্রতিষ্ঠানের ছয়জনকে দুই বছর করে কারাদণ্ড এবং ৩০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

এরপর কামালবাগ এলাকার আরেকটি গুদামে গিয়ে বিপুল পরিমাণ নকল ডায়াপার ও স্যানিটারি ন্যাপকিন খুঁজে পায় র‍্যাব। এসব ডায়াপার ও স্যানিটারি ন্যাপকিন সাদা প্লাস্টিক মুড়িয়ে মাটিতে ফেলে রাখা ছিল। সেখানে নামীদামি ব্র্যান্ডের মোড়ক পাওয়া যায়। এ ছাড়া অন্তত ৩০ কার্টন ডায়াপার পাওয়া যায়, যেগুলোর মেয়াদ গত বছরই শেষ। মোড়কে নতুন করে তারিখ বসানোর যন্ত্র ও রাসায়নিক ওই গুদামে পাওয়া যায়। পরে আজিম ট্রেডিং নামের এই প্রতিষ্ঠানকে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা এবং প্রতিষ্ঠানের মালিক মো. আজিমকে দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

বিকেলে চকবাজারের সোয়ারীঘাট এলাকায় বি আর প্লাজায় অভিযান শুরু করে র‍্যাব। সেখানে তিনটি দোকানে অভিযান চালিয়ে নকল প্রসাধনী উদ্ধার করা হয়। নিউ মা ইমিটেশন জুয়েলারি নামের দুটি দোকানে অভিযান শুরু হয়। অভিযানে থাকা র‍্যাবের সদস্যরা বলছেন, দুটি দোকানের সব প্রসাধনীই নকল। দীর্ঘদিন ধরে দোকানগুলোর মালিক সুশান্ত দেবনাথকে তাঁরা খুঁজছেন। গতকালের অভিযানে দোকানে মালিককে খুঁজে পান তাঁরা। দোকানের মালিক এসব প্রসাধনী কেরানীগঞ্জ থেকে এনেছেন বলে স্বীকারও করেন। পরে দোকানিকে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা এবং ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পরে একই প্রতিষ্ঠানের আরেক দোকানকে দুই লাখ টাকা জরিমানা ও মো. রায়েল নামের একজনকে এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ওই দুই দোকানের সব মালামাল জব্দ করার পাশাপাশি সিলগালা করে দেওয়া হয়। এরপর বি আর প্লাজায় রফিক ব্রাদার্স ও সালমান এন্টারপ্রাইজে অভিযান চালিয়ে সেখান থেকেও নকল প্রসাধনী উদ্ধার করা হয়। এসব দোকানে বিদেশি ব্র্যান্ডের ৪৪টি নকল পণ্য খুঁজে পায় র‍্যাব। পরে প্রসাধনী জব্দ করে রফিক ব্রাদার্সের মালিককে এক বছরের কারাদণ্ড ও তিন লাখ টাকা জরিমানা এবং সালমান এন্টারপ্রাইজকে তিন লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। দোকানগুলো সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে।

র‍্যাবের নির্বাহী হাকিম সারওয়ার আলম বলেন, কেরানীগঞ্জের বড়িসুর এলাকার কারখানায় তৈরি করে এসব নকল প্রসাধনী চকবাজারের গুদামে আনা হয়। গতকালের অভিযানে সাতটি প্রতিষ্ঠানকে ৪৮ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এ ছাড়া সাতজনকে দুই বছর, দুজনকে এক বছর এবং একজনকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

[gs-fb-comments]
Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com