আমরা সময়ের কথা সময়ে বলি।

Advertisement

আজ দেবীর দূর্গার বোধন কাল ষষ্ঠী

জাতীয় 3 October 2019 ৬৩২

রিপন চৌধূরী।।

আজ দেবীর বোধন। শারদীয় দুর্গোৎসবের প্রাক্কালে এই বোধনের মধ্য দিয়ে দক্ষিণায়নের নিদ্রিত দেবী দুর্গার নিদ্রা ভাঙ্গার জন্য বন্দনাপূজা করা হবে। মণ্ডপে-মন্দিরে আজ বৃহস্পতিবার পঞ্চমীতে সায়ংকালে তথা সন্ধ্যায় হবে বন্দনাপূজা। শারদোৎসবের আগমনী বার্তায় মাতোয়ারা চারদিক। আনন্দময়ীর আগমনী সুরে অনুরণিত বাঙালী হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিটি ঘরে ঘরে। আগামীকাল শুক্রবার দুর্গাষষ্ঠীতে খগড়-কৃপাণ, চক্র-গদা, তীর-ধনুক আর ত্রিশূল হস্তে শক্তিরূপেণ দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গা মহিষাসুর বধে ম-পে ম-পে ঠাঁই নেবেন। জেগে উঠবেন দক্ষিণায়নের নিদ্রিত দশভুজা দেবী দুর্গা। খুলে যাবে দশপ্রহরণধারিণী ত্রিনয়ণী দেবী দুর্গার অতল স্নিগ্ধ চোখের পলক। শুরু হবে পাঁচদিনব্যাপী বাঙালী হিন্দুদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব।

বোধন দুর্গাপূজার অন্যতম একটি আচার। বোধন শব্দের অর্থ জাগরণ বা চৈতন্যপ্রাপ্ত। পূজা শুরুর আগে সন্ধ্যায় বেলশাখায় দেবীর বোধন দুর্গাপূজার একটি অত্যাবশ্যকীয় অঙ্গ। সাধারণত শুল্কাষষ্ঠীর সন্ধ্যায় বোধন হলেও এবার তিথি অনুযায়ী পঞ্চমীতেই বোধন পড়েছে। শরৎকালের দুর্গাপূজায় এই বোধন করার বিধান রয়েছে। বিভিন্ন পুরাণ অনুসারে, ভগবান রামচন্দ্র শরতকালে রাক্ষসরাজ রাবণকে বধের উদ্দেশ্যে দুর্গাপূজা করেন। তিনি অকালে এই বোধন করেন বলেই এটি অকালবোধন নামেও খ্যাত। তবে বসন্তে চৈত্র মাসে যে দুর্গাপূজা তথা বাসন্তীপূজা হয় তাতে বোধনের প্রয়োজন হয় না।

আজ বোধন শেষে কাল শুক্রবার থেকে ষষ্ঠীপূজার মধ্য দিয়ে শুরু হবে আনুষ্ঠানিক দুর্গাপূজা। পাঁচ দিনের এ উৎসব শেষ হবে ৮ অক্টোবর মঙ্গলবার প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে।

শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে এখন ঘুম নেই কোটি কোটি বাঙালী হিন্দুর। সর্বত্রই শুরু হয়েছে দুর্গোৎসবের প্রস্তুতি। দুষ্টের দমন, শিষ্টের পালন ও বিশ্বব্যাপী অবারিত মঙ্গলধ্বনি বয়ে যাক, দেবী দুর্গা এমন বার্তা নিয়েই আসছেন লোকালয়ে। তাই বাঙালী হিন্দুদের ঘরে ঘরে এখন আনন্দের ঢল। বাঙালী হিন্দুদের চিরায়ত ঐতিহ্য অনুযায়ী এখন তাদের প্রতিটি ঘরে ঘরে মুড়ি, নাড়ু, মোয়া মুড়কি, মিষ্টি বানানোর ধুম পড়েছে।

সারাদেশের প্রতিমা শিল্পীদের এখন দম ফেলার সময় নেই। প্রতিমার অবয়ব গড়ার কাজ শেষ করে ফেলেছেন আগেই। শেষ সময়ে এখন তারা ব্যস্ত নিপুণ তুলির আঁচড়ে বর্ণাঢ্য বিভায় মা দুর্গাকে উদ্ভাসিত করে তোলার কর্মে। শিল্পীরা জানিয়েছেন, শেষ তুলির আঁচড় দেয়া হবে আজ (বৃহস্পতিবার) বোধনের আগেই। দেবী দুর্গাকে প্রয়োজনীয় অলঙ্কার পরানোও হবে সে সময়ে। নিপুণ শিল্পী তাঁর তুলির ছোঁয়ায় জাগিয়ে তুলবেন মা দুর্গাকে। জেগে উঠবেন সরস্বতী, গণেশের গায় উঠবে নক্সিদার কুচির দুধসাদা ধুতি, ঝরবে মা লক্ষ্মীর হাসি। আজ বোধনের মা দুর্গাকে জেগে ওঠার আহ্বান জানানো হবে। জেগে উঠবেন দশভুজা। আশীর্বাদ দেবেন মনোবাঞ্ছা নিয়ে দূর-দূরান্ত থেকে আসা পূজাড়িদের। ম-পে ম-পে আলোকচ্ছটায় উদ্ভাসিত করতে ডেকোরেটরদেরও দম ফেলার সময় নেই। রাজধানীসহ সারাদেশেই সর্বজনীন পূজাম-পগুলোয় চলছে চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন থিমে দৃষ্টিনন্দন বিশাল বিশাল প্যান্ডেল নির্মাণের কাজ। হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের বিশ্বাস, অসুরশক্তি বিনাশকারী দেবী দুর্গার আরাধনার মধ্য দিয়ে সমাজ থেকে দূর হবে সব পাপ, সমাজে ফিরে আসবে শান্তি।