প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হল শারদীয় দুর্গাপূজা

৯ অক্টোবর, ২০১৯ : ৮:১৩ পূর্বাহ্ণ ৩৮১

রিপন চৌধূরী।।

প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হল হিন্দু সম্প্র্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। মঙ্গলবার সপরিবারে দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গা বাবার বাড়ি থেকে ফিরে গেলেন স্বামীর ঘরে কৈলাসে।

সনাতন বিশ্বাস ও বিশুদ্ধ পঞ্জিকামতে, এবার দেবী দুর্গা মর্ত্যলোকে (পৃথিবী) আসেন এবং স্বর্গলোকে ফিরে যান ঘোটকে (ঘোড়া) চড়ে। মঙ্গলময়ী, আনন্দময়ী মা দুর্গা জগতের কল্যাণের জন্য আসেন।

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, মানুষের মনের আসুরিক প্রবৃত্তি যেমন কাম, ক্রোধ, হিংসা, লালসা বিসর্জন দেয়াই মূলত বিজয়া দশমীর মূল তাৎপর্য। এ প্রবৃত্তিগুলোকে বিসর্জন দিয়ে একে অন্যের সঙ্গে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা করাই এ আয়োজনের উদ্দেশ্য।

ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী; দেবী দুর্গা যে ক’দিন পিতৃগৃহে ছিলেন, ঢোলের বাদ্য সে ক’দিন ভক্তদের মনে ভক্তি আর আনন্দ মূর্ছনা দুই-ই জাগিয়েছে। মঙ্গলবার সকালে মণ্ডপে মণ্ডপে দশমী পূজা সমাপন ও দর্পণ বিসর্জন করা হয়। বিষাদের ছায়া ছিল ঢাক-ঢোল, কাঁসর-ঘণ্টাসহ বিভিন্ন বাদ্যে, আলোকিত করা ধূপ আরতি ও দেবীর পূজা-অর্চনায়। শাস্ত্রীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষ হলেও বিসর্জনের আগে রাজধানীসহ সারাদেশে মণ্ডপে মণ্ডপে দুপুর পর্যন্ত চলে আবীর খেলা আনন্দ, উৎসব।

প্রতিমা বিসর্জনের উদ্দেশ্যে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দির মেলাঙ্গন থেকে কেন্দ্রীয় বিজয়া শোভাযাত্রা বের হয়। দুপুরে পূজা উদযাপন পরিষদ এবং মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির যৌথ উদ্যোগে বর্ণাঢ্য এই বিজয়া শোভাযাত্রা বের হয়। শোভাযাত্রাটি পলাশী মোড় থেকে শুরু হয়ে নগরীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে বুড়িগঙ্গার ওয়াইজঘাটে গিয়ে পৌঁছে। ঢাকের শব্দে আর ধূপের গন্ধে মুখরিত হয়ে ওঠে ওয়াইজঘাট এলাকা।

বিজয়া শোভাযাত্রা ও প্রতিমা বিসর্জনে অংশ নিতে ভক্তরা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার পূজামণ্ডপ থেকে ট্রাকে করে প্রতিমা নিয়ে সমবেত হতে শুরু করেন ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির প্রাঙ্গণে। ঢাকার বিভিন্ন স্থানের পূজামণ্ডপ থেকে আসা প্রতিমা নিয়ে ট্রাকগুলো সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে যায় রাস্তায়। প্রতিটি ট্রাকে বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ নেচে-গেয়ে শোভাযাত্রাকে বর্ণিল করে তোলে। সেখান থেকে সম্মিলিত বাদ্য-বাজনা, মন্ত্রোচ্চারণ ও পূজা-অর্চনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় শোভাযাত্রা।

যাত্রাপথে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে পুলিশ সংশ্লিষ্ট সড়কগুলোতে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণে রাখে। বিপুলসংখ্যক পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব সদস্যরাও মাঠে ছিলেন। এ সময় বুড়িগঙ্গার দুই তীরে হাজার হাজার ভক্ত ও দর্শনার্থী প্রতিমা বিসর্জন দেখতে ভিড় করেন।

এ উপলক্ষে মঙ্গলবার ওয়াইজঘাট এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। অধিকাংশ মণ্ডপের প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হলেও ঢাকেশ্বরী মন্দিরের প্রতিমাটি রেখে দেয়া হয়। কিন্তু পূজার কাজে ব্যবহৃত দেবীর ফুল, বেলপাতা ও ঘট বিসর্জন দেয়া হয়। প্রথা অনুযায়ী প্রতিমা বিসর্জনের পর সেখান থেকে জল এনে (শান্তিজল) মঙ্গলঘটে নিয়ে তা আবার হৃদয়ে ধারণ করা হয়। আগামী বছর আবার এ শান্তিজল হৃদয় থেকে ঘটে, ঘট থেকে প্রতিমায় রেখে পূজা করা হবে।

[gs-fb-comments]
Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com