ব্রাক্ষনবাড়িয়া।।
সনাতন ধর্মাবলম্বী এক ব্যাক্তির ফেসবুক আইডি থেকে পবিত্র কাবা শরীফকে ব্যঙ্গ করে পোস্ট দেয়ার জেরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিন্দুপল্লীতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনার তিন বছর পেরিয়েছে আজ।
এ তিন বছরে সরকারি-বেসরকারি সহায়তায় ঘুরে দাঁড়াততে পারেনি এখও ক্ষতিগ্রস্তরা। কিন্তু এবার ধুমধামে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে নাসিরনগরে। হামলার ঘটনায় দায়ের হওয়া আট মামলার মধ্যে সাত মামলার তদন্ত কাজ শেষ করে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) জমা দিতে পারেনি পুলিশ। এখানে পুলিশের গাফিলতি রয়েছে । এর ফলে দেশ-বিদেশে আলোচিত এ হামলার ঘটনার বিচার কাজ নিয়ে শঙ্কার কথা জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্তরা। তাদের দাবি, দ্রুত প্রকৃত অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হোক।
জানা যায়, গত ২০১৬ সালের ২৭ অক্টোবর নাসিরনগরের হরিপুর ইউনিয়নের হরিণবেড় গ্রামের জগন্নাথ দাসের ছেলে রসরাজ দাসের ফেসবুক আইডি থেকে পবিত্র কাবা শরীফকে ব্যঙ্গ করে একটি পোস্ট দেয়া হয়। ওই পোস্টটি বিভিন্নজনের কাছে ছড়িয়ে পড়লে উত্তেজনা দেখা দেয়। পরে ২৯ অক্টোবর রসরাজকে আটক করে তার বিরুদ্ধে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) আইনে মামলা করে পুলিশ। রসরাজ তখন পুলিশের কাছে ওই পোস্ট করেননি বলে দাবি করেন। এরপরও রসরাজের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে তার ফাঁসির দাবিতে উত্তাল হয়ে ওঠে নাসিরনগর।
৩০ অক্টোবর নাসিরনগর উপজেলা, সদরে দুইটি ইসলামী সংগঠনের ডাকা সমাবেশ শেষে হিন্দু অধ্যুষিত কয়েকটি এলাকায় হামলা চালিয়ে অন্তত ১০টি মন্দির ও শতাধিক ঘর-বাড়িতে ভাঙচুর এবং লুটপাট করে দুষ্কৃতিকারীরা। এ ঘটনার পর দুষ্কৃতিকারীরা ফের ৪ নভেম্বর ও ১৩ নভেম্বর হিন্দুদের অন্তত ছয়টি ঘর-বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। হামলার ঘটনায় পুলিশ ও ক্ষতিগ্রস্তদের দায়ের করা আটটি মামলায় অজ্ঞাত দুই হাজারেরও বেশি মানুষকে আসামি করা হয়। তখন হামলার ভিডিও ফুটেজ ও ছবি দেখে ১২৫ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তবে গ্রেফতার সবাই এখন জামিনে।
ঘটনার ১৩ মাস পর ২০১৭ সালের ১১ ডিসেম্বর গৌরমন্দির ভাঙচুর মামলায় পুলিশ নাসিরনগর সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল হাশেম ও হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দেওয়ান আতিকুর রহমান আঁখিসহ ২২৮ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়। তবে ঘটনার তিন বছর পেরিয়ে গেলেও বাকি সাত মামলার তদন্ত কাজ শেষ করতে পারেনি পুলিশ। মামলাগুলোর তদন্ত কাজের অগ্রগতি সম্পর্কেও জানেন না ক্ষতিগ্রস্তরা।
নাসিরনগর উপজেলা সদরের দত্তবাড়ি মন্দির ভাঙচুর মামলার বাদী কাজল জ্যোতি দত্ত জানান, হামলার পর পুলিশের কথায় বিচারের আশায় মামলা করেছিলাম। এরপর আর বিচারের কোনো লক্ষণ দেখছি না। শুনেছি, একটি মামলার অভিযোগপত্র দেয়া হয়েছে। আমার মামলার অভিযোগপত্র এখনও দেয়া হয়নি। তবে আমরা চাই হিন্দু-মুসলমান সবাই একত্রে বসবাস করতে।
হামলা ও ভাঙচুরের শিকার উপজেলা সদরের গৌর মন্দিরের পূজারী শঙ্করশন গোপাল দাস বলেন, ৩০ অক্টোবরের ঘটনা মনে হলে এখনও আতঙ্ক কাজ করে। এতো বড় ঘটনার পরও আমরা কোনো বিচার পেলাম না। এজন্য হামলাকারীদের সাহস দিন-দিন বেড়ে যাচ্ছে।
উপজেলার হরিণবেড় গ্রামের বাসিন্দা ও হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত সঙ্গীতা রাণী দাস বলেন, আমরা হামলার ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই, শান্তিতে বসবাস করতে চাই।
উপজেলা সদরের গাঙকুলপাড়া এলাকার বাসিন্দা ও ক্ষতিগ্রস্ত রতন চন্দ্র দাস বলেন, আমাদের ওপর হামলার বিচার আমরা এখনও পাইনি। আটটি মামলার মধ্যে মাত্র একটি মামলার অভিযোগপত্র দেয়া হয়েছে। বাকি মামলাগুলোর অভিযোগপত্র না দেয়ায় অপরাধীদের বিচার হচ্ছে না।
হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্যপরিষদের নেতাদের মতে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে একটি চক্র ফেসবুকের অপব্যবহার করে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটাচ্ছে। এসব ঘটনায় জড়িত অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা।
এ ব্যাপারে নাসিরনগর উপজেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্যপরিষদের সাধারণ সম্পাদক সুজিত চক্রবর্তী বলেন, যারা নাসিরনগরের হামলার ঘটনার মূল নায়ক তাদের আইনের আওতায় আনা হয়নি।হিন্দু মহাজোটের জেলা কমিটির সাধারন সম্পাদক প্রবীর চৌধূরী রিপন জানান,নাসিরনগরের সুষ্ঠ বিচার হলে এবার আর ভোলা এধরনের ঘটনা ঘটত না। আমরা চাই এ হামলার নেপথ্যে যারা ছিল তাদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হোক। পুুুলিশের গাফিলতির কারনে তিন বছরে ও ৭টি মামলার চার্জশীট আদালতে দেয়নি।
সাত মামলার তদন্ত কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিক্তি পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) মুহাম্মদ আলমগীর হোসেন বলেন, আমাদের তদন্ত কাজ শেষ পর্যায়ে। আসামি সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ায় নিরপরাধ কেউ যেন হয়রানির শিকার না হন সেজন্য সাক্ষ্য-প্রমাণগুলো আমরা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই-বাছাই করে দেখছি। যাচাই-বাছাই শেষে দ্রুত আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়া হবে।
[gs-fb-comments]Copyright © 2023 Amaderkatha | Design & Developed By: Design Ghor