ভালবাসা দিবসের ইতিহাস

১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ : ২:৩৬ অপরাহ্ণ ৬১৪

হৃদিমা।।

১৪ই ফেব্রুয়ারিতে সারা বিশ্বে একযোগে পালিত হবে ভালবাসা দিবস।আমাদের বাংলাদেশেও পালিত হয় এই দিবস ১৯৯৩ সাল থেকে।
আপনিও নিশ্চয় পালন করবেন এই দিবসটি, চলুন পালন করার আগে জেনে নেই ভালবাসা দিবসের ইতিহাস।
ভালবাসা দিবসের ইতিহাস : ২৬৯ সালে ইতালির রোম নগরীতে সেন্ট ভ্যালেইটাইন’স নামে একজন খৃস্টান পাদ্রী ও চিকিৎসক ছিলেন। ধর্ম প্রচার-অভিযোগে তৎকালীন রোমান সম্রাট দ্বিতীয় ক্রাডিয়াস তাকে বন্দী করেন। কারণ তখন রোমান সাম্রাজ্যে খৃস্টান ধর্ম প্রচার নিষিদ্ধ ছিল। বন্দী অবস্থায় তিনি জনৈক কারারক্ষীর দৃষ্টিহীন মেয়েকে চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ করে তোলেন। এতে সেন্ট ভ্যালেইটাইনের জনপ্রিয়তার প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে রাজা তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন। সেই দিন ১৪ ফেব্রুয়ারি ছিল। অতঃপর ৪৯৬ সালে পোপ সেন্ট জেলাসিউও ১ম জুলিয়াস ভ্যালেইটাইন’স স্মরণে ১৪ ফেব্রুয়ারিকে ভ্যালেন্টাইন’ দিবস ঘোষণা করেন। খৃস্টানজগতে পাদ্রী-সাধু সন্তানদের স্মরণ ও কর্মের জন্য এ ধরনের অনেক দিবস রয়েছে। যেমন: ২৩ এপ্রিল – সেন্ট জজ ডে, ১১ নভেম্বর-সেন্ট মার্টিন ডে, ২৪ আগস্ট – সেন্ট বার্থোলোমিজম ডে, ১ নবেম্বর আল সেইন্টম ডে, ৩০ নবেম্বর-সেন্ট এন্ড্রু ডে, ১৭ মার্চ – সেন্ট প্যাট্রিক ডে। পাশ্চাত্যের ক্ষেত্রে জন্মদিনের উৎসব, ধর্মোৎসব সবক্ষেত্রেই ভোগের বিষয়টি মুখ্য। তাই গির্জা অভ্যন্তরে ও মদ্যপানে তারা কসুর করে না। খৃস্টীয় এই ভ্যালেন্টাইন দিবসের চেতনা বিনষ্ট হওয়ায় ১৭৭৬ সালে ফ্রান্স সরকার কর্তৃক ভ্যালেইটাইন উৎসব নিষিদ্ধ হয়।
মূলত বস্তুবাদীদের কল্পনা বিলাস থেকে এ সমস্ত উদ্ভট চিন্তা বের হয়ে আসে। যারা বলে- “আমার কৃতকর্মে কেউ হাসবে, মৃত্যুতে কেউ কাঁদবে, তাতেই আমি আনন্দিত। সার্থক আমার জীবন। আমার জীবনের কত অফুরন্ত আশা, কত স্বপ্ন দিগন্তে পড়ে আছে ! আর্তনাদের প্রতিধ্বনি”
‘ভালবাসা দিবস’কে কেন্দ্র করে সারা পৃথিবী দিন দিন উন্মাতাল হয়ে উঠছে। বাজার ছেয়ে যাচ্ছে নানাবিধ হাল ফ্যাশনের উপহারে। পার্কগুলোতে চলছে ধোয়ামোছা। রেস্তোরাঁগুলো সাজছে নতুন সাজে। পৃথিবীর প্রায় সব বড় শহরেই ‘ভ্যালেন্টাইনস ডে’-কে ঘিরে সাজ সাজ রব। পশ্চিমা দেশগুলোর পাশাপাশি প্রাচ্যের দেশগুলোতেও এখন ঐ সংস্কৃতির মাতাল ঢেউ লেগেছে। এমনকি ৯৫ ভাগ মুসলমানের এ প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশেও উচ্ছৃংখল মুসলিম ছেলে-মেয়ে, বুড়ো-বুড়িরাও এ অশ্লীল স্রোতে গা ভাসিয়ে দিয়ে থাকে। হৈ চৈ, উন্মাদনা, রাঙায় মোড়া ঝলমলে উপহার সামগ্রী, নামি রেস্তোরাঁয় ‘ক্যান্ডেল লাইট ডিনার’কে ঘিরে প্রেমিক যুগলের চোখেমুখে এখন বিরাট উত্তেজনা। হিংসা-হানাহানির যুগে ভালোবাসার জন্য ধার্য মাত্র এই একটি দিন! প্রেমিক যুগল তাই উপেক্ষা করে সব চোখ রাঙানি। বছরের এ দিনটিকে তারা বেছে নিয়েছে হৃদয়ের কথকতার কলি ফোটাতে। ভালোবাসা শব্দটি খুব সহজেই সকলের সহজাত প্রবৃত্তির সাথে মিশে যায়। কেননা জন্মের পর থেকেই মানুষের বেড়ে উঠা এই ভালোবাসাকে কেন্দ্র করেই। আর তাই ভালোবাসার দিনটিকে নিয়ে সকলের ভাবনাটাও থাকে বিশেষ। এই দিনটির শুরুর গল্পটাও বেশ রঙিন। ভ্যালেন্টাইন্স ডে বা বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের পটভূমিটি কী আসুন খুঁজে দেখি ইতিহাসের পাতায়।
আমাদের দেশে দিনটির শুরু : ১৯৯৩ সালের দিকে আমাদের দেশে ভালোবাসা দিবসের আবির্ভাব ঘটে। সাংবাদিক ব্যক্তিত্ব শফিক রেহমান পড়াশোনা করেছেন লন্ডনে। পাশ্চাত্যের রীতিনীতিতে তিনি ছিলেন অভ্যস্ত। দেশে ফিরে তিনিই ভালোবাসা দিবসের শুরুটি করেন। এ নিয়ে অনেক ধরনের মতবিরোধ থাকলেও শেষ পর্যন্ত শফিক রেহমানের চিন্তাটি নতুন প্রজন্মকে বেশি আকর্ষণ করে। সে থেকে এই আমাদের দেশে দিনটির শুরু।
ইতিহাসে ‘ভ্যালেন্টাইনস ডে’ : ‘ভ্যালেন্টাইনস ডে’র ইতিহাস প্রাচীন। এর উৎস হচ্ছে ১৭শ’ বছর আগের পৌত্তলিক রোমকদের মাঝে প্রচলিত ‘আধ্যাত্মিক ভালোবাসা’র উৎসব। এ পৌত্তলিক উৎসবের সাথে কিছু কল্পকাহিনী জড়িত ছিল, যা পরবর্তীতে রোমীয় খৃস্টানদের মাঝেও প্রচলিত হয়। এ সমস্ত কল্প-কাহিনীর অন্যতম হচ্ছে, এ দিনে পৌত্তলিক (অগ্নি উপাসক) রোমের পৌরাণিক কাহিনীতে বর্ণিত রোমিউলাস নামক জনৈক ব্যক্তি একদা নেকড়ের দুধ পান করায় অসীম শক্তি ও জ্ঞানের অধিকারী হয়ে প্রাচীন রোমের প্রতিষ্ঠা করেন। রোমানরা এ পৌরাণিক কাহিনীকে কেন্দ্র করে ১৪ ফেব্রুয়ারি উৎসব পালন করত।

[gs-fb-comments]
Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com