মন্ত্রী বলেন, ব্যবসা ও কর্মজীবনের পাশাপাশি সন্তান ও বয়োজৈষ্ঠ্যসহ পরিবারের সবার খেয়াল রাখেন- এমন নারীদের স্বীকৃতি দেওয়া প্রয়োজন। দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের এই অনুষ্ঠান স্পন্সর করেছে এবি ব্যাংক। কো-স্পন্সর ছিল বিকাশ, অগ্রণী ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক লিমিটেড ও জনতা ব্যাংক। অনুষ্ঠানে হরাইজন মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিকেশনস লিমিটেডের চেয়ারপারসন জেরিন করিম বলেছেন, শিক্ষা, ব্যবসায়-উদ্যোগ ও চাকরি ক্ষেত্রে নারীর ক্ষমতায়নে সরকার অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে। তিনি বলেন, প্রশাসন, বিচার বিভাগ, পুলিশ ও সশস্ত্র বাহিনীতে এখন আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি নারী কাজ করছেন। তিনি আরও বলেন, ক্রিকেট, ফুটবল, সাঁতার, শুটিংসহ বিভিন্ন খেলায়ও আমাদের নারীরা ভালো করছেন; তারা সম্প্রতি বেশ সফলভাবেই পুরুষ খেলোয়াড়দের ছায়া থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছেন। তিনি বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে নারীদের প্রতি বৈষম্য দূর করার যে স্বপ্ন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছিল, সেটিকে আমাদের বাস্তব করে তুলতে হবে। অনুষ্ঠানে এবি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারিক আফজাল বলেন, আমি এমন এক অসাধারণ নারীর স্নেহে বড় হয়েছি, যিনি আমাকে শিখিয়েছেন, কখনোই কাঁদবে না; যতবার পড়ে যাবে, ততবারই উঠে দাঁড়াবে। একজন নারী একজন মামুলি মানুষ নয়, বরং তারচেয়ে বেশি কিছু। নতুন জীবনের জন্ম দেওয়া এবং শ্রেয়তর ভবিষ্যৎ দেখানোর ক্ষমতা রয়েছে তার। ব্যবসায়ী হিসেবে শুরুর দিনগুলো স্মরণ করে সেলিমা আহমাদ এমপি বলেন, এক সময় বলা হতো, ব্যবসা নারীদের জন্য নয়; এখন সেই ধারণা পাল্টে গেছে। বাংলাদেশ এখন নারীর ক্ষমতায়নের রোল-মডেল হয়ে উঠেছে। দিলশাদ আজিজ আশা প্রকাশ করেন, বুদ্ধিমত্তা, জ্ঞান ও কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে নারীরা আরও এগিয়ে যাবে। দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের প্রকাশক ও নির্বাহী সম্পাদক শাহরিয়ার খান জানান, ব্যক্তিগত উদ্যোগ ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের তথ্য ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যেই এই পত্রিকার জন্ম। তিনি বলেন, নতুন আইডিয়ার ওপরও আমরা আলোকপাত করতে চাই; কেননা, আজকের দিনে ব্যবসার দুনিয়ায় পুরনো ও অচল আইডিয়ার পক্ষে টিকে থাকা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, সব বাধা পেরিয়ে ব্যবসা ক্ষেত্রে সফল হয়ে ওঠা নারীদের গল্প দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড শোনাতে চায়। কেননা, এসব গল্প অন্য নারীদের অনুপ্রাণিত করবে। দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড সম্পাদক ইনাম আহমেদ জানান, ব্যবসা ক্ষেত্রে নারীদের জন্য ঋণ পাওয়া একটি বড় বাধা। নারী উদ্যোক্তাদের সহযোগিতা করার জন্য ব্যাংকগুলোর প্রতি তিনি অনুরোধ জানান। জরিপের সূত্র ধরে তিনি বলেন, পুরুষের তুলনায় নারীর ঋণখেলাপি হওয়ার হার পাঁচ ভাগের এক ভাগের চেয়েও কম।
সম্মাননা পেলেন যারা
নিজের আগের চাকরি থেকে জমানো সব টাকা দিয়ে ২০১২ সালে কুড়িগ্রামে ‘নারী’ নামে এক ব্যবসা উদ্যোগ চালু করেন ফরিদা ইয়াসমিন। পাটজাত পণ্য তৈরির এই ব্যবসা চালু করার সময় তিনি পরিবার থেকে কোনো সাহায্য পাননি। ব্যাংক থেকেও পাননি কোনো ঋণ। শত বাধা সত্ত্বেও তিনি শোষিত নারীদের অর্থনৈতিক মুক্তি এনে দেওয়ার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। আবিদা সুলতানা আরেক সাহসী নারী। ২০০২ সালে স্বামীর মৃত্যুর পর, স্বামীর মোটর যন্ত্রাংশের ব্যবসা চালিয়ে যান তিনি। শিশুকালে বিয়ে হলেও ব্যবসায়ী মহলে নেতৃত্বের এক অসাধারণ গুণ অর্জন করেছেন যশোরের এ নারী। বর্তমানে তার বার্ষিক টার্নওভার ১০ কোটি টাকা। সিলেটের স্বর্ণলতারও অল্প বয়সে বিয়ে হয়ে গিয়েছিল। মা হয়েছেনও অল্প বয়সেই। তবু পড়াশোনা শেষ করেছেন। শত সমালোচনা পাশ কাটিয়ে তিনি হয়ে উঠেছেন শহরের সুখ্যাত পার্লার ‘উইমেনস ফ্যাশন ওয়ার্ল্ড’-এর মালিক। চিকিৎসা বিজ্ঞানে স্নাতক করার পর, স্রোতের বিপরীতে, নিজের এলাকা নাটোরে ফিরে গেছেন ডা. ফারজানা রহমান। সেখানেই চিকিৎসাসেবা দেন তিনি। একটা হাসপাতাল চালান; অনুন্নত গ্রামাঞ্চলের অন্তসত্ত্বা নারীদের প্রসবকালীন সেবা এবং শিশু-মৃত্যুহার কমানোই তার প্রধান লক্ষ্য।নওগাঁর গ্রামাঞ্চলে স্বামী পরিত্যক্তা ও বিধবা নারীদের জন্য একটি আশ্রয়কেন্দ্র গড়ে তুলেছেন তাসলিমা ফেরদৌস। আট বছর আগে গড়ে তোলা এক রেস্তোরাঁ থেকে উপার্জিত অর্থে ওই আশ্রয়কেন্দ্রের খরচ মেটান তিনি। নারায়ণগঞ্জের মরিয়ম আক্তার বেছে নিয়েছেন ‘পুরুষের পেশা’ হিসেবে পরিচিত ইলেক্ট্রনিক সার্ভিসিংয়ের পথ। দুই বছরের কারিগরি শিক্ষা এবং স্বামীর সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতাকে পুঁজি করে এলইডি বাল্ব ও সাউন্ড সিস্টেম উৎপাদনের ব্যবসা চালু করেছেন তিনি। কৃষিকাজের মাধ্যমে নারীদের সাফল্যের পথ দেখাচ্ছেন সাভারের রাজিয়া সুলতানা। তার খামারে ২৫ কর্মী কাজ করে। গর্বের সঙ্গেই নিজেকে ‘কৃষক’ বলে পরিচয় দেন তিনি। অন্যদিকে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তাসলিমা সুলতানা খানম নিশাত এমন একটি বিক্রয়কেন্দ্র গড়ে তুলেছেন, যেখানে স্থানীয়ভাবে তৈরি করা হস্তশিল্প বিক্রয় হয়। অসহায় ও পরিবার পরিত্যক্ত নারীদের সাহায্য করতেই এটি গড়ে তুলেছেন পেশায় আইনজীবী নিশাত।