
ব্রাক্ষনবাড়িয়া।।
অবশেষে করোনা আক্রান্ত দেশ থেকে ফিরে আসা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ৯ সহস্রাধিক প্রবাসীর খোঁজে তৎপর হয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেইল পেয়ে টনক নড়ে তাদের। ২৪ ঘণ্টায় কোয়ারেন্টিনে নেয়া হয় ২৮ জনকে। সবমিলিয়ে কোয়ারেন্টিনে নেয়া হয়েছে ৪২ জনকে। জরিমানা করা হয় ৩ জনকে। জেলা পুলিশ প্রচার-প্রচারণাও শুরু করেছে। বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ৯২০৮ জন প্রবাসীর দেশে ফেরার তথ্য দিয়ে একটি মেইল পাঠানো হয় জেলা পুলিশের কাছে। ওইদিন এই প্রবাসীদের মধ্যে হোম কোয়ারেন্টিনে ছিলেন মাত্র ১৪ জন।স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেইল পাবার পর ঘুম ভাঙে জেলার স্বাস্থ্য বিভাগ ও প্রশাসনের। তার আগে বিপুল সংখ্যক প্রবাসীর ব্রাহ্মণবাড়িয়া ফিরে আসার খবর জানা ছিল না কারো। জেলায় সবচেয়ে বেশি প্রবাসী ৩০২৪ জন ফিরেছেন সদর উপজেলায়। কিন্তু এখানে প্রবাসীদের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে একেবারেই অন্ধকারে প্রশাসন। তবে বৃহস্পতিবার তাদের মধ্যে ২ জন ওমান থেকে আগত জেলা শহরের পাইকপাড়ার শম্ভু সাহাকে ২০ হাজার এবং সিঙ্গাপুর থেকে আসা দীপ্ত সাহাকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এছাড়া আখাউড়ার দুর্গাপুরে আরো একজনকে জরিমানা করা হয়েছে। এর আগে বুধবার বাঞ্ছারামপুর ও আখাউড়ায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ২ প্রবাসীকে জরিমানা করা হয় হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার নিয়ম না মানায়। মন্ত্রণালয়ের থেকে তথ্য পাবার পরই প্রবাসীদের চিহ্নিত করার লক্ষ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মিতু মরিয়ম। তারা কোয়ারেন্টিনে আছে কি না তা দেখার জন্য বলা হয়েছে। জেলার সিভিল সার্জন মো. শাহ আলম জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ২৮ জনসহ মোট ৪২ জনকে কোয়ারেন্টিনে নেয়া হয়েছে। তারা সবাই সুস্থ আছেন। তিনি আরো জানান- জেলার ৯৯টি ইউনিয়নে ৩টি করে কমিটি গঠন করার কাজ শুরু হয়েছে। তারা প্রবাসীদের খুঁজে বের করবেন। এদিকে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে প্রচার-প্রচারণা চালানোর কথা জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন। তিনি জানান- মন্ত্রণালয় থেকে তালিকা পাবার পর সব থানায় দেয়া হয়েছে আগতদের বিষয়ে তথ্য জানতে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ৯ উপজেলার মধ্যে সদরে ৩০২৪ জন, আশুগঞ্জে ৩৬০, সরাইলে ৫৫৮ জন, নাসিরনগরে ২২৩ জন, নবীনগরে ১৩৭২ জন,বাঞ্ছারামপুরে ৮৪৭জন, কসবায় ৭৫১ জন, আখাউড়ায় ১৮৭৯ জন এবং বিজয়নগরে ১৯৪ জন প্রবাসী দেশে ফিরেছেন।
আখাউড়া ইউএনও’র কাণ্ড: হোম কোয়ারেন্টিন আদেশ না মানা এক প্রবাসীকে সঙ্গে নিয়েই অন্য প্রবাসীদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করলেন আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)। বৃহস্পতিবার আখাউড়া পৌর শহরের দুর্গাপুরে এ ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে সমালোচনা ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। স্থানীয়রা জানান- ইউএনও তাহমীনা আক্তার রেইনা দুর্গাপুরে বাহরাইন প্রবাসী রাসেল মিয়াকে (৩৪) ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। হোম কোয়ারেন্টিনের নিয়ম না মানায় তাকে এই জরিমানা করা হয়। এ সময় ইউএনও’র সঙ্গে ছিলেন সদ্য লন্ডন থেকে আগত স্থানীয় জাহানারা হক মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মো. শাহজাহান। তিনি সস্ত্রীক ৮ই মার্চ লন্ডন থেকে ফেরেন। হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার নিয়ম না মেনেই চলছেন তিনি। বৃহস্পতিবার ইউএনও প্রবাসীদের খোঁজ-খঁবরে বের হলে অধ্যক্ষ শাহজাহান তার সঙ্গী হন। করোনার লক্ষণ শুনেই পালালো প্রবাসী: ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে করোনা ভাইরাসের লক্ষণ আছে শুনেই পালিয়েছে এক কাতার প্রবাসী। তার বাড়ি জেলার নাসিরনগর উপজেলার চাতলপাড় ইউনিয়নের ধনতলিয়া গ্রামে। বুধবার সন্ধ্যায় জ্বর, সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা নিয়ে ওই প্রবাসী হাসপাতালে আসেন। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেন। তখন ওই প্রবাসী ভর্তির জন্য হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে যান। কিছুক্ষণ পরই পুনরায় জরুরি বিভাগে এসে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলেন। তখন চিকিৎসক করোনা ভাইরাসের লক্ষণ আছে জানিয়ে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানো হবে বলে তাকে জানান। এসব শুনার পর ভয়ে হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যান ওই প্রবাসী। সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক এবিএম মুছা চৌধুরী জানান, ওই প্রবাসী নিউমোনিয়া, সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্ট সংক্রান্ত সমস্যায় ভুগছিলেন। তার শরীরের তাপমাত্রা ছিল ১০০ থেকে ১০১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সেজন্য তাকে হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেয়া হয়েছিল। করোনা ভাইরাসের লক্ষণ রয়েছে, পরীক্ষা করা হবে- এই কথা শুনেই ভয়ে হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যান তিনি। হাসপাতালের তত্ত্ব্বাবধায়ক ডাক্তার শওকত হোসেন জানান-ওই প্রবাসী গত ৩রা মার্চ কাতার থেকে দেশে ফিরেছেন বলে জানতে পেরেছি। বিষয়টি সিভিল সার্জন কার্যালয় ও নাসিরনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জানানো হয়েছে। নাসিরনগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডা. অভিজিৎ রায় বলেন- আমরা বিষয়টি জানার পর রোগীর বাড়িতে টিম পাঠিয়েছি।