
বিশেষ প্রতিবেদক।।
শিক্ষার অধিকার আদায়, গণতন্ত্র, সমাজ প্রগতির লড়াইয়ের অগ্রণী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের ৬৮ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী ২৬ এপ্রিল। ভাষা আন্দোলনের অগ্নিগর্ভ চেতনাকে ধারণ করে ১৯৫২ সালের ২৬ এপ্রিল প্রতিষ্ঠা হয় পূর্ব-পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন। বতমানে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন এই সংগঠন শিক্ষার অধিকার আদায় ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক শোষণ-বৈষম্যহীন সমাজ রাষ্ট্র বিনির্মাণের লক্ষ্যে নবতরইতিহাস রচনায় দৃঢ়তার সাথে এগিয়ে চলছে।
জন্মলগ্নের ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ১৯৬২ শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা সংগ্রাম, ১৯৭৩ সালে সা¤্রাজ্যবাদবিরোধী আন্দোলন, ১৯৮৭- ১৯৯০ সালের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন, ২০১৩ সালের গণজাগরণ মঞ্চ ইত্যাদি আন্দোলনে ছিল ধারক-বাহক।ছাত্র ইউনিয়ন তার বিভিন্ন কর্মকান্ডের মধ্যে শিক্ষার অধিকার আদায় আন্দোলনে অটুট।বিভিন্ন সময়ে আন্দোলন সংগ্রামে প্রাণ দিতে হয়েছে ছাত্র ইউনিয়নের বন্ধুদের তাদের মধ্যে শহীদ তাজুল, শহীদ মঈন হোসেন রাজু, শহীদ সোমেন চন্দ্র, শহীদ শাহাদাৎ, মির্জাআবদুস সামাদ, শহীদ প্রোটন দাশগুপ্ত, শহীদ সঞ্জয় তলাপাত্র(১৯৯৮), শহীদ হাসেম(১৯৯৮), শহীদ সৈয়দ আমিনুল হুদা টিটু(১৯৮৭), শহীদ সুজন মোল্লা(১৯৯৮) আরো হাজারো ছাত্র ইউনিয়ন নেতা কর্মীকে।মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আলোচনা করতে গেলে তার প্রেক্ষাপট, ঐতিহাসিক বাস্তবতা সম্পর্কিত বিস্তারিত বিশ্লেষণ জরুরী।অনুধাবন করা প্রয়োজন, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস কেবল নয় মাসের যুদ্ধের ইতিহাস নয়। মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি রচনা করতে, মুক্তিযুদ্ধের ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে প্রকাশ্য, অপ্রকাশ্য নানামাত্রিক সংগ্রামের প্রয়োজন হয়েছে। শোষিত, বঞ্চিত এদেশের মানুষ সংগ্রাম করেছে নিজেদের অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক মুক্তির তাগিদে। মুক্তিযুদ্ধের ভ্রুণ সৃষ্টি হয়েছিল ব্রিটিশ শাসন-শোষণের বিরুদ্ধ প্রতিবাদ সূচনাকাল থেকে।শতাব্দীর অধিককাল ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে এবং দুই যুগ ধরে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সংগঠিত অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক সাংস্কৃতিক মুক্তির লড়াইয়ে সে ভ্রুণ বিকশিত হয়েছে, নয় মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে তা পেয়েছে পুর্ণাঙ্গ আকার-আকৃতি এবং ভূমিষ্ঠ হয়েছে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটি। মুক্তিসংগ্রামের ঐতিহাসিক পটভূমি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারাবাহিক বিকাশ সম্পর্কিত আলোচনায় অনিবার্যভাবেই এদেশের ক্রমশ গড়ে ওঠা বাম প্রগতিশীল শক্তির গৌরবময় ভূমিকা। , আত্মত্যাগ এবং নিরন্তর সংগ্রামের প্রসঙ্গ এসে পড়ে।এদেশের বাম প্রগতিশীল শক্তির নেতৃত্ব কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র, মেহনতী মানুষ, প্রগতিশীল মধ্যবিত্তের ধারাবাহিক রাজনৈতিক সামাজিক, সাংস্কৃতিক আন্দোলনের ইতিহাসকে বাদ দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস রচনা করা সম্ভব নয়।মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি সৃষ্টিতে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতিপর্বে এবং মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন অগ্রগামী ভূমিকা রেখেছে। মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনাকে উপলব্ধিতে এনে, দেশকে মুক্তিযুদ্ধের ধারায় পরিচালিত করতে গেলে মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নসহ এদেশের বামপস্থী সকল ছাত্র সংগঠনের বদানের ইতিহাসকে সামনে তুলে আনার কোন বিকল্প নেই।দেশের শিক্ষা ও শিক্ষাঙ্গন পরিস্থিতি যদি তুলে ধরতে হয়। তাহলে আমরা দেখি পাঠ্যপুস্তকে সাম্প্রায়িকীকরণ ও প্রগতিশীল লেখকদের লেখা বিয়োজন করা হয়েছে চলমান শিক্ষা ব্যবস্থায়, ২০১৬-শিক্ষা আইন করে কোটি শিক্ষার্থীর সাথে চলছে শিক্ষার নামেপ্রহসন, শিক্ষায় বাণিজ্যিকীকরণ, শিশুর নিজের ওজনের ১০% এর বেশি ভারি ব্যাগ বহন করা নিষিদ্ধ থাকলেও সেটি আজও বাস্তবায়ন হয়নি, প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে চলছে রমরমা ব্যবসা, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় থেকে শুরু করে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চলছে জালিয়াতি।দু’দশকেরও বেশি সময় ধরে বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন বন্ধ। সমগ্র দেশে চলছে সন্ত্রাস ও দখলদারিত্ব, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে অনিয়মে ভরপুর। ইতোপূর্বে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও আগুনের কবলথেকে রেহায় পায়নি। পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নে চলছে নৈরাজ্য।ছাত্র ইউনিয়ন দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে বিজ্ঞান ভিত্তিক ও গণমূখী শিক্ষার দাবিদে প্রনয়ন করেছে শিক্ষা প্রস্তাব। অবিলম্বে ছাত্র ইউনিয়ন প্রস্তাবিত সার্বজনীন, গণমূখী বিজ্ঞান ভিত্তিক শিক্ষানীতি প্রণয়ণে দাবি রয়েছে। বাজেটে শিক্ষা খাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে জাতীয় আয়ের ৮ভাগ বরাদ্দ দিতে হবে। ছাত্র সমাজের ১০ দফা বাস্তবায়ন করতে হবে। অবিলম্বে ডাকসু সহ সকল ছাত্র সংসদ নির্বাচন দিয়ে ছাত্রদের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে ইত্যাদি। শিক্ষার সকল স্তরে বাংলা ভাষা চালুকরতে হবে, সকল জাতিসত্ত্বার জন্য মাতৃভাষার শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে ইত্যাদি।কিন্তু একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার পর ৪৫ বছর অতিবাহিত হলেও আমার শিক্ষার সেই উদ্দেশ্য অর্জনে রাষ্ট্রকে ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে দেখিনি। এত বাধা বিপত্তির মধ্যেও ছাত্র ইউনিয়ন তারঁ আন্দোলন সংগ্রাম অব্যহত রেখেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়ের উন্নয়ন ফি বিরোধী আন্দোলনে, জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবাসন সংকট নিরসনের আন্দোলনের মাধ্যমে, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অতিরিক্ত ভর্তি ফি-বিরোধী আন্দোলন ও শিক্ষা বাচাঁও ও অন্যান্ন আন্দোলনের মাধ্যমে। সেই সকল চেতনাকে সাথে নিয়ে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন এই সকল শিক্ষার ধ্বংসের সকল প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবে এদেশের সচেতন ছাত্র সমাজকে সাথে নিয়ে।জাতীয়ভাবে আমারা একটি ক্রান্তিকালীন সময়ের মধ্যে অতিক্রম করছি। পঁচাত্তর পরবর্তীশাসকদের নীতি-দর্শনে রয়েছে প্রশ্নবৃদ্ধ, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন করেছে একটি সুনিদৃষ্ঠ রাজনৈকিত প্রস্তাব যা আজো বাস্তবায়ন হয়নি।জাতীয় সম্পদ রক্ষায় ছাত্র ইউনিয়ন প্রতিনিয়ত আন্দোলন করছে, এদিকে সুন্দরবন রক্ষা ও রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বতিলের দাবিদে ও আন্দোলন চলমান।যুদ্ধাপরাধীদের বিচার থেকে শুরুকরে মুক্তিযুদ্ধো ও স্বাধীনতা বিরোধী দল জামায়াত ইসলামীর রাজনীতি নিষিদ্ধকরণের দাবি। দেশে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন গুলোর মধ্যে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ(জাসদ), সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট ও আরো অন্যান্য ছাত্র সংগঠন থাকলেও দেশের সংকটময় মূহুর্থে দেশ ও জাতির কাছে এখনো প্রশ্নবৃদ্ধ। সেই অবস্থান থেকে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন দেশের বিভিন্ন জাতীয় ইসুতে তার আন্দোলন সংগ্রাম এগিয়ে নিয়ে চলছে অবিরাম।আগামীদিন গুলোতে ছাত্র ইউনিয়ন এখনো স্বপ্নদেখে একটি লাল টুকটুক সূর্য উঠে আমাদেরদেশটাকে রাঙ্গাবে। বাসযোগ্য করে তোলবে আমাদের এই সমাজ, দেশ ও পৃথিবী। যেখানে অশুভশক্তির আগমন সেই খানেই বিপরিতে ছাত্র ইউনিয়নের অবস্থান অটুট থাকবে। শুভ শক্তি ও প্রগতির মিছিল রাঙ্গাবে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন। তবেই আমরা আমাদের পূর্বসূরীদের আত্মত্যাগের প্রতি যথোপযুক্ত সম্মান প্রদর্শনে সক্ষম হব, এদেশের মেহনতি মানুষের বক্ত আর ঘামের যথার্থ প্রতিদান দিতে সক্ষম হব।সবশেষে এই আশাবাদ ব্যক্ত করেই সমাপ্তি টানছি-“আমাদের সব আমাদের হবে, একদিন এক দ্রোহ বিপ্লবে”।