আমরা সময়ের কথা সময়ে বলি।

Advertisement

বিলুপ্ত টেলিগ্রামের এক টুকরো স্মৃতি!

নাছিরনগর, বিশেষ প্রতিবেদন, মুক্তমত 14 July 2020 ৭৭৯
নাসিরনগর।।
 নাই টেলিফোন নাইরে পিয়ন নাইরে টেলিগ্রাম বন্ধুর কাছে মনের খবর কেমনে পৌঁছাইতাম’- এই গানটি যারা শুনেছেন তাঁদের কাছেও টেলিগ্রাম একটি কৌতূহলের নাম। এখন টেলিগ্রাম! কেউ কেউ হয়তো এই প্রথম শুনে থাকবেন শব্দটা। নতুন প্রজন্মের কাছে আশ্চর্যের বিষয়ও হতে পারে। সেই টেলিগ্রামই ছিল কি-না এক সময়ের বার্তা বহনের প্রধান মাধ্যম। একটি টেলিগ্রামের জন্য সে কি দিনের পর দিন অপেক্ষা। ভালো-মন্দর দু’টি খবরই আদান প্রদান হতো টেলিগ্রামের মাধ্যমে। তবে মৃত্যু, স্বজনের অসুস্থতাসহ অন্যান্য দুঃসংবাদই কম কথায় পৌঁছানো হতো এ প্রান্ত থেকে ওই প্রান্তে। বিলুপ্ত ওই টেলিগ্রামের এক টুকরো স্মৃতি খোঁজে পাওয়া গেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের গুনিয়াউক ১০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে। সেখানে দায়িত্বরত চিকিৎসক মেশকাত আরা ফেরদৌস ৫২ বছরের পুরোনো একটি টেলিগ্রাম পেয়েছেন। ওই টেলিগ্রামে ইংরেজিতে লেখা আছে, ‘ওয়াইফ সিরিয়াস কাম সোন।’ কাজী আসাদুল্লাহ, গ্রাম-গুনিয়াউক পোস্ট-গুনিয়াউক নামে ওই টেলিগ্রামটি আসে। এতে প্রেরকের নাম ফয়েজ মোহাম্মদ। টেলিগ্রামের ওপরের দিকে লেখা পাকিস্তান টেলিগ্রাফ এন্ড টেলিফোন ডিপার্টমেন্ট।
চিকিৎসক মেশকাত আরা ফেরদৌস সোমবার  জানান, ধারণা করা হচ্ছে এ হাসপাতালে কর্মরত কারো নামে এ চিঠি এসেছে। ১৯৬৮ সালের কাগজপত্র যে ফাইলে আছে সেগুলোতে তিনি গত ৭ জুলাই টেলিগ্রামটা খোঁজে পান। তিনি বলেন, ‘এ ধরনের একটি পুরোনো ঐতিহ্য হাতে পেয়ে আপ্লুত হয়ে যাই। প্রথমবারের মতো টেলিগ্রামের কোনো একটা তথ্য সরাসরি দেখতে পেয়ে ভালো লাগে। পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও আমি এটি আপলোড দেই।’ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কবি ও লেখক জয়দুল হোসেন টেলিগ্রামের এ কপিটি সংরক্ষণের দাবি তুলেছেন। তিনি বলেন, ‘টেলিগ্রাম আমাদের ঐতিহ্য। আমাদের এ প্রজন্মকে জানাতে হারিয়ে যাওয়া এ টেলিগ্রামের কপিটি জাদুঘরে সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। এক সময় টেলিগ্রামই ছিল এক প্রান্ত থেকে অপরপ্রান্তে খবর পৌঁছানোর মাধ্যম।’বর্তমান যুগের এসএসএম’র আরেক রূপ ছিল টেলিগ্রাম। আবিষ্কারক দেশ ব্রিটেনে টেলিগ্রামের ব্যবহার বন্ধ করা হয়েছে ১৯৮২ সালে। পরবর্তীতে ২০০৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রে, ২০১৩ সালে ভারতে আনুষ্ঠানিকভাবে টেলিগ্রাম ব্যবহার বন্ধ করে দেওয়া হয়। বাংলাদেশে টেলিগ্রামের ব্যবহার আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ না করা হলেও এটি এখন একেবারেই বিলুপ্ত। বিভিন্ন সূত্র মতে, টেলিগ্রাম মূলত ‘তারবার্তা’ নামে পরিচিত ছিল। তারবার্তা পেয়ে সংক্ষেপে এক দুই লাইনে লিখে সেটা গ্রাহকের কাছে পৌঁছানো হতো। জরুরি খবর, মৃত্যুর সংবাদ বা গুরুত্বপূর্ণ ভালো খবরের জন্য ‘তার’ পাঠানোর এ সুবিধা চালু ছিল দীর্ঘদিন ধরেই। যুদ্ধক্ষেত্র থেকে তথ্য, কূটনৈতিক তৎপরতা পাঠানোর জন্যও এটা গ্রাহক সমাদর পায়। দীর্ঘ সময়জুড়ে হাতেলেখা চিঠি ও মানি অর্ডারের মতোই সামাজিক জীবনের শরিক থাকে টেলিগ্রাম। টেলিগ্রাম আবিষ্কার হয় ১৮৩০-এর দশকে। যন্ত্রটির প্রাথমিক সংস্করণ তৈরি করেন ব্রিটিশ নাগরিক ব্যারন শিলিং ভন। তবে আবিষ্কারক হিসেবে বিশ্ব চেনে মার্কিন বিজ্ঞানী স্যামুয়েল মোর্সকে। তিনিই ১৮৩৭ সালে পূর্ণাঙ্গ টেলিগ্রাম আবিষ্কার করেন। এর কয়েক বছর পর ১৮৪৪ সালে পরীক্ষামূলকভাবে টেলিগ্রাম পাঠান যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রীম কোর্ট ওয়াশিংটন থেকে বাল্টিমোরে। এরও দুই বছর পর ১৮৪৬ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম লাইন চালু হয় বেলজিয়ামে।