আমরা সময়ের কথা সময়ে বলি।

Advertisement

সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের প্রতিবাদে হিন্দু মহাজোটের মানববন্ধন

সারাদেশ 18 July 2020 ৮৮৭

ঢাকা।।

গত মঙ্গলবার ১৪ জুলাই রাত আনুমানিক পৌনে ১২টার দিকে ঢাকার দোহার উপজেলার পূর্ব লটাখোলা এলাকায় তপন কর্মকার (৪৫) নামে এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে দুর্বৃত্তরা তার বাড়িতে এসে কুপিয়ে হত্যা করে এবং যাবার সময় নিহত ব্যবসায়ীর বড় ভাই কৃষ্ণ কর্মকারের স্ত্রীকেও তুলে নিয়ে যায়। অবশ্য পরদিন বুধবার ১৫ জুলাই ২০২০ইং সকালে বাড়ির পাশের একটি ডোবা থেকে ওই গৃহবধূকে উদ্ধার করা হয়। নিহত তপন কর্মকার উপজেলার পূর্ব লটাখোলা গ্রামের মৃত গোপাল কর্মকারের ছেলে। বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট এই ধরনের মর্মান্তিক হত্যা কান্ডের তীব্র প্রতিবাদ করছে এবং আজ অত্যন্ত সংক্ষুদ্ধ মন নিয়ে বাংলাদেশ জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনের রাস্তায় মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভায় আমরা সমবেত হয়েছি।
১৯৭১ সালে রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটেছিল সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার নিয়ে। আমাদের সংবিধানেও ধর্মনিরপেক্ষতাকে রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক নীতি হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু গত ৪৯ বছরের ইতিহাসে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ, সে হোক ধর্মীয় কিংবা নৃতাত্ত্বিক; ক্রমাগত হয়রানি, হুমকি ও নির্যাতনের শিকার হয়ে আসছে। রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয়ে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যায়, সেটি আমরা বিএনপি ও জাতীয় পার্টির আমলে দেখেছি। আবার সংখ্যালঘুদের সম্পত্তি দখলের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামীর লোকজন—কেউ পিছিয়ে নেই। অর্পিত সম্পত্তি ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়া ঝুলে থাকে আইনের মারপ্যাঁচে। ‘সংখ্যালঘু বান্ধব’ আওয়ামী লীগ ২০০৯ সাল থেকে একনাগাড়ে প্রায় সাড়ে ১১ বছর ক্ষমতায় আছে। এই সময়েও যে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন-হয়রানি বন্ধ হয়নি, তার প্রমাণ রামু, নাসিরনগর, গোবিন্দগঞ্জ, সাঁথিয়া, দিনাজপুর মত বড় বড় ঘটনাগুলি যেমন ঘটেছে, তেমনি গত মঙ্গলবার (১৪ জুলাই, ২০২০) তপন কর্মকারের হত্যাকান্ডের মত ঘটনা অহরহ ঘটছে। প্রায় প্রতিদিনই পত্রিকায় এধরনের সহিংস ঘটনার খবর আমরা পাচ্ছি। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে মানুষের জীবনযাত্রা যেখানে স্থবির, সেসময়েও হিন্দু নির্যাতন, খুন ধর্ষন, তুলে নিয়ে যাওয়া থেকে থাকেনি। গত ৪ মাসের বেশি সময় ধরে দেশে অঘোষিত লকডাউন চলছিল। সর্বস্তরের মানুষ উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় ছিল এবং এখনো আছে। অথচ একশ্রেণির দুর্বৃত্ত এই সংকটকালকেই বেছে নিয়েছে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার সুযোগ হিসেবে। সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন-হয়রানির ক্ষেত্রে সন্ত্রাসীরা সেই পুরোনো অপকৌশলেরই আশ্রয় নিয়েছে। তাঁদের বাড়িঘরে হামলা, জবরদখল, মন্দিরে হামলা ও ভাঙচুর, মেয়েদের অপহরণ ও জোরপূর্বক বিয়ের ঘটনা চলে আসছে বহু বছর ধরেই। এসব আক্রমণকারীরা প্রভাবশালীদের ছত্র ছায়া। মূলতঃ ধর্মীয় পরিচয়ে ভিত্তিতে চিহ্নিত করে হিন্দুদের উপর এধরনের খুন অপহরণ, নির্যাতন, দখল ও উচ্ছেদ হচ্ছে। আমরা এ পরিস্থিতি থেকে আমরা মুক্তি চাই। ইতোপূর্বে আমরা বহু প্রতিবাদ মিছিল, মানববন্ধন, স্মারকলিপি দিয়ে এবিষয়ে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষনের চেষ্টা করেছি। বিএনপির আমলে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার পর মন্ত্রীরা গণমাধ্যমের খবরকে ‘অতিরঞ্জিত’ বলে দায় এড়ানোর চেষ্টা করা হতো। আর এখন আওয়ামী লীগ গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। আওয়ামী সরকাররামু ও নাসিরনগরে পুড়ে যাওয়া ঘরবাড়ি ও মন্দির নির্মাণ করে দিয়েছে। হিন্দু নির্যাতন, খুন অপহরণ, জমি দখল এসব চিহ্নিত অপরাধ দমনে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহন করছে না।যেখানে আইনের শাসন সুপ্রতিষ্ঠিত নয়, সেখানে সংখ্যালঘু-সংখ্যাগুরু নির্বিশেষে অন্যায়ের প্রতিকার পায় না। ক্ষমতাসীনদের বুঝতে হবে, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা কিংবা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কথাটি সকাল-বিকেল মুখে আওড়ালেই হয় না, অপরাধীদের শাস্তি দিয়ে সেটি কাজেও প্রমাণ করতে হবে। দু-একটি স্থানে সংখ্যালঘুদের ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘর বা মন্দির পুনর্নির্মাণ করলেও তারা নিরাপদ বোধ করবে না যতক্ষণ না অপরাধের বিচার হয়।বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট ঢাকার দোহার উপজেলার তপন কর্মকার (৪৫) হত্যার তীব্র নিন্দা করছে এবং একই সাথে আসামীদের দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দাবী করছে। যদি আসামীদের দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা না হয়, তবে আমরা এর বিরুদ্ধে সারাদেশে প্রতিবাদ বিক্ষোবের ডাক দেবো।বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সম্মানিত সভাপতি ডঃ সোনালী দাসের নেতৃত্বে আজকের এই প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। আজকের সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন- কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সম্মানিত সাধারণ সম্পাদক ডাঃ মৃত্যুঞ্জয় কুমার রায়; হিন্দু মহাজোটের সিনিয়র সহসভাপতি লায়ন বিমল কৃষ্ণ শীল; তপন হাওলাদার; সিনিয়র সাধারণ সম্পাদক উত্তম কুমার দাস; তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অরুন চন্দ্র মজুমদার; আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক রিপন দে; সহ আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক বিজন সানা; প্রচার সম্পাদক গৌতম হালদার প্রান্ত; সমন্বয়কারী – এডভোকেট তারক চন্দ্র রায়; যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তাপস কুমার বিশ্বাস; শরিয়তপুর জেলা হিন্দু মহাজোট সমন্বয়ক ও কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডাঃ হেমন্ত দাস; যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডাঃ কথক দাস; মিঠু রঞ্জন দেব, সঞ্জয় ফলিয়া; যুব বিষয়ক সম্পাদক সমীকরণ বড়াল প্রমুখ।